কীটনাশক ও অজৈব সারের মধ্যে পার্থক্য

কীটনাশক (Pesticides):
কীটনাশক হল রাসায়নিক পদার্থ যা ফসলে কীটপতঙ্গ বা আগাছা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ বা প্রশমিত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি রোগ এবং উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষা করে, এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। কীটনাশক একটি সাধারণ শব্দ যা একটি মিশ্রণ বা পদার্থকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়, ইঁদুর, ছত্রাক এবং আগাছা মেরে সর্বোচ্চ ফসলের ফলন নিশ্চিত করে। এটি উদ্ভিদের বৃদ্ধিকেও হুমকিতে রাখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কৃত্রিম জৈব কীটনাশকের বিকাশ কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে বিপ্লব ঘটায়।

কীটনাশক যা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত সমস্ত পদার্থ যেমন কীটনাশক, হার্বিসাইড এবং ছত্রাকনাশককে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। কিছু কম পরিচিত কীটনাশক হল জীবাণুনাশক, উদ্ভিদের ডিফোলিয়েন্টস ইত্যাদি। সমস্ত কীটনাশকে সক্রিয় পদার্থ থাকে যা প্রয়োজনীয় উপাদান নিশ্চিত করে যে তারা সঠিকভাবে কাজ করে। এটি একটি রাসায়নিক বা একটি অণুজীব হতে পারে, যেমন একটি ব্যাকটেরিয়া বা একটি ভাইরাস। কিছু ক্ষেত্রে, রাসায়নিক পোকামাকড়কে বিভ্রান্ত করে, বা কিছু ক্ষেত্রে, পোকামাকড় বা কীটপতঙ্গের জন্য ফসলকে কম সুস্বাদু করে তোলে। কিন্তু সাধারণত কীটনাশক পোকামাকড়, আগাছা বা ছত্রাক মেরে কাজ করে।

অজৈব সার (Inorganic Fertilizers):
অজৈব উৎস থেকে কল-কারখানায় কৃত্রিম বা রাসায়ানিক উপায়ে যে সব সার তৈরী করা হয় তাদেরকে অজৈব বা রাসায়ানিক সার বলে । যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ইত্যাদি। জৈব সারের তুলনায় অজৈব সার তাড়াতাড়ি মাটিতে মিশে যেতে পারে এবং দ্রুত উদ্ভিদকে পুষ্টি উপাদান প্রদান করতে সক্ষম। অজৈব সার বলতে রাসায়নিক সারকে বুঝায়৷ বাংলাদেশে পঞ্চাশ দশকের গোড়ার দিকে গাছের পুষ্টি উপাদানের সম্পূরক উৎস হিসেবে রাসায়নিক (অজৈব) সার প্রবর্তন করা হয়েছিল।

আধুনিক জাতের শস্যের প্রবর্তন ও সম্প্রসারণ এবং সেচ সুবিধা সৃষ্টির সাথে সাথে ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নিয়মিতভাবে এসব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। সার ব্যবহার বৃদ্ধির প্রবণতা, বিশেষ করে ইউরিয়া-নাইট্রোজেনের ব্যবহার বৃদ্ধি এখনো বহাল আছে।

কীটনাশক ও অজৈব সারের মধ্যে পার্থক্যঃ
কীটনাশক ও অজৈব সার উভয়ই কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে এদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

১। কীটনাশক হলো এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা উদ্ভিদ, প্রাণী বা মানুষের ক্ষতিকারক পোকামাকড়, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবকে মেরে ফেলে বা তাদের বৃদ্ধি বা বিস্তার রোধ করে। কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন করা হয়।

অন্যদিকে, অজৈব সার হলো এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। অজৈব সার সাধারণত খনিজ পদার্থ থেকে তৈরি হয়। অজৈব সার ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়।

২। কীটনাশকের কাজ হলো ক্ষতিকারক জীবকে মেরে ফেলা বা তাদের বৃদ্ধি বা বিস্তার রোধ করা। অন্যদিকে, অজৈব সারের কাজ হলো গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা।

৩। কীটনাশকের প্রকৃতি রাসায়নিক পদার্থ। অন্যদিকে, অজৈব সারের প্রকৃতি খনিজ পদার্থ।

৪। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কিছু ঝুঁকি রয়েছে। যেমন-
i. কীটনাশক পরিবেশ দূষণ করে।
ii. কীটনাশক মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
iii. কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ফসলের উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

অন্যদিকে, অজৈব সার ব্যবহারের ফলেও কিছু ঝুঁকি রয়েছে। যেমন-
i. অজৈব সার দীর্ঘমেয়াদে মাটির উর্বরতা হ্রাস করে।
ii. অজৈব সার ব্যবহারের ফলে ফসলের পুষ্টি উপাদানের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

৫। কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-
i. কীটনাশক ব্যবহারের আগে বিষক্রিয়া প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ii. কীটনাশক ব্যবহারের সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করা উচিত।
iii. কীটনাশক ব্যবহারের পর হাত ও শরীর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা উচিত।

অন্যদিকে, অজৈব সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-
i. অজৈব সার ব্যবহারের আগে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা উচিত।
ii. অজৈব সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়।
iii. অজৈব সার ব্যবহারের পর মাটি ভালোভাবে চাষ করা উচিত।