গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তির মধ্যে পার্থক্য

গতিশক্তি এবং স্থিতিশক্তি হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণ যা ভৌত বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তির মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

গতি শক্তি (Kinetic Energy) :
কোনো গতিশীল বস্তুর গতির প্রভাবে বা গতিশীল থাকার কারণে তার মধ্যে কাজ করার যে সামর্থ্য অর্জিত হয় তাকে ঐ বস্তুর গতি শক্তি বলে। গতিশীল বস্তু স্থির অবস্থায় আসার পূর্ব পর্যন্ত যে পরিমাণ কাজ করতে পারে তার দ্বারা বস্তুটির গতি শক্তি পরিমাপ করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় একটি স্থির বস্তুকে তার স্থিতিশীল অবস্থা থেকে গতিশীল করতে বস্তুটির উপর যে পরিমাণ কাজ করতে হয় তাই বস্তুটির গতি শক্তি।

স্থিতি শক্তি (Potential Energy) :
বস্তু তার ভৌত অবস্থা বা অবস্থানের আপেক্ষিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করার সামর্থ বা শক্তি অর্জন করে এবং ঐ শক্তি বস্তুর পরিবর্তিত অবস্থান বা অবস্থা মধ্যে সঞ্চিত থাকে। এবং বস্তু যখন পূর্বাবস্থায় বা পূর্বাবস্থানে ফিরে আসে তখন ঐ সঞ্চিত শক্তি ব্যয় করে। যেমন একঠি খেলনা গাড়ির স্প্রিংটি মুচড়ালে এটি গুটিয়ে যায় ছেড়ে দিলে উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। তখন খেলনা গাড়িটিকে চালায়।গুলতি দিয়ে পাখি শিকারের সময় গুলতির রাবারটিকে জোরে টেনে ছেড়ে দিলে গুলতি সাথে লাগানো মার্বেল বা গুলিটি সজোরে বের হয়ে যায়। টানের ফলে গুলতির রাবারের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন ঘটে ফলে শক্তি সঞ্চিত হয় টান ছেড়ে দিলে ঐ শক্তির প্রভাবে মার্বেল বা গুলিটিকে ছুড়ে দেয়।

মাটি থেকে এক টুকরো ইট বা ভারি বস্তু খন্ড কিছুটা উপরে তুলে ছেড়ে দিলে এটি সজোরে মাটিতে পড়ে এবং মাটির গায়ে আঘাত করে। এ ক্ষেত্রে ইটের টুকরোটিকে উপরে উঠানোর জন্য এর মধ্যে শক্তি সঞ্চিত হয়। এসব আর এক ধরণের যান্ত্রিক শক্তি যার নাম বিভব শক্তি বা স্থিতি শক্তি।

কোনো বস্তু তার ভৌত অবস্থা বা অবস্থানের আপেক্ষিক পরিবর্তনের ফলে অথবা বস্তুস্থিত কণার পারস্পরিক অবস্থান পরিবর্তনের কারণে যে শক্তি অর্জন করে তাকে ঐ বস্তুর বিভব শক্তি বা স্থিতি শক্তি বলে।

গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ
১. কোনো গতিশীল বস্তুর গতির প্রভাবে বা গতিশীল থাকার কারণে তার মধ্যে কাজ করার যে সামর্থ্য অর্জিত হয় তাকে ঐ বস্তুর গতি শক্তি বলে। অন্যদিকে, কোনো বস্তু তার ভৌত অবস্থা বা অবস্থানের আপেক্ষিক পরিবর্তনের ফলে অথবা বস্তুস্থিত কণার পারস্পরিক অবস্থান পরিবর্তনের কারণে যে শক্তি অর্জন করে তাকে ঐ বস্তুর বিভব শক্তি বা স্থিতি শক্তি বলে।

২. বস্তুর গতিশক্তি নির্ণয়ে কোন প্রসঙ্গ বস্তু বা প্রসঙ্গ তলের প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, স্থিতিশক্তি প্রসঙ্গ বস্তু বা প্রসঙ্গ তলের সাপেক্ষে নির্ণয় করা হয়। কোথা থেকে উচ্চতা পরিমাপ করা হচ্ছে অভিকর্ষজ বিভবশক্তি তার ওপর নির্ভরশীল।

৩. বস্তুর বেগ না থাকলে তার গতিশক্তি থাকে না। অন্যদিকে, কোন একটি তলের সাপেক্ষে বিভবশক্তি না থাকলে অন্য তলের সাপেক্ষে তার স্থিতিশক্তি থাকতে পারে।

৪. গতিশক্তি বস্তুর অণু পরমাণুগুলোর আপেক্ষিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে না। অন্যদিকে, স্থিতিশক্তি বস্তুর অণু পরমাণুগুলোর আপেক্ষিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে।