চাঁদ ও কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

চাঁদ (Moon):

বাংলায় চাঁদ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ চন্দ্র থেকে এসেছে। এছাড়াও শশধর, শশী প্রভৃতিও চাঁদের সমার্থক শব্দ। চন্দ্র পৃষ্ঠের ভূমিরূপকে পৃথিবী থেকে খালি চোখে খরগোশ বা শশকের ন্যায় লাগে। তাই শশক ধারক রূপে কল্পনা করে শশধর নামটি দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহটির The Moon ছাড়া অন্য কোনো নাম নেই। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৩৯৯ কিলোমিটার (প্রায় ২৩৮,৮৫৫ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। এর অর্থ দাড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ।

চাঁদের আবর্তনের পর্যায়কাল এবং তার কক্ষপথের পর্যায়কাল একই হওয়ায় আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ঠ সবসময় দেখতে পাই। চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড সময় নেয়। কিন্তু সমসাময়িক আবর্তনের ফলে পৃথিবীর পর্যবেক্ষকরা প্রায় ২৯.৫ দিন হিসেবে গণনা করে। একটি ঘণ্টা আবর্তনের পর্যায়কাল অর্ধেক ডিগ্রি দূরত্ব অতিক্রম করে। চাঁদ পৃথিবীকে যে অক্ষরেখায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে, সে অক্ষরেখায় চাঁদ একদিন বা ২৪ ঘণ্টায় ১৩°কোণ অতিক্রম করে। সুতরাং পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের সময় লাগে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড।

কৃত্রিম উপগ্রহ (Artificial Satellite):

মহাকাশ যাত্রা প্রসঙ্গে উপগ্রহ এমন এক বস্তু যা ইচ্ছাকৃতভাবে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। এই বস্তুগুলিকে পৃথিবীর চাঁদের মতো প্রাকৃতিক উপগ্রহগুলি থেকে পৃথক করার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ বলা হয়। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক ১ উৎক্ষেপণ করে। সেই থেকে ৪০ টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় ৮,৯০০ টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ২০১৮ এর একটি অনুমান অনুসারে, প্রায় ৫০০০ টি এখনও কক্ষপথে রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১,৯০০টি চালু থাকলেও, বাকিগুলো তাদের জীবনকাল অতিক্রম করে মহাকাশ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।

আদম্য কৌতুহলী মানুষ নিজেদের প্রয়োজনের বানিয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহ। মানুষের তৈরি এই সব উপগ্রহ পৃথিবীর মহাকর্ষ বলকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে। মানুষের তৈরি এই সব উপগ্রহকেই কৃত্রিম উপগ্রহ বলে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান, গোয়েন্দা নজরদারি, খনিজ সম্পদের সন্ধান, ইন্টারনেট ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ নির্ণয় এমন অনেক কাজেই কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়।

চাঁদ ও কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্যঃ

চাঁদ ও কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে কিছু বিষয়ে মিল থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অমিল পরিলক্ষিত হয়েছে। তাই নিচে চাঁদ ও কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

১। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। অন্যদিকে, মহাকাশ যাত্রা প্রসঙ্গে উপগ্রহ এমন এক বস্তু যা ইচ্ছাকৃতভাবে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। এই বস্তুগুলিকে পৃথিবীর চাঁদের মতো প্রাকৃতিক উপগ্রহগুলি থেকে পৃথক করার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ বলা হয়।

২। চাঁদ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি উপগ্রহ। অন্যদিকে, কৃত্রিম উপগ্রহ মানুষের তৈরি উপগ্রহ।

৩। চাঁদ আকারে বড়। অন্যদিকে, কৃত্রিম উপগ্রহ আকারে ছোট।

৪। মহাজাগতিক মেঘ, ধুলাবালি ইত্যাদি দ্বারা চাঁদ গঠিত। অন্যদিকে, কৃত্রিম উপগ্রহ বিভিন্ন ধাতু দ্বারা গঠিত।

৫। চাঁদ তার নিজ কক্ষপথে নির্দিষ্ট দ্রুতিতে ঘোরে। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরার জন্য কৃত্রিম উপগ্রহকে প্রয়োজনীয় দ্রুতি দিতে হয়।