ফ্লাইওভার ও এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে পার্থক্য

ফ্লাইওভার (Flyover) :
বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্লাইওভারটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলায় এটি “উড়ালসেতু”, “অধিসরণি”, বা “উড়ালপুল” নামে পরিচিত। ইংরেজিতে এটি “ফ্লাইওভার” (flyover), “ওভারব্রিজ” (overbridge), বা “ওভারপাস” (overpass) নামে পরিচিত। মূলত যুক্তরাজ্য ও বেশিরভাগ কমনওয়েলথভুক্ত দেশে উড়ালসেতুকে “ফ্লাইওভার” বা “ওভারব্রিজ” বলা হয়।

ফ্লাইওভার হচ্ছে এক প্রকার সেতু, সড়ক, রেলপথ বা এ ধরনের কোনো স্থাপনা, যা কোনো সড়ক বা রেললাইনের ওপর দিয়ে নির্মিত হয়। ফ্লাইওভার গাঠনিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নিম্ন ধারণক্ষমতাবিশিষ্ট সড়কের ওপর অপেক্ষাকৃত বেশি ধারণাক্ষমতাবিশিষ্ট রাস্তা তৈরি। ধারণক্ষমতা নির্ধারিত হয় রাস্তার লেনের সংখ্যা, যাতায়াতকৃত যানবাহনের পরিমাণ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে।

এক্সপ্রেসওয়ে (Expressway) :
এক্সপ্রেসওয়ে এক ধরণের হাইওয়ে। যার অবকাঠামো ফ্লাইওভারের মতই। ফ্লাইওভার শুধু নির্দিষ্ট একটি স্থানের ট্রাফিক ওভার করে। অপরদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বয়ে যায় একটা শহর বা অঞ্চলের ওপর দিয়ে। প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত বিশ্বমানসমৃদ্ধ মহাসড়ক এক্সপ্রেসওয়ে। সব মহাসড়কে বিরতিহীনভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হয় না। এর প্রধান কারণ, এসব মহাসড়কে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। আছে একের পর এক মোড়।

এমন নানা জটিলতায় মহাসড়ক বা হাইওয়েতে চলাচলকারী যানবাহন নির্দিষ্ট গতিতে চলতে পারে না। ফলে গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টি থাকে অনিশ্চিত। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতেই বিশেষ সুবিধাসহ যে হাইওয়ে নির্মিত হয় সেটি এক্সপ্রেসওয়ে। এতে প্রবেশের পথ একটি, বের হওয়ারও পথ একটি। হাইওয়ের তুলনায় এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করতে কম সময় লাগে। বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’।

ফ্লাইওভার ও এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে পার্থক্যঃ
ঢাকার ভেতরে কয়েকটি ফ্লাইওভার থাকলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এটাই প্রথম। দুটো ক্ষেত্রেই দ্বিতল সড়কের ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও এর মূল পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

কোনো সড়ক বা রেললাইনের ওপর দিয়ে যে সেতু নির্মিত হয় তা ফ্লাইওভার। এর দৈর্ঘ্য কম হয়। অন্যদিকে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হলো একটি শহর বা অঞ্চলের ওপর বয়ে যাওয়া দীর্ঘ উড়ালসড়ক। এর দৈর্ঘ্য অনেক বেশি হয়।

ফ্লাইওভার সড়ক বা রেলওয়ে সংযোগের পর্যায়ে উঠে যাওয়া বা দাঁড়িয়ে যাওয়া দরকার হলে নির্মিত হয়। এগুলি সড়কের ওপর অথবা রেলওয়ে লাইনের উপর নির্মিত হতে পারে। এই ধরনের ওভারপাস সড়ক বা রেলওয়ে ট্র্যাকের উপরে উঠে যায় এবং যারা উপরে থাকতে চান, তাদেরকে অথবা সড়কে দিয়ে অথবা সাইডে থেকে উঠতে দেয়।

এক্সপ্রেসওয়ে বাইপাস এবং গুড়িতে প্রয়োগ হয়, সড়ক ও রেলওয়ে জনপ্রয়োগ এবং লাভ বাড়ানোর জন্য নির্মিত হতে পারে। এই ওয়েতি ট্রান্সপোর্টেশনের সময় ও খরচ কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং ট্রাফিক সমস্যাগুলি সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে।

গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, মোটা দাগে এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে ফ্লাইওভারের তুলনায় এক্সপ্রেসওয়েতে র‍্যাম্পের সংখ্যা কম থাকে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এক্সপ্রেসওয়ে অনেকটা ছিদ্রহীন পাইপের মতো। একদিক থেকে উঠলে স্বম্প সময়ে অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটামুটি ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো র‍্যাম্প থাকে না। অর্থাৎ এ ধরনের সড়কে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই উচ্চগতিতে উল্লেখযোগ্য অংশ পার হয়ে যাওয়া যায়।

এক্সপ্রেসওয়েকে ফ্রিওয়ে বা সুপার হাইওয়ে নামেও ডাকা হয়। সড়কে কোনো মোড় থাকে না, ক্রস মুভমেন্ট, পার্কিং একটিভিটি বা পথচারী চলাচল না করার অর্থ হচ্ছে ভালো মানের রাস্তা।

অধ্যাপক শামসুল হক জানান, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অনেক র‍্যাম্প থাকার কারণে বাধাও বেশি পড়বে। ফলে এটি ফুল এক্সপ্রেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়ে হবে না।