মােট জাতীয় উৎপাদন (GNP)ও মোট দেশীয় উৎপাদন (GDP ) এর মধ্যে পার্থক্য

GDP এর পূর্ণরূপ হল (Gross Domestic Product) বা মোট দেশজ উৎপাদন এবং GNP এর পূর্ণরূপ হল (Gross National Product) বা মোট জাতীয় উৎপাদন।
অর্থনীতির কঠিন ভাষায় না গায়ে আগে সহজ ভাষায় বিষয়টি বুঝা যাক। 
আপনাকে যদি বলা হয় এটি দেশী পণ্য তাহলে আপনি কোন ভাবেই ভাববেন না যে দ্রব্যটি দেশের সীমারেখার বাইরে তৈরি করা হয়েছে। ঠিক একই ভাবে দেশজ উৎপাদন হল দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবা। এবার আসুন একটু ভিন্ন ভাবে বুঝা যাক। জাতি গত ভাবে আমরা বাঙ্গালি বা বাংলাদেশী। আপনি বাংলাদেশে কোন চাকরিতে আবেদন ফরম পূরণ করছেন। সেখানে আপনি জাতীয়তা কি লিখবেন? অবশ্যই বাংলাদেশী। আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অনুরুপ একটি আবেদন ফরম পূরণ করেন তবে সেখানেও আপনাকে জাতীয়তা বাংলাদেশী লিখতে হবে।  আসুন এবার অর্থনীতিতে। অর্থনীতিতে জাতীয় উৎপাদন বলতে জন্মগতভাবে প্রাপ্ত জাতীয়তার ভিত্তিতে জনগন দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবাকে নির্দেশ করে। এখন আমরা মূল অর্থনীতিতে প্রবেশ করি এবং GDP ও GNP এর মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করি..

মোট দেশজ উৎপাদন(GDP)

একটি দেশের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাধারণত এক বছরে ভৌগলিক সীমানার মধ্যে দেশি বা বিদেশি নাগরিকদের দ্বারা উৎপাদিত সকল দ্রব্য ও সেবার মোট আর্থিক মূল্যকে মোট দেশজ উৎপাদন(GDP) বলে। জিডিপি শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পণ্য ও সেবার আর্থিক মূল্যমান। অর্থাৎ কেউ যদি বিদেশে কাজ করে অথবা কোনো কোম্পানি যদি বিদেশে ব্যবসা করে দেশে টাকা পাঠায় তাহলে সেই আয় জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে না বা অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হিসেবে পরিগণিত হবে না। অর্থাৎ মােট দেশীয় উৎপাদন বলতে দেশের ভৌগােলিক সীমারেখার মধ্যে উৎপাদিত সব রকমের দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের সমষ্টিকে বুঝায় । মােট দেশীয় উৎপাদনকে সংক্ষেপে জি . ডি . পি . ( GDP ) বলে । 

অর্থাৎ – GDP = C + I + G এখানে GDP = মােট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন , C = ভােগ , I = বিনিয়ােগ, G = সরকারি ব্যয় । 

মোট জাতীয় উৎপাদন(GNP)

মোট জাতীয় উৎপাদন হলো একটি দেশের নাগরিকদের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে সাধারনত একবছর সময়ের সকল পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মোট আর্থিক মূল্য বুঝায়। জিএনপি হিসাব করা হয় একটি দেশের নাগরিকদের অর্থনৈতিক অবদান বোঝার জন্য। আপনি যদি নিজ দেশে বা দেশের বাহিরের যেকোনো দেশ থেকে চাকারি বা ব্যবসা করার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে নিয়ে আসেন তাহলে সেই আয় মোট জাতীয় আয় হিসাবে বিবেচিত হবে। যেমন: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিদেশে চাকরি বা ব্যবসা করে অর্জিত অর্থের যে পরিমান বৈধপথে বাংলাদেশে পাঠায় তা বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের অংশ হবে। অর্থাৎ বলা যায় যে, একটি দেশের নাগরিকদের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে সাধারনত একবছর সময়ের সকল পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মোট আর্থিক মূল্যকে মোট জাতীয় আয় বলে ।

অর্থাৎ- (Gross National Product)জিএনপি পরিমাপ করা যায়ঃ
The formula for GNP = GDP + Net factor income from abroad
অথবা;
GNP = C + I + G + X + Z
     এখানে;
              C=Consumption
               I=investment
               G=government
               X=net exports
               Z=net income earned by domestic residents from overseas investments minus net income earned by foreign residents from domestic investments.

মােট জাতীয় উৎপাদন (GNP)ও মোট দেশীয় উৎপাদন (GDP ) এর মধ্যে পার্থক্যঃ

১ . সংজ্ঞাঃ
একটি দেশের নাগরিকদের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে সাধারনত একবছর সময়ের সকল পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মোট আর্থিক মূল্যকে মোট জাতীয় আয় বলে ।
পক্ষান্তরে,GDP হল মােট দেশজ উৎপাদন বা কোন কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন দেশের ভৌগােলিক সীমানার অভ্যন্তরে  উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার বাজার মূল্যের সমষ্টি । 

২. গুরুত্বঃ
Business, Economic Forecasting, Growth Counting এসকল ক্ষেত্রে GDP এবং GNP সমান গুরুত্ব বহন করে। তবে, একটি দেশের উৎপাদনশীলতা GDP এর মাধ্যমে জানা যায়।

৩. সূত্রঃ
GNP = C + I + G + ( X – M )   এখানে C  = দেশের জনগণের মােট বেসরকারি ভােগ ব্যয়,I= দেশের জনগণের মােট বেসরকারি বিনিয়ােগ ব্যয় , G =সরকারি ব্যয় = G সরকারি ব্যয় , ( X – M ) = নিট রপ্তানি।
পক্ষান্তরে, GDP = C + I + G এক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরে,দেশের জনগণের মােট ভােগ ব্যয় = C ,মােট বিনিয়োেগ ব্যয় = I মােট সরকারি ব্যয়=G।

৪. তুলনাঃ
GDP এবং GNP এর মধ্যে কোনটি বড় হবে তা সরাসরি বলা যায় না। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি কাজ করে তা হল-
যেমনঃ GNP = GDP + ( X – M ) হলে

● যদি X = M হয় , তখন ( X – M ) = 0 এবং GNP = GDP হবে ।
●যদি X > M হয় , তখন ( X – M ) > ০ এবং GNP > GDP 
●যদি X < M হয় , তখন ( X – M ) < 0 এবং GNP < GDP হয় ।

৫. পরিমাপঃ
GDP একটি ভৌগোলিক অবস্থান ভিত্তিক পরিমাপ এবং GNP জাতীয়তা ভিত্তিক পরিমাপ।

৬.  অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ
GNP ধারণার অর্থনৈতিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম। পক্ষান্তরে, GDP ধারণার অর্থনৈতিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।