মরু ও আর্দ্র অঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য

মরু অঞ্চল (Desert Region) :
মরু অঞ্চল হলো পৃথিবীর এমন অঞ্চল যেখানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়, সাধারণত বছরে 250 মিলিমিটার বা তারও কম। মরুভূমিগুলি সাধারণত উচ্চ উচ্চতায়, শুষ্ক বায়ুমণ্ডলে, এবং জলভাগ থেকে দূরে অবস্থিত। এই কারণগুলি মরুভূমির বৈশিষ্ট্যগুলিকে প্রভাবিত করে। এই অঞ্চলের জলবায়ু খুবই শুষ্ক এবং উষ্ণ। দিনের বেলায় তাপমাত্রা 50 ডিগ্রি সেলসিয়াস (122 ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা তারও বেশি হতে পারে। রাতের বেলায় তাপমাত্রা 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস (32 ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা তারও কম হতে পারে। মরু অঞ্চলে উদ্ভিদের সংখ্যা খুব কম। যে উদ্ভিদগুলি বেঁচে থাকে সেগুলি সাধারণত কাঁটাযুক্ত বা পাতলা পাতাযুক্ত হয় যা জল সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।

এই অঞ্চলের প্রাণীর সংখ্যাও খুব কম। যে প্রাণীগুলি বেঁচে থাকে সেগুলি সাধারণত রাতে সক্রিয় হয় বা মরুভূমির চরম তাপমাত্রা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য উপায় খুঁজে পায়। মরুভূমিগুলি পৃথিবীর মোট ভূপৃষ্ঠের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে। তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়, যেমন উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা।

মরু অঞ্চল গুলির অনেকগুলি ব্যবহার রয়েছে। তারা খনিজ সম্পদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যেমন তেল, গ্যাস, এবং খনিজ। তারা পর্যটনের জন্যও একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। মরুভূমিগুলির উদ্ভিদ এবং প্রাণীগুলিও গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ভূমিকা পালন করে।

আর্দ্র অঞ্চলে (Humid Region) :
আর্দ্র অঞ্চল হলো পৃথিবীর এমন অঞ্চল যেখানে বৃষ্টিপাত প্রচুর হয়, সাধারণত বছরে 250 মিলিমিটার বা তারও বেশি। আর্দ্র অঞ্চলগুলি সাধারণত নিম্ন উচ্চতায়, আর্দ্র বায়ুমণ্ডলে, এবং জলভাগের কাছাকাছি অবস্থিত। এই কারণগুলি আর্দ্র অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যগুলিকে প্রভাবিত করে। আর্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু সাধারণত উষ্ণ এবং আর্দ্র। দিনের বেলায় তাপমাত্রা 30 ডিগ্রি সেলসিয়াস (86 ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা তারও বেশি হতে পারে। রাতের বেলায় তাপমাত্রা 15 ডিগ্রি সেলসিয়াস (59 ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা তারও কম হতে পারে। এই আর্দ্র অঞ্চলে উদ্ভিদের সংখ্যা প্রচুর। বিভিন্ন ধরনের গাছপালা এখানে জন্মায়, যেমন বন, ঘাস, এবং ফুল।

আর্দ্র অঞ্চলে প্রাণীর সংখ্যাও প্রচুর। বিভিন্ন ধরনের প্রাণী এখানে বাস করে, যেমন বন্যপ্রাণী, পোকামাকড়, এবং মাছ। আর্দ্র অঞ্চলগুলি পৃথিবীর মোট ভূপৃষ্ঠের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে। তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়, যেমন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, এবং আফ্রিকা। আর্দ্র অঞ্চলগুলির অনেকগুলি ব্যবহার রয়েছে। তারা কৃষি এবং শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তারা পর্যটনের জন্যও একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। আর্দ্র অঞ্চলের উদ্ভিদ এবং প্রাণীগুলিও গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ভূমিকা পালন করে।

মরু ও আর্দ্র অঞ্চলের মধ্যে পার্থক্যঃ
মরু অঞ্চল ও আর্দ্র অঞ্চলের মধ্যে পার্থক্যের কারণ হলো ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা, বায়ুমণ্ডলের অবস্থা, জলভাগের অবস্থান, ইত্যাদি। মরু অঞ্চল ও আর্দ্র অঞ্চলের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নিম্নরূপ-

১. মরু অঞ্চল হলো পৃথিবীর এমন অঞ্চল যেখানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়, সাধারণত বছরে 250 মিলিমিটার বা তারও কম। অন্যদিকে, আর্দ্র অঞ্চল হলো পৃথিবীর এমন অঞ্চল যেখানে বৃষ্টিপাত প্রচুর হয়, সাধারণত বছরে 250 মিলিমিটার বা তারও বেশি।

২. মরু অঞ্চল সাধারণত উচ্চ উচ্চতায়, শুষ্ক বায়ুমণ্ডলে, এবং জলভাগ থেকে দূরে অবস্থিত। এসব কারণে সেখানে বৃষ্টিপাত কম হয়। অন্যদিকে, আর্দ্র অঞ্চল সাধারণত নিম্ন উচ্চতায়, আর্দ্র বায়ুমণ্ডলে, এবং জলভাগের কাছাকাছি অবস্থিত। এসব কারণে সেখানে বৃষ্টিপাত বেশি হয়।

৩. মরু অঞ্চলের তাপমাত্রা দিনের বেলায় খুব গরম, রাতের বেলায় খুব ঠান্ডা। অন্যদিকে, আর্দ্র অঞ্চলে দিনের বেলায় গরম, রাতের বেলায় হালকা ঠান্ডা

৪. মরু অঞ্চলের বায়ুর আর্দ্রতা খুব কম। অন্যদিকে, আর্দ্র অঞ্চলে বেশি

৫. মরু অঞ্চলের উদ্ভিদ খুব কম, সাধারণত কাঁটাযুক্ত গাছপালা বা মরুভূমির ঘাস। অন্যদিকে, আর্দ্র অঞ্চলে প্রচুর, বিভিন্ন ধরনের গাছপালা

৬. মরু অঞ্চলের প্রাণী খুব কম, সাধারণত ছোট ছোট প্রাণী। অন্যদিকে, আর্দ্র অঞ্চলে প্রচুর, বিভিন্ন ধরনের প্রাণী

৭. মরু অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য কম থাকে। যেমন, ক্যাকটাস, তেঁতুল, ইত্যাদি। অন্যদিকে, আর্দ্র অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য বেশি থাকে। যেমন, গাছপালা, প্রাণী, ইত্যাদি।

৮. মরু অঞ্চলে বালি, পাথর, ইত্যাদির দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ দেখা যায়। যেমন, বালিয়াড়ি, পাথুরে টিলা, ইত্যাদি। অন্যদিকে, আর্দ্র অঞ্চলে মাটি, জলাভূমি, ইত্যাদির দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ দেখা যায়। যেমন, সমতল ভূমি, নদী, হ্রদ, ইত্যাদি।