মানব ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে পার্থক্য

মানব বুদ্ধিমত্তা (Human intelligence) :
মানব বুদ্ধিমত্তা হল সেই বুদ্ধিমত্তা যা মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অর্জন করে। এটি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, যা জটিল জ্ঞানীয় কৃতিত্ব এবং উচ্চ স্তরের প্রেরণা এবং আত্ম-সচেতনতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। তাদের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে, মানুষ শিখতে, ধারণা গঠন করতে, বুঝতে এবং যুক্তি ও যুক্তি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়। মানুষের বুদ্ধিমত্তা প্যাটার্ন চিনতে, পরিকল্পনা করতে, উদ্ভাবন করতে, সমস্যার সমাধান করতে, সিদ্ধান্ত নিতে, তথ্য ধরে রাখতে এবং যোগাযোগের জন্য ভাষা ব্যবহার করতে আমাদের ক্ষমতাকে অন্তর্ভুক্ত করে বলে মনে করা হয়।

কিভাবে বুদ্ধিমত্তার ধারণা এবং পরিমাপ করা উচিত সে সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী ধারণা রয়েছে। সাইকোমেট্রিক্সে, মানুষের বুদ্ধিমত্তা সাধারণত বুদ্ধিমত্তা ভাগফল (IQ) পরীক্ষার দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়, যদিও এই পরীক্ষার বৈধতা বিতর্কিত। মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং সামাজিক বুদ্ধিমত্তার মতো বুদ্ধিমত্তার বেশ কয়েকটি উপশ্রেণি প্রস্তাব করা হয়েছে, এবং এগুলি বুদ্ধিমত্তার স্বতন্ত্র রূপগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে কিনা তা নিয়ে উল্লেখযোগ্য বিতর্ক রয়েছে।

একজন ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তার স্তর কীভাবে গঠিত হয় সে সম্পর্কেও চলমান বিতর্ক রয়েছে, এই ধারণা থেকে শুরু করে যে বুদ্ধিমত্তা জন্মের সময় স্থির করা হয় এই ধারণা থেকে যে এটি নমনীয় এবং একজন ব্যক্তির মানসিকতা এবং প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) :
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) হলো মানব মতো চিন্তামূলক প্রক্রিয়াগুলির মডেল তৈরি করার প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে সিস্টেমগুলি শিখতে এবং সমস্যা সমাধান করতে পারে। এআই বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে পারে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা সংক্ষেপে (AI) হল কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করে। মূলত মেশিন দ্বারা মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতার অনুকরণ ও সমস্যার সমাধানকরাই হল আই। বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক আকার ধারন করেছে। এর কয়েকটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। যেমনঃ গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, মাইক্রোসফট করটানা।

আরও মজার বিষয় ইউটিউব ব্যবহার করার সময়ও এই AI ব্যবহার করে বিভিন্ন কন্টেন্ট এর কপিরাইট যাচাই করা হয়ে থাকে। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার করার সময় কয়েকটা জিনিস আমাদের মাথায় রাখতে হয়। তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলঃ

★ কোন জটিল সমস্যাকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে তারপর সমাধান করার চেষ্টা করা।
★ ভবিষ্যতে কি করবে তার একটা পরিকল্পনা করার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে।
★ কমন সেন্স থাকতে হবে বা ভালোভাবে বলতে গেলে আমরা যেমন কোন বিষয় এর নাম শুনলেই তার একটা চিত্র আমাদের মনের মধ্যে তৈরি হয় এবং আমরা সেই বিষয়টি সম্পর্কে একটা সাধারণ জ্ঞান ধারণ করি যা প্রায় সকল মানুষের ক্ষেত্রে একই হয়ে থাকে।
★সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অবশ্যই শেখার ক্ষমতা থাকতে হবে। অর্থাৎ কোন নতুন কিছু থেকে শিখতে পারবে এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে সেই জ্ঞান কাজে লাগাতে পারবে।

মানব ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে পার্থক্যঃ
মানব বুদ্ধিমত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উভয়ই তাদের নিজস্ব উপায়ে মূল্যবান। মানব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে কিছু প্রধান পার্থক্য নিম্নরূপ-

১. মানব বুদ্ধিমত্তা হল সেই বুদ্ধিমত্তা যা মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অর্জন করে। এটি একটি জটিল এবং বহুমুখী শক্তি যা আমাদের শিখতে, চিন্তা করতে, সমস্যা সমাধান করতে, সিদ্ধান্ত নিতে এবং সৃজনশীল হতে দেয়।

অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল সেই বুদ্ধিমত্তা যা মানুষের দ্বারা তৈরি যন্ত্রগুলিতে প্রোগ্রাম করা হয়। এটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা যা মেশিনকে মানুষের মতো কাজ করতে সক্ষম করে।

২. মানব বুদ্ধিমত্তা সরাসরি ইন্দ্রিয়সমূহের অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করে তার পারদর্শীতা প্রদর্শন করে। অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়সমূহের অভিজ্ঞতাকে সরাসরি ব্যবহারের সুযোগ থাকে না।

৩. মানব বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতাকে খুব সহজে প্রতিরূপ তৈরি বা অন্যকে সরবরাহ করা যায় না। অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলত বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যা খুব সহজেই প্রতিরূপ তৈরি ও অন্যদের কাছে সরবরাহ করা যায়।

৪. মানব বুদ্ধিমত্তা চিরস্থায়ী নয়; কোনো কারণে এ বুদ্ধিমত্তার অবনতি ঘটতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাধারণত চিরস্থায়ী। অন্যদিকে, কম্পিউটার পদ্ধতি ও প্রোগ্রাম বদল করা না হলে এর স্থায়িত্ব বজায় থাকবে।

৫. মানব বুদ্ধিমত্তা ক্রমেই বিকশিত হতে পারে। অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বাভাবিকভাবে বিকাশের কোনো সুযোগ নাই।

৬. মানব বুদ্ধিমত্তাকে লিখে রাখা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে প্রোগ্রাম কোড আকারে লিখে রাখা যায়।

৭. এক জাতীয় কাজ হলেও মানব বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহারের বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল। অন্যদিকে, একই জাতীয় কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ততটা ব্যয়বহুল নয়।

৮. মানব বুদ্ধিমত্তা আমাদের বিশ্বকে বোঝার এবং এতে আকার দেওয়ার ক্ষমতা দেয়। অন্যদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের জীবনকে সহজতর এবং আরও দক্ষ করে তুলতে পারে।