অবরোহী ও আরোহী যুক্তির মধ্যে পার্থক্য

অবরোহী যুক্তি (Deductive Argument)
যদিও প্রত্যেক যুক্তির ক্ষেত্রে এ কথাটি প্রযোজ্য যে, আশ্রয়বাক্যসমূহ তার সিদ্ধান্তের সত্যতার পক্ষে কিছু ভিত্তি প্রদান করে। তথাপি বলা যায় কেবল অবরোহী যুক্তিই দাবি করতে পারে যে, তার আশ্রয়বাক্যসমূহ সিদ্ধান্তমুলক ভিত্তি প্রমাণ করে। অর্থাৎ কেবল অবরোহী যুক্তিই দাবি করতে পারে যে, তার আশ্রয়বাক্যসমূহ যথাযথ ও সন্দেহাতীতভাবে সিদ্ধান্তের সত্যতা প্রকাশ করে। সেজন্য অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে ‘ঠিক’ ও ‘বেঠিক’ কথা বা পরিভাষা দুটির পরিবর্তে যথাক্রমে বৈধ ও অবৈধ কথা দুটি ব্যবহার করা হয়।

যদি কোন অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্যের সত্যতা নিশ্চিতভাবে সিদ্ধান্তের সত্যতার ভিত্তি প্রদান করে তাহলে ঐ অবরোহী যুক্তিকে ‘বৈধ’ বলা হয়। অর্থাৎ বৈধ যুক্তির ক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত এমনভাবে সম্পর্কি থাকে যে, তার আশ্রয়বাক্য সমূহের পক্ষে সত্য হওয়া একেবারেই অসম্ভব যতক্ষণ না তার সিদ্ধান্তও সত্য হয়। বৈধ অবরোহী যুক্তি বা অনুমানে এমনটি কখনই হতে পারে না যে তার আশ্রয়বাক্য সত্য অথচ সিদ্ধান্তটি মিথ্যা। উদাহরণ-

সকল জীব হয় মরণশীল। (সার্বিক সত্য বা তথ্য)
সকল মানুষ হয় জীব। (সার্বিক সত্য বা তথ্য)
অতএব, সকল মানুষ হয় মরণশীল। (সার্বিক সত্য বা তথ্য )

আরোহী যুক্তি (Inductive Argument)
আরোহী যুক্তি হলো আশ্রয়বাক্যসমূহ সন্দেহাতীতভাবে তার সিদ্ধান্তের সত্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে না ঠিকই, তবে তা সিদ্ধান্তের সত্যতার পক্ষে কিছুটা হলেও সমর্থন যোগায়। আর এ কারণে আমরা অবরোহী যুক্তির বেলায় যে অর্থে বৈধ বা অবৈধ পরিভাষা দুটি ব্যবহার করি সেই অর্থে আরোহী যুক্তিতে বৈধ বা অবৈধ বলতে পারি না। তবে আরোহী যুক্তির আশ্রয়বাক্যসমূহ তার সিদ্ধান্তের পক্ষে কতটা জোরালো সমর্থন যোগায় তার ভিত্তিতে আমরা আরোহী যুক্তিকে ভাল বা মন্দ অথবা অধিক সম্ভাব্য বা কম সম্ভাব্য হিসেবে মূল্যায়ন করতে পারি। উদাহরণ-

সকল মানুষ হয় স্তন্যপায়ী এবং তাদের ফুসফুস আছে। (সার্বিক বচন)
সকল গরু হয় স্তন্যপায়ী এবং তাদের ফুসফুস আছে। (সার্বিক বচন)
সকল ঘোড়া হয় স্তন্যপায়ী এবং তাদের ফুসফুস আছে। (সার্বিক বচন)
অতএব, সম্ভবত সকল স্তন্যপায়ী জীবের ফুসফুস আছে। (সার্বিক বচন)

অবরোহী ও আরোহী যুক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ
প্রচলিত যুক্তিবিদ্যায় সচরাচর আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের পারস্পারিক ব্যাপকতার ভিত্তিতে অবরোহী ও আরোহী যুক্তি বা অনুমানের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা হয়। তা নিম্নরূপ-

১। আশ্রয়বাক্যসমূহ তার সিদ্ধান্তের সত্যতার পক্ষে কিছু ভিত্তি প্রদান করে থাকে তাকে অবরোহী যুক্তি (Deductive Argument) বলে। অন্যদিকে,

২। অবরোহী যুক্তিতে আমরা সার্বিক সত্য বা তথ্য থেকে বিশেষ সত্য বা তথ্যে উপনীত হই। অন্যদিকে, আরোহী যুক্তিতে আমরা বিশেষ সত্য বা তথ্য থেকে সার্বিক সত্য বা তথ্যে উপনীত হই।

৩। অনেক বৈধ অবরোহী যুক্তি বা অনুমান আছে যার আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তসবই সার্বিক সত্য তথা সার্বিক বচন। উদাহরণস্বরূপ-

সকল জীব হয় মরণশীল। (সার্বিক সত্য বা তথ্য)
সকল মানুষ হয় জীব। (সার্বিক সত্য বা তথ্য)
অতএব, সকল মানুষ হয় মরণশীল। (সার্বিক সত্য বা তথ্য )

অন্যদিকে, অনেক সঠিক আরোহী যুক্তি বা অনুমান আছে যার আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তসবই সার্বিক বচন। উদাহরণস্বরূপ-

সকল মানুষ হয় স্তন্যপায়ী এবং তাদের ফুসফুস আছে। (সার্বিক বচন)
সকল গরু হয় স্তন্যপায়ী এবং তাদের ফুসফুস আছে। (সার্বিক বচন)
সকল ঘোড়া হয় স্তন্যপায়ী এবং তাদের ফুসফুস আছে। (সার্বিক বচন)
অতএব, সম্ভবত সকল স্তন্যপায়ী জীবের ফুসফুস আছে। (সার্বিক বচন)

৪। অবরোহী যুক্তিতে সার্বিক সত্য থেকে বিশেষ সত্যে পৌঁছানো হয়। অন্যদিকে, আরোহী যুক্তিতে বিশেষ সত্য থেকে সার্বিক সত্যে পৌঁছানো হয় তাহলে সর্বদা একথা যথাযথ হবে না।

৫। বৈধ অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তআশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়। অন্যদিকে, আরোহী যুক্তিতে সিদ্ধান্তআশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় না, নিঃসৃত হয় সম্ভাবনামূলকভাবে।

৫। আরোহী যুক্তিতে সিদ্ধান্তের সত্যতা সর্বদাই সম্ভাবনামূলক। তবে এই সম্ভাবনার মাত্রা অধিক প্রাসঙ্গিক তথ্য সহযোগে বাড়ানো যায়। অন্যদিকে, অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে অধিক বা অতিরিক্ত তথ্যের সংযোজন বা বিয়োজনে সিদ্ধান্তের সত্যতায় কোন পরিবর্তন ঘটে না।