বুদ্ধি ও কৃতির মধ্যে পার্থক্য

বুদ্ধি (Intelligence) :
বুদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্ক ক্রিয়া এবং শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বুদ্ধির গুরুত্ব অসীম। বয়স এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মানুষের বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং চিন্তার মাধ্যমে সেটি প্রয়োগ করে কোন সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতার উৎকর্ষ সাধিত হয়। উন্নত জাতিসমূহের চিরাচরিত ভাবনা চিন্তার প্রেক্ষিতে বুদ্ধির বর্তমান সংজ্ঞার উৎপত্তি ঘটেছে। উক্ত প্রথা মানুষের শেখা ও তাকে শেখানোর একটি মাত্র পদ্ধতি নির্দেশ করে। অর্থাৎ সেটি এমন ব্যবস্থা যা একটি শিল্পোন্নত সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উপযুক্ত এবং সে ব্যবস্থায় স্কুল নামক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ধরনের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু শুধুমাত্র মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ধ্যান ধারণা বা বিশ্বাস অনুযায়ী একটি মাত্র সংজ্ঞায় বুদ্ধির বিবরণ দেওয়র চেষ্টা করা হলে সব আচরণের প্রতি সুবিচার করা হবে না। কারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণী ছাড়াও প্রতিটি সমাজে উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত শ্রেণী বিদ্যমান।

একদিকে যেমন- শ্রেণীগত বৈষম্য বিদ্যমান অন্যদিকে রয়েছে সমাজের সদস্যদের কৃষ্টি/সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের মধ্যে পার্থক্য। আমাদের শহুরে সমাজে লেখাপড়া
শেখার উপর গুরুত্ব আরোপ করার রীতি প্রচলিত। কিন্তু অনেক উপজাতীয় সংস্কৃতিতে ভিন্ন নেপূণ্য আয়ত্ত্ব করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

কৃতি (Achievement) :
কোন প্রকার মৌখিক প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শুধুমাত্র হাত -পা এর সাহায্যে অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকার কার্যসম্পাদনের মধ্য দিয়ে তার মানসিক ক্ষমতা ও দক্ষতা পরিমাপের ক্ষেত্রে এবং বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয়ে যে বুদ্ধি অভীক্ষা প্রয়োগ ও পরিচালনা করা হয় তাকেই কৃতি বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে; শিক্ষালব্ধ দক্ষতা বা অর্জিত দক্ষতাকে বুঝায়। নির্দেশনা প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাম লক কার্যকলাপ অর্থাৎ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণের ফল স্বরূপ যে দক্ষতা অর্জিত হয় তাকে কৃতি বলা হয়।

বুদ্ধি ও কৃতির মধ্যে পার্থক্যঃ
বুদ্ধি ও কৃতির উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তুর মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেলেও অনেক সময় একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়। বুদ্ধি ও কৃতির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। বুদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্ক ক্রিয়া এবং শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বুদ্ধির গুরুত্ব অসীম। বয়স এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মানুষের বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং চিন্তার মাধ্যমে সেটি প্রয়োগ করে কোন সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতার উৎকর্ষ সাধিত হয়।

অন্যদিকে, কোন প্রকার মৌখিক প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শুধুমাত্র হাত -পা এর সাহায্যে অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকার কার্যসম্পাদনের মধ্য দিয়ে তার মানসিক ক্ষমতা ও দক্ষতা পরিমাপের ক্ষেত্রে এবং বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয়ে যে বুদ্ধি অভীক্ষা প্রয়োগ ও পরিচালনা করা হয় তাকেই কৃতি বলে।

২। বুদ্ধি মানসিক ক্ষমতার সমষ্টি যা পরিমাপযোগ্য। শিশুরা জন্মগতভাবে কতগুলো সুপ্ত ক্ষমতা বা প্রবৃত্তির অধিকারী যা যথাযথ স্বাভাবিক পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বিকশিত হয়ে পূর্ণতা লাভ করে। এটি সর্বজন স্বীকৃত যে সব শিশু সমান সহজাত বা প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। অনেকদিন এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, বুদ্ধি এমন ক্ষমতা যা জন্মগতভাবে নির্ধারিত তাই স্বাভাবিক পরিবেশে ক্ষমতাটি পূর্ব নির্ধারিত রূপ অনুযায়ী বিকশিত হয়। এরকম ধারণা অনুযায়ী মনে করা হয় যে বুদ্ধির বিকাশ ধারাকে উন্নত করার ব্যাপারে খুব বেশি কিছু করার নেই। সহজ ভাষায় বুদ্ধি বলতে বুঝায় কিছু শেখার ক্ষমতা। কিন্তু বুদ্ধি সহজাত- এ ধারণা আমাদের চলার পথে অনেক বাধার সৃষ্টি করতে পারে। একজন ছাত্র স্থুল বুদ্ধিসম্পন্ন হলে অনেক শিক্ষক মনে করেন যে, তার বুদ্ধি যখন কম তখন তার পক্ষে কোন বিষয়েই পারদর্শিতা লাভ করা সম্ভব নয়। এরূপ মনোভাব শিক্ষণ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে। বর্তমানে মনোবিজ্ঞানীরা দৃঢ়তার সাথে বলেন যে যথাযথ প্রশিক্ষণের সাহায্যে অনেককে অনেক বিষয়ে পারদর্শী করে তোলা সম্ভব।

অন্যদিকে, কৃতি বলতে শিক্ষালব্ধ দক্ষতা বা অর্জিত দক্ষতাকে বুঝায়। নির্দেশনা প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাম লক কার্যকলাপ অর্থাৎ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণের ফল স্বরূপ যে দক্ষতা অর্জিত হয় তাকে কৃতি বলা হয়। বুদ্ধি অভীক্ষা ও কৃতি অভীক্ষার প্রকৃতি, বিষয়বস্তু ও প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ধারণা দুটোর মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট বুঝা যাবে।

৩। বুদ্ধি ও কৃতির সাহায্যে একজন ব্যক্তির ভবিষ্যত সাফল্য সম্পর্কে সবসময় একরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তাই অনেক মনোবিজ্ঞানী বুদ্ধির সাফল্যাঙ্ককে প্রধানত জন্মগত ক্ষমতার পরিমাণ। অন্যদিকে, কৃতির সাফল্যাঙ্ককে জন্মগত ক্ষমতা, পড়াশোনার আগ্রহ ও নির্দেশনার ফলাফলের সমষ্টি হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

৪। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বুদ্ধি অভীক্ষা ব্যবহার করা হলে বুদ্ধি ও কৃতি- এই শব্দ দুটির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝা দরকার। বুদ্ধি ও কৃতির উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তুর মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেলেও অনেক সময় একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়।