মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা ও সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য

মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা (Marginal Efficiency of Capital) :
অতিরিক্ত এক একক মূলধন নিয়োগের ফলে যে অতিরিক্ত আয় উপার্জনের প্রত্যাশা করা হয় তাকে বলা হয় মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা। অর্থাৎ মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা বলতে কোনো বিনিয়োগ প্রকল্পে এক একক অতিরিক্ত মূলধন নিয়োগ করলে যে পরিমাণ অতিরিক্ত আয় উপার্জনের প্রত্যাশা করা হয় বা সম্ভাব্য আয়কে বাট্টা করলে তার মূল্য ও মূলধন দ্রব্যের যোগান দাম পরস্পর সমান হয়। মূলত বিনিয়োগ সিদ্ধান্তগ্রহণে মূলধনের কার্যকারিতা কতটুকু তাই মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা দ্বারা হিসাব করা হয়। মূলধন মজুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এক একক মূলধন যোগ হলে প্রত্যাশিত আয় কতটুকু বাড়ে তার মাত্রাই হলো মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা।

কেইন্সের বিখ্যাত গ্রন্থ- ‘The General Theory of Employment, Interest and MoneyÕ’ এর অন্যতম ধারণা হলো MEC। বিনিয়োগ সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে ‘মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা’ একটি হিসাবগত ও প্রাযুক্তিক ধারণা এবং ‘দক্ষতা’ শব্দটি দ্বারা মূলধনের কার্যকারিতা বোঝায়।

সুদের হার (Rate of Interest) :
সুদের হার ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার জন্য ঋণগ্রহীতার কাছে বার্ষিক মূল্য ধার্য করে। এটি সাধারণত মোট ঋণের শতকরা হিসাবে প্রকাশ করা হয়। অর্থনীতির পরিভাষায় সুদ হলো অর্থ বা সম্পদ ধার নেয়ার জন্য প্রদান করা “ভাড়া”। ঋণদাতা ঋণপ্রদানের জন্য একটি নির্দিষ্ট হারে এই সুদ ধার্য করে থাকে। মূলত যে পরিমাণ অর্থ ধার দেয়া হয়েছে, তাকে বলা হয় মূল, এবং এই মূল এর যত অংশ একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সুদ হিসাবে প্রদান করতে হয়, তাকে সুদের হার বলে। ইসলাম ধর্মে সুদকে রিবা বলে।

মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা ও সুদের হারের মধ্যে পার্থক্যঃ
বিনিয়োগ সিদ্ধান্তগ্রহণে মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা এবং সুদের হার উভয় ধারণাই গুরুত্বপূর্ণ। উভয় ধারণাই শতকরা হিসেবে প্রকাশিত হলেও তাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে যা নিম্নরূপ:

১। অতিরিক্ত এক একক মূলধন নিয়োগের ফলে যে অতিরিক্ত আয় উপার্জনের প্রত্যাশা করা হয় তাকে বলা হয় মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা। অন্যদিকে, সুদের হার ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার জন্য ঋণগ্রহীতার কাছে বার্ষিক মূল্য ধার্য করে। এটি সাধারণত মোট ঋণের শতকরা হিসাবে প্রকাশ করা হয়।”

২। মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা হলো একটি প্রত্যাশিত মুনাফার হার। অন্যদিকে, সুদের হার হলো বাস্তবে অর্থ প্রাপ্তির জন্য ব্যায়িত খরচের হার।

৩। মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা দ্বারা মূলধনের আয় এবং সুদের হার দ্বারা মূলধনের ব্যয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

৪। মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা নির্ধারণে মূলধন থেকে প্রত্যাশিত আয় ও মূলধনবাবদ ব্যয় ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে, অর্থবাজার ও মূলধন বাজার দ্বারা সুদের হার নির্ধারিত হয়।

৫। নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট MEC বিবেচিত হয়। অন্যদিকে, মূলধনের বাজারভেদে একই পরিমাণ বিনিয়োগের জন্য সুদের হার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।