নারী-পুরুষের ডিপ্রেশনের মধ্যে পার্থক্য

অবসাদ, বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন, শব্দগুলোর সঙ্গে কমবেশি পরিচিতি আছে সবারই। তবে সমস্যাটা তখনই দেখা দেয় যখন মানবিক অনুভূতি কিংবা মানসিক সুস্থতাকে জেন্ডারের ভিত্তিতে বিচার করা হয়। অনেক সময় নির্দিষ্ট কোনো জেন্ডারকে অনেকটা জোর করেই মানসিক সুস্থতা-অসুস্থতার ঊর্ধ্বে ভাবা হয়। অথচ সত্যটা এর ঠিক উল্টো বলেই প্রমাণ হয়েছে গবেষণায়।

নারী-পুরুষের ডিপ্রেশনের মধ্যে পার্থক্যঃ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনের হার পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ। অন্তত ডায়াগনোসিস বা রোগনির্ণয়ের ভিত্তিতে এরকমই দেখা গেছে। নারী-পুরুষের ডিপ্রেশনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১. নারী ‘ডিপ্রেশন’ বললেই আমাদের মাথায় যেসব দৃশ্য আসে তা হয়ত বিছানা আঁকড়ে পড়ে থাকা, কোনো কাজে মন না বসা, একাকী থাকা, কান্নাকাটি ইত্যাদি। অন্যদিকে, পুরুষের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন একটু আলাদাভাবে দেখা দেয়। পুরুষরা রাগ করে।

২. হাওয়ার্ড কান্ট্রি জেনারেল হসপিটালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু অ্যাঞ্জেলিনো বলেছেন, ‘নারীরা সাধারণত ডিপ্রেশনে কাঁদে। অন্যদিকে পুরুষরা রাগ করে। কেননা আমরা আমাদের ছেলেদের শিখিয়েছি, কান্না করা যাবে না। তাই কাঁদার বদলে তারা রেগে যায়। রাগ প্রকাশে তারা বিভিন্ন আক্রমণাত্মক পদ্ধতিও প্রয়োগ করে।’

৩. বয়ঃসন্ধিকালে ডিপ্রেশন গ্রাস করলে মেয়েরা অনেক সময় নিজের চেহারা নিয়ে অতি সচেতন হয়ে পড়ে। অনেকে নিজেকে ব্যর্থ মনে করে, কোনো কাজে মন দিতে পারে এবং মন খারাপ করে রাখে। অন্যদিকে, ডিপ্রেশনে ভোগা কমবয়সী ছেলেরা নিজেদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং ক্লান্ত অনুভব করে।

৪. বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীরা সাধারণত মানসিক চাপ, দুঃখবোধ এবং নিদ্রাজনিত সমস্যায় অপেক্ষাকৃত বেশি অভ্যস্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে, পুরুষের মধ্যে জন্ম নেয় অধিকতর খিটখিটে ভাব ও বদমেজাজি প্রবণতা।

৫. সামাজিকভাবেই যেহেতু নারীকে অপেক্ষাকৃত ‘দুর্বল’ তকমা দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা অপেক্ষাকৃত কম কুণ্ঠাবোধ করেন। অন্যদিকে, আরোপিত পৌরুষ টিকিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতা থেকে পুরুষদের অন্যের সহযোগিতা চাওয়ার উদাহরণ কিছুটা কম।

৬. যেকোনো সমস্যার সমাধানে পৌঁছানোর প্রথম ধাপ হলো, সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সেটি স্বীকার করে নেয়া। এই প্রাথমিক ধাপেই পিছিয়ে পড়ার কারণে পুরুষের ডিপ্রেশন অতটা আলোচিত হয় না, যতটা নারীদের ক্ষেত্রে হয়।

৭. পরিসংখ্যান যখন দেখাচ্ছে যে পুরুষদের ডিপ্রেশনের হার কম, অন্যদিকে আত্মহত্যার চিত্রটা কিন্তু ভিন্ন। আত্মহত্যা চেষ্টার দিক দিয়ে নারীর সংখ্যা বেশি হলেও, আত্মহত্যা করার ক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যা বেশি।

তথ্যসূত্র– https://bangla.thedailystar.net/life-living/news-499726