আইন ও প্রথার মধ্যে পার্থক্য

আইন (Law):

মানুষকে সুষ্ঠু, স্বাধীন এবং সুশৃংখলভাবে পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন তৈরি করা হয় তাকে আইন বলে। আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Law যা Lag নামক শব্দ থেকে উদ্ভূত। Lag এর আভিধানিক অর্থ স্থির, অপরিবর্তনীয় এবং যা সর্বত্র সমানভাবে প্রযোজ্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন হলো সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক বলবৎযোগ্য বিধান, যা সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়। আইন হলো নিয়মের এক পদ্ধতি যাকে নাগরিক বাধ্যতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের ভিত্তি নির্মাণ করতে ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্জকরী করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আইন বলতে সামাজিকভাবে স্বীকৃত লিখিত ও অলিখিত বিধিবিধান ও রীতিনীতিকে বোঝায়। ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিষ্টটল লিখেছিলেন, “আইনের শাসন যেকোন ব্যক্তি শাসনের চেয়ে ভাল। সামাজিক জীবনে যে রীতিনীতি বা বিধিবিধান মানুষ মেনে চলে তা হলো সামাজিক আইন।

প্রথা (Customs):

প্রথা বা রীতি হচ্ছে সুদীর্ঘকাল থেকে চলে আসা যে কোন ধরনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ, বিশ্বাস অথবা কর্মকাণ্ড যা অধিকাংশ সাধারণ জনগণ বা সমাজ কর্তৃক উৎপত্তিকাল থেকে যুগ যুগ ধরে বিনাদ্বিধায় পালন করাসহ মেনে চলে আসছে।(প্রথার সুসংগঠিত সংজ্ঞাঃ সুদীর্ঘকাল থেকে চলমান আচার অনুষ্ঠান, ধর্মীয় রীতিনীতি, নিয়ম-কানুন,আদেশ-নিষেধ, বিশ্বাস বা কর্মকাণ্ড যা অধিকাংশ সমাজ বা সাধারণ জনগণ কর্তৃক উৎপত্তিকাল হতে যুগ যুগান্তর ধরে বিনাদ্ধিধায় কঠোরভাবে মেনে আসাকে প্রথা বলে।

বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে প্রথা দুই প্রকার বা শ্রেণিতে বিভক্ত।যথাঃ (১).সুপ্রথাঃ যেসব প্রথাসমূহ জনকল্যাণমূলক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে সেসব প্রথাকে সুপ্রথা বলে।যেমনঃ পর্দাপ্রথা, ঠিকাদারি।

আইন ও প্রথার মধ্যে পার্থক্যঃ

মানুষকে সুষ্ঠু, স্বাধীন এবং সুশৃংখলভাবে পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন তৈরি করা হয় তাকে আইন বলে। আইন ও প্রথার মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১। আইন রাষ্ট্র সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, প্রথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামাজিক অনুমোদনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।

২। আইনের অস্তিত্ব বিধিদ্ধভাবে বর্তমান থাকে। স্বভাবতই আইন হল সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। অন্যদিকে, প্রচলিত ও প্রথাসমূহ বিধিবদ্ধভাবে বা লিখিত আকারে থাকে না। অর্থাৎ সমাজর প্রচলিত প্রথা সুস্পষ্ট বা সুনির্দিষ্ট নয়।

৩। সামাজিক বিভিন্ন প্রথা বা রীতিনীতি যখন বিশেষভাবে প্রয়োজন দেখা দেয় তখন তা আইনে পরিণত হয়। অন্যদিকে, আর প্রথা হল আইনের অন্যতম উৎসমাত্র।

৪। রাষ্ট্রের আইন অমান্য করলে শাস্তি ভোগ করতে হয়। অন্যদিকে, প্রথা লঙ্ঘনকারিকে কোন দৈহিক শাস্তি ভোগ করতে হয় না।

৫। আইন প্রণীত হয় সুস্থ সামাজ জীবনের অস্তিত্বের সাথে গুরুতপূর্ণ ও বিশেষ দরকারি বিষয়ে, যেমন- শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন, জমিদারই প্রথার বিলোপ প্রভৃতি। অন্যদিকে, প্রথার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। যেমন- সমাজের প্রাত্যাহিক, পরিচিত ও অতি সাধারণ বিষয়ের ক্ষেত্রে, যেমন- খাদ্যাখাদ্য, পূজাপার্বান প্রভৃতি।