মঙ্গল এবং পৃথিবী গ্রহের মধ্যে পার্থক্য

মঙ্গল গ্রহ (Mars):

মঙ্গল হলো সূর্য থেকে চতুর্থ দূরবর্তী গ্রহ এবং বুধের পরেই সৌরজগতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম গ্রহ। প্রায়ই এই গ্রহটিকে ‘লাল গ্রহ’ নামে অভিহিত করা হয়। এর জন্য দায়ী এই গ্রহের পৃষ্ঠতলে ফেরিক অক্সাইডের আধিক্য, যার ফলে গ্রহটিকে লালচে রঙের দেখায় এবং খালি চোখে দৃশ্যমান মহাজাগতিক বস্তুগুলোর মধ্যে এই গ্রহটিকে স্বতন্ত্রভাবে দর্শনীয় করে তোলে। বাংলায় মঙ্গল গ্রহকে এক হিন্দু গ্রহদেবতা মঙ্গলের নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে।

মঙ্গল গ্রহের ইংরেজি প্রতিশব্দ মার্স (Mars) নামটি এসেছে রোমান পুরাণের যুদ্ধদেবতা মার্সের নামানুসারে। এর কারণ হিসেবে ধরা হয় মঙ্গলের লাল রংকে, যা রক্তকে ইঙ্গিত করে। সূর্য থেকে মঙ্গল গ্রহের দূরত্ব ২২ কোটি ৭৯ লাখ ৩৯ হাজার ১০০ কিলোমিটার। এটি একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ৬৮৬.৯৭১ দিন সময় নেয়। পাশাপাশি নিজ কক্ষে আবর্তনের সময় ২৪.০৭৭ ঘণ্টা, গড় তাপমাত্রা-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ পৃথিবী থেকে এই গ্রহের ভূ-ত্বক তুলনামূলক বেশি শীতল। এর কেন্দ্রের ব্যাসার্ধ প্রায় এক হাজার ৪৮০ কিলোমিটার (৯২০ মাইল)। এই কেন্দ্রের মূল উপাদান লোহা। এর সঙ্গে প্রায় ১৫ শতাংশ গন্ধক আছে।

মঙ্গলের ঘূর্ণনকাল এবং ঋতু পরিবর্তনও অনেকটা পৃথিবীর মতো। এর ত্বকও পৃথিবীর ত্বকের সঙ্গে মিলে যায়। তবে মঙ্গল গ্রহে বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব কম। এর ভূ-ত্বকে রয়েছে অসংখ্য খাদ, আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি এবং মেরুদেশীয় বরফ। সৌরজগতের সর্ববৃহৎ পাহাড় (অলিম্পাস মনস) ও সর্ববৃহৎ গভীর গিরিখাত (ভ্যালিস মেরিনারিস) রয়েছে এই গ্রহে।

পৃথিবী (Earth):

পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য হতে এটির দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কি.মি। এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর অপর নাম “বিশ্ব” বা “নীলগ্রহ”। ইংরেজি ভাষায় পরিচিত আর্থ (Earth) নামে, গ্রিক ভাষায় পরিচিত গাইয়া নামে, লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম “টেরা (Terra)। সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবী-ই একমাত্র নাম, যেটি কোনো গ্রিক বা রোমান দেব-দেবীর নাম অনুসারে রাখা হয়নি। Earth শব্দটি এসেছে ইংরেজি এবং জার্মান শব্দ ‘eor(th)e/ertha’ এবং ‘erde’ থকে, যার অর্থ ground বা ‘ভূমি’।

পৃথিবী হলো মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবী এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত। ৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে। পৃথিবীর জীবমণ্ডল এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও অন্যান্য অজৈবিক অবস্থাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন বায়ুজীবী জীবজগতের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি ওজন স্তর গঠিত হয়েছে।

পৃথিবীকে বলা হয় আদর্শ গ্রহ। কারণ একমাত্র পৃথিবী গ্রহেই উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাসের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস প্রায় ১৩ হাজার কিলোমিটার। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ।

মঙ্গল এবং পৃথিবী গ্রহের মধ্যে পার্থক্যঃ

সৌর পরিবারের মঙ্গল গ্রহটিতে প্রাণের সন্ধান করা হয়েছে বেশ কয়েক বার। তবে সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, মঙ্গল এবং পৃথিবীর অন্দর–গঠনে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। মঙ্গল এবং পৃথিবী গ্রহের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

পৃথিবীর পৃষ্ঠের প্রায় 70% পৃষ্ঠ তরল জল দ্বারা আচ্ছাদিত। বিপরীতে, মঙ্গল গ্রহে এখন তার তলতে কোন তরল জল নেই এবং খালি পাথর এবং ধুলায় আবৃত রয়েছে। মঙ্গলগ্রহের চিত্রের চারটি অন্ধকার বৃত্ত হ’ল থারসিস ঝাল, ভলকানোস।

মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল পৃথিবীর সমান ২৮.৪%, বালুকাময় ভূমি অংশের দিক থেকে মাত্র ছোট (যা পৃথিবীর পৃষ্ঠের ২৯.২%)। পৃথিবীর 28,4° এর তুলনায় মঙ্গল গ্রহের অক্ষীয় কাত 29,2°।

মঙ্গল হল সৌরজগতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম গ্রহ, পৃথিবীর ভরের এক দশমাংশ। এবং তাদের ছোট আকারের কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং ভূ-পদার্থবিদদের জন্য প্রধান খোলা প্রশ্নগুলির মধ্যে একটি যারা সৌর গ্রহের গঠন অধ্যয়ন করে।

আমরা পৃথিবীতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রণে শ্বাস নিই, মঙ্গলে একই পরিমাণ অক্সিজেন শুধুমাত্র 14 বারের বেশি “শ্বাস নেওয়ার” পরে পৌঁছাতে পারে: বায়ুমণ্ডল 100 গুণ কম ঘনত্বে এবং প্রধানত কার্বন ডাই অক্সাইড দ্বারা গঠিত, গ্রহটি সামান্য অক্সিজেন সরবরাহ করে

মঙ্গল ও পৃথিবী দুটি গ্রহের কোর প্রাথমিকভাবে তরল লোহায় গঠিত। তবে মঙ্গল গ্রহের কোরের ২০ শতাংশে লোহার চেয়ে পাতলা উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সালফার, অক্সিজেন, কার্বন ও হাইড্রোজেন। পৃথিবীর কোরে এ ধরনের উপাদান মঙ্গল গ্রহের অর্ধেক। অর্থাৎ, পৃথিবীর কোরের চেয়ে মঙ্গল গ্রহের কোরের ঘনত্ব কম।

পৃথিবীর কেন্দ্রে লোহার আধিক্য নীলগ্রহের অভ্যন্তরকে সচল রেখেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে, বিজ্ঞানীদের একাংশের অনুমান ভারী মৌলের অভাবে সুদূর ভবিষ্যতে ঘূর্ণনের শক্তি হারাতে পারে মঙ্গল। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে নাসা।