ই-বাণিজ্য এবং এম-কমার্সের মধ্যে পার্থক্য

ই-কমার্স (E-commerce):
ই-কমার্সএকটি আধুনিক ব্যবসায় পদ্ধতি। E-Commerce এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে Electronic Commerce। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেনে সুবিধা ব্যবহার করাকে ই-কমার্স বলে। ইন্টারনেট কমার্সকে সংক্ষেপে ই-কমার্স বলা হয়। অনলাইনে পণ্য বেচাকেনা এর সহজ উদাহরণ। বস্তুত, যে কোনো ব্যবসায় ইলেক্ট্রনিক্সের মাধ্যমে পরিচালনা করাই হল ই-কমার্স।

বর্তমানে ব্যবসায়িক জগতে ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান যুগের ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য, সেবা ও তথ্য ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর বা বিনিময় কার্যকেই ই-কমার্স বলে। অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নিজেদের সাথে বা একে অপরের সাথে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করাকে ই-কমার্স বলা হয়। ইন্টারনেট ব্রাউজ করে ক্রেতাগণ ঘরে বসেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মান, মূল্য ইত্যাদি জানতে পারছে। আবার বিক্রেতাগণও তাদের পণ্যের বিপণন সারা বিশ্ব জুড়ে করতে পারছে। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছে।

এম-কমার্স (M-commerce) :
এম কমার্স বা মোবাইল কমার্স (Mobile-Commerce) হলো এমন একটি ব্যবসায়িক সিস্টেম যা তারবিহীন বা ওয়ারলেস (Wireless) পরিবেশে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ আধুনিকায়নের যুগে মোবাইল, ট্যাবলেট ইত্যাদি ডিভাইসের মাধ্যমে তারবিহীন প্রযুক্তির ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় সিস্টেমকেই এম-কমার্স বলে অভিহিত করা হয়।

মোবাইল কমার্সের ফলে বিভিন্ন মোবাইল ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী যেমন- ক্রেডিট সেবা, বিভিন্ন টিকেট, মেডিকেল রেকর্ড ইত্যাদি এবং অর্থ সংরক্ষিত করে রাখার জন্য ওয়ালেট (Wallet) ব্যবহার করছে যা ইলেকট্রনিক ফরমেটে সংরক্ষিত হয়। ফলে এম-কমার্সের ব্যবহারকারীরা বাটন ক্লিকের সাহায্যে মুহুর্তের মধ্যে বিভিন্ন ইনফরমেশন আপডেট করতে পারে এবং পরস্পরের সাথে শেয়ার করতে পারে। অর্থাৎ যথাসময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বা সেবা আদান-প্রদানের সুবিধা বাড়ছে। এম-কমার্স প্রধানত ব্যাংকিং, টিকেট ক্রয়, আবহাওয়া ও ভ্রমণ তথ্য প্রাপ্তি, বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য শেয়ার করা ও ই-মেইল ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে থাকে।

ই-বাণিজ্য এবং এম-কমার্সের মধ্যে পার্থক্যঃ

ই-বাণিজ্য এবং এম-কমার্স, দুটি বিশেষ ধরণের বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া যা অনলাইন মাধ্যমে সহায়ক হতে পারে, এই দুটি মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। তা নিম্নরূপ-

১. ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য, সেবা ও তথ্য ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর বা বিনিময় কার্যকেই ই-কমার্স বলে। অন্যদিকে, আধুনিকায়নের যুগে মোবাইল, ট্যাবলেট ইত্যাদি ডিভাইসের মাধ্যমে তারবিহীন প্রযুক্তির ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় সিস্টেমকেই এম-কমার্স বলে।

২. ই-কমার্স এম-কমার্সের চেয়ে পুরানো ধারণা।

৩. এম-কমার্সটি মূলত ই-কমার্সের আদলে তৈরি। সুতরাং এটি বলা যেতে পারে যে এম-কমার্স ই-কমার্সের একটি অঙ্গ।

৪. ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা মূলত অনলাইন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবসার সম্পর্কিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন, যেমন মডেল উদ্ধারণ, মডেল নির্দেশনা, ব্যবসায়িক যোগাযোগ, সরবরাহ শ্রেণীর নির্ধারণ ইত্যাদি।

অন্যদিকে, এম-কমার্সে, মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট এমন উপায়ে ডিজাইন করা হয়ে থাকে যাতে গ্রাহকরা মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে সহজে অর্ডার দিতে পারে এবং লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে।

৫. ই-কমার্স গ্রাহকরা সাধারণভাবে ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে পণ্য খুঁজে পেতে পারেন এবং অর্ডার দেওয়ার সহজ পদক্ষেপ নেতে পারেন। অন্যদিকে, এম-কমার্সে, গ্রাহকরা মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে পণ্য খুঁজে পেতে পারেন, মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সহজে অর্ডার করতে পারেন, মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারেন।

৬. ই-কমার্স, গ্রাহকরা সাধারণভাবে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, নেট ব্যাংকিং, ডিজিটাল মানি ট্রান্সফার ইত্যাদি ব্যবহার করে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারেন।
অন্যদিকে, এম-কমার্সে, গ্রাহকরা মোবাইল পেমেন্ট এপ্লিকেশন, ডিজিটাল ওয়ালেট, ব্যাংকিং এপ্লিকেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারেন।

৭. ই-কমার্স গ্রাহকরা অনলাইনে আপনার ক্রেডিট কার্ড এবং ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হতে পারে, যা সুরক্ষিত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, এম-কমার্সে, মোবাইল পেমেন্ট এপ্লিকেশন এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি গ্রাহকের গোপনীয়তা সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়।