মহীভাবক ও গিরিজনি আলোড়নের মধ্যে পার্থক্য

মহীভাবক আলোড়ন (Epeirogenic Movement):

মহীভাবক আলোড়ন উল্লম্বভাবে ক্রিয়াশীল। ফলে ভূ-পৃষ্ঠ খাড়াভাবে ওপর ও নিচে ওঠানামা করে। ব্যাপক আকারে মহাদেশজুড়ে সাধারণত এরূপ আলোড়ন হয় বলে একে মহীভাবক আলোড়ন বলে। মহীভাবক আলোড়নের ফলে বিশালায়তন, মালভূমি ও অন্যান্য মালভূমি, চ্যুতি, স্রস্ত উপত্যকা, স্তূপ পর্বত প্রভৃতি সৃষ্টি হয়। যেমন- পূর্ব আফ্রিকা ও জর্ডানের স্রস্ত উপত্যকাগুলো এবং রাইন নদীর স্রস্ত উপত্যকা ইত্যাদি গঠিত হয়েছে।

গিরিজনি আলোড়ন (Orogenic Movement):

এ ধরনের ভূ-আলোড়ন আনুভূমিকভাবে হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ উত্তাপের ফলে ভূগর্ভে সঞ্চিত বাষ্পের চাপে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের শিলাসমূহের ওপর চাপের বিভিন্নতার ফলে পার্শ্বদিকে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। ফলে আনুভূমিকভাবে অবস্থিত স্তরসমূহ উভয় দিক থেকে চাপের সম্মুখীন হয় এবং আস্তে আস্তে কিছু অংশ কুঁচকে যায়। কোনো স্থান উঁচু হয়ে ওঠে। আবার কোনো স্থান নিচের দিকে চলে যায়। পার্শ্বদিকে প্রবহমান এ প্রকার আলোড়নকে আনুভূমিক আলোড়ন বলে। এ আলোড়ন বিশালায়তনের ভঙ্গিল পবর্তের সৃষ্টি করে বলে একে গিরিজনি আলোড়ন বলে। যেমন এশিয়ার হিমালয়, ইউরোপের জুরা এবং আফ্রিকার আটলাস পর্বত।

মহীভাবক ও গিরিজনি আলোড়নের মধ্যে পার্থক্যঃ

মহীভাবক আলোড়ন উল্লম্বভাবে ক্রিয়াশীল। ফলে ভূ-পৃষ্ঠ খাড়াভাবে ওপর ও নিচে ওঠানামা করে। মহীভাবক ও গিরিজনি আলোড়নের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১। মহাদেশ জুড়ে এই আলোড়ন ঘটে এবং মহাদেশ গঠনে সাহায্য করে, তাই একে মহীভাবক আলোড়ন বলে। অন্যদিকে, এই আলোড়নে কেবল মাত্র ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়, তাই একে গিরিজনি আলোড়ন বলা হয়।

২। মহীভাবক আলোড়ন ভূ-পৃষ্টে কাজ করে উলম্ব ভাবে। অন্যদিকে, গিরিজনি আলোড়ন ভূ-পৃষ্টে কাজ করে অনুভূমিক ভাবে।

৩। মহীভাবক আলোড়নের প্রভাব সাধারণত স্থানীয় ভাবে ঘটে থাকে। অন্যদিকে, গিরিজনি আলোড়ন ব্যাপক আকারে বিশাল অঞ্চল জুড়ে হয়।

৪। মহীভাবক আলোড়নের সৃষ্ট ভূমিরূপ স্তুপ পর্বত, গ্রস্ত উপত্যকা। অন্যদিকে, গিরিজনি আলোড়নের মাধ্যমে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়।