জিডি ও এফআইআরের মধ্যে পার্থক্য

জিডি- জেনারেল ডায়রি বা সাধারণ ডায়রি ও এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) বা এজাহার নিয়ে অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। জিডি ও এজাহার এক বিষয় নয়। জিডি হচ্ছে কোনো বিষয় সম্পর্কে থানায় অবহিত করা। আর এজাহার হচ্ছে মামলা করার প্রথম পদক্ষেপ।

জিডি (GD):

জিডি (GD) অর্থ Generel Diary বা সাধারণ ডায়রি । কোন বিষয়ে জিডি করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে নির্দিষ্ট ঘটনাটি মৌখিক বা লিখিত আকারে কর্তব্য রত পুলিশ অফিসারকে জানাতে হবে। জিডি করার জন্য কোন টাকা বা ফি দিতে হয় না। থানায় গেলেই দায়িত্ব রত পুলিশ অফিসার জিডি লিপিবদ্ধ করে দেয়। কোন বিষয়ে জিডি করা হলে, পুলিশ সে ঘটনাটি তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তবে, জিডি করা মানে মামলা করা নয়। মামলা তখনই হয় যখন কোন অপরাধ ঘটে যায় বা সংঘটিত হয়। কিন্তু কোন অপরাধ বা বিপদ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে, কেও হুমকি দিয়েছে যার ফলে ভবিষ্যতে অপরাধ সঙ্ঘটিত হতে পারে এমন আশংকা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জিডি করতে পারে। অথবা, আইডি কার্ড হারিয়ে গিয়েছে , তা দিয়ে কেও অপরাধ সংঘটিত করে আপনাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে, হারানোর পর পর জিডি করলে জিডির কপিটি আপনাকে আইনি সহায়তা পেতে সাহায্য করবে। এছাড়া , জিডি করার ফলে অপরাধ সঙ্ঘটন কারী সতর্ক হয়ে যায়। সুতরাং, জিডি হল আইনি সাহায্য পাবার প্রথম পদক্ষেপ।

এফআইআর (FIR):

কোনো অপরাধ সম্পর্কে থানায় যে অভিযোগ দেওয়া হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর (FIR) (First Information Report) বলে। অপরাধ বা অপরাধমূলক কোন কিছু ঘটে যাবার পর সে বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য থানায় এজাহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এজাহারের মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়। রাষ্ট্র পক্ষের যে কোন মামলার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয় এজাহারের মাধ্যমে। অর্থাৎ, যে কোন মামলার প্রথম ধাপ হল এই এজাহার। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে বা তাঁর পরিবারের কেউ কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনার কথা শুনেছেন বা অবগত আছেন, তিনি থানায় এজাহার করতে পারবেন। ঘটনাটি যে থানার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সাধারণত ওই থানাতেই করা উচিত। এজাহারে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ, ঘটনার স্থান, সময়, কীভাবে ঘটনা ঘটল, তার বিবরণ স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। এজাহার কারীর পূর্ণ ঠিকানা ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেওয়া হয়, তাহলে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা লিখবেন এবং এজাহার কারীকে শোনাবেন। এজাহার কারীর স্বাক্ষর অবশ্যই দিতে হবে।

জিডি ও এফআইআরের মধ্যে পার্থক্যঃ

অপরাধমূলক কোনো কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য থানায় যে সংবাদ দেওয়া বা জানানো হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর বলে। প্রকৃতপক্ষে, এজাহারের মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়। অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি যখন নিজের জীবন কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তার অভাববোধ করেন সেক্ষেত্রে থানায় গিয়ে জিডি করা যায়। ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে আদালত এই জিডি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, চেকবই, লাইসেন্স, শিক্ষাসংক্রান্ত সনদ, দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলে জিডি করতে হয়।

অপরাধমূলক কোনো কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য থানায় যে সংবাদ দেওয়া বা জানানো হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর বলে। এজাহারের মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়। অর্থাৎ মামলার প্রথম ধাপ হলো এজাহার। এজাহার মৌখিক এবং লিখিত উভয়ই হতে পারে। মৌখিকভাবে এজাহার দেওয়া হলেও সেটি লেখার পর এজাহারকারীর স্বাক্ষর বা টিপ সই নিতে হবে। লেখার পর দায়িত্বরত কর্মকর্তা এজাহারকারীকে পড়ে শুনানোর পর নির্ধারিত ফরম অনুসারে রক্ষিত একটি বইতে লিপিবদ্ধ করবেন। এজাহারকে মূলত কোনো মৌলিক সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে এজাহারের যথেষ্ট মূল্য আছে।

জিডি প্রকৃতিগতভাবে এবং আইনগতভাবে দুই ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণ জিডি যা কোনো অপরাধের বিষয়বস্তু সংক্রান্ত হয়ে থাকে; আর বিশেষ জিডি যেটি সাধারণত আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে হয়ে থাকে। যেমন কোনো সনদ, দলিল, মোবাইল, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হারিয়ে গেলে করা হয়ে থাকে।

পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল ১৯৪৩ এর ৩৭৭ প্রবিধান এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ এবং ১৫৫ ধারায় জিডি তথা সাধারণ ডায়রির বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিরাপত্তার অভাববোধ করলে মূলত থানায় গিয়ে জিডির মাধ্যমে বিষয়টি থানাকে অবহিত করা হয়। আর এজাহারের ক্ষেত্রে পিআরবি বা পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল ১৯৪৩ এর ২৪৩ প্রবিধান এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহারের বিষয়বস্তু গুলো অনুসরণ করা হয়। এজাহার হলো জিআর মামলার মূলভিত্তি।