সরকারি নোট ও ব্যাংক নোটের মধ্যে পার্থক্য

সরকারি নোট (Government Note):
কোনো দেশের অর্থ মন্ত্রণালয় যে বিহিত মুদ্রা ইস্যু করে, তাকে সরকারি নোট বলে। সরকারি নোট অর্থ মন্ত্রণালয় নিজ দায়িত্বে ইস্যু করে। এতে অর্থ সচিবের স্বাক্ষর থাকে। বাংলাদেশে এক টাকা, দুই টাকার এবং পাঁচ টাকার নোট ও কয়েন বাংলাদেশ সরকার ইস্যু করে। কাজেই বাংলাদেশে এক টাকা ও দুই টাকার এবং পাঁচ টাকার নোটই সরকারি নোট। সরকারি নোটের ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারি নোটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব স্বাক্ষর প্রদান করেন। সরকারি মুদ্রা দেশের আইন দ্বারা স্বীকৃত।

সরকারি মুদ্রা রূপান্তরযোগ্য নয়। এ কারণেই সরকারি মুদ্রায় “চাহিবা মাত্র ইহার বাহকে দিতে বাধ্য থাকিবে” (Pay on demand) কথাটি উল্লেখ থাকে না। সরকারি নোট অবাধে গ্রহণযোগ্য। দেশের সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সরকারি নোট গ্রহণে। আইনত বাধ্য। সরকারি নোটের মূল্যমান সাধারণত কম হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে শুধুমাত্র এক, দুই ও পাঁচা টাকার নোট সরকার ইস্যু করে। সরকারি নোটের ধরন সকল দেশেই সীমিত। বাংলাদেশে শুধুমাত্র তিন ধরনের নোটই সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত।

ব্যাংক নোট (Bank Note):
সকল দেশেই সরকারের পক্ষে ও সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নোট ও মুদ্রা ইস্যু করে, তাকে ব্যাংক নোট বলে। সরকার সীমিত মূল্যের ও সীমিত ধরনের নোট ইস্যু করে। পক্ষান্তরে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি মূল্যমানের এবং বিভিন্ন ধরনের নোট ইস্যু করে। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই একমাত্র নোট ইস্যুকারী বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের পক্ষে ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকা মূল্যের নোট ইস্যু করে।

কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই একমাত্র ব্যাংক নোট ইস্যু করার দায়িত্বপ্রাপ্ত। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক নোট ও মুদ্রা প্রচলন করে এবং এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত সরকারের পক্ষে নোট ও মুদ্রা প্রচলন করে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারি নোটের মতোই ব্যাংক নোট আইনানুগভাবে গ্রহণযোগ্য। ব্যাংক নোট সরকারি নোটে রূপান্তর করা যায়। এ কারণেই ব্যাংক নোটের উপর “চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকবে” (Pay on demand) কথাটি লেখা থাকে। ব্যাংক নোট বড় অঙ্কের লেনদেন সম্পাদনে সুবিধাজনক ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

সরকারি নোট ও ব্যাংক নোটের মধ্যে পার্থক্যঃ

সরকারের ট্রেজারি কর্তৃপক্ষ সরকারি নোট ইস্যু করে। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ইস্যুকৃত এসব নোটই তঃসরকারি নোট। পক্ষান্তরে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সকল নোট ইস্যু করে তা ব্যাংক নোট নামে পরিচিত। সরকারি নোট ও ব্যাংক নোটের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। সরকারি নোট ও ব্যাংক নোটের পার্থক্য নিম্নরূপ:

সাধারণত একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ দেশের মুদ্রা প্রচলন করে। এর কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন- স্কটল্যান্ডে বাণিজ্যিক ব্যাংকও মুদ্রা প্রচলনের সাথে সম্পৃক্ত। এরূপ মুদ্রাকে ব্যাংক নোট বলা হয়। বাংলাদেশে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ এ ধরনের নোট প্রচলন করে। একে বিহিতমুদ্রা বা Legal tender বলে। আবার বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ও নোট ইস্যু করে। এগুলো হলো সরকারী মুদ্রা। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রাগুলো হলো : ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার ইস্যু করে মাত্র। কোন মুদ্রা ইস্যু করতে পারে না। পাঁচ টাকা এখন সরকারি মুদ্রা। এক ও দুই টাকার পাশাপাশি পাঁচ টাকাও এখন সরকারি মুদ্রা। এত দিন পাঁচ টাকা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা। গভর্নরের স্বাক্ষরে এখন বাজারে রয়েছে সেই পাঁচ টাকার নোট। কিন্তু সরকারি মুদ্রা হিসেবে এখন থেকে পাঁচ টাকার নোটে স্বাক্ষর করেন অর্থসচিব। অর্থসচিবের স্বাক্ষর করা পাঁচ টাকার নোট বাজারে রয়েছে।

এত দিন সরকারি মুদ্রা ছিল ১ পয়সা থেকে ২ টাকা পর্যন্ত। আইন অনুযায়ী এখন সরকারি মুদ্রা হবে ১ পয়সা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। বাংলাদেশ কয়েনেজ অর্ডার, ১৯৭২ সংশোধন করে গত বছর পাঁচ টাকাকে ব্যাংক মুদ্রা থেকে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর করে সরকার। এর ফলে দেশে প্রথমবারের মতো পাঁচ টাকার নোটে অর্থসচিবের স্বাক্ষর যুক্ত হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ কয়েনেজ অর্ডার আইন সংশোধনের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কার্যপত্রে বলা হয়, সরকারি মুদ্রা সরকারের ঐতিহ্যের স্মারক। কিন্তু অর্থনীতি সম্প্রসারিত হলেও তাল মিলিয়ে সরকারি মুদ্রা বাড়েনি। আবার মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কমছে।