শরীরিক ও স্বাস্থ্য শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য

শারীরিক শিক্ষা (Physical Education) :
শরীরের সাথে সংযুক্ত বা সম্পর্কিত কোন কিছুর মাধ্যমে যে শিক্ষা লাভ করা যায় তাই শারীরিক শিক্ষা। যে কোন অঙ্গসঞ্চালন বা খেলাধুলা শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য পুরনে সহায়ক হলেই তাকে শারীরিক শিক্ষা বলা যেতে পারে। সাধারণ শিক্ষা যেমন শিশুর সুপ্ত মানসিক প্রতিভা বিকাশ করে তেমনি ভাবে শারীরিক শিক্ষাও শিশুর তথা ব্যক্তির সুপ্ত দৈহিক প্রতিভা বিকাশ করে শারীরিক ও মানষিক উন্নয়নে সাহায্য করে থাকে। তাই শারীরিক শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার পূর্ণতা আসে না। ব্যক্তির সার্বিক উন্নতির জন্য শারীরিক শিক্ষা অপরিহার্য।

ইংরেজিতে কথা আছে “Mans sana in corpore sano” অর্থাৎ সুস্থ দেহে সুস্থ মন”। আর এই সুস্থ দেহের জন্য সুস্থ মন পেতে হলে শারীরিক শিক্ষার বিকল্প নেই। সে কারণেই বিশেষজ্ঞগণ সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শারীরিক শিক্ষাকে পাঠ্য হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। শারীরিক শিক্ষা সম্বন্ধে বিভিন্ন মনীষীরা কি বলেছেন সে দিকে আলোকপাত করি-

ডি. কে. ম্যাথিউস শারীরিক শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন “ শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষাই শারীরিক শিক্ষা ”।

স্মিথ ও লিফট্ন বলেছেন, “ বিজ্ঞান সম্মত ও কৌশল গত অঙ্গ সঞ্চালনের নাম শারীরিক শিক্ষা ”।

স্বাস্থ্য শিক্ষা (Health Education) :
যে শিক্ষা মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক আচরনের পরিবর্তন ঘটায় তাঁকে বলে স্বাস্থ্য শিক্ষা। সহজ ভাষায় বলা যায়, স্বাস্থ্য শিক্ষা হল, মানুষকে স্বাস্থ্য ও ব্যাধির বিষয়ে জ্ঞান প্রদান করা, মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটানো এবং কষ্ট বা অসুস্থতা জয়ী করে সুন্দর স্বাস্থ্যর দিকে এগিয়ে যাওয়ার যথাযথ পদ্ধতি। স্বাস্থ্যই ‘অমূল্য সম্পদ’, এই চিরসত্যটি আমরা সবাই জানি। আর প্রকৃত শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমেই ব্যক্তি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে ও তার মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা আসে। স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির সার্বিক অবস্থা যা তাকে যে-কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সমাজের ভালোমন্দ বুঝাতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্য শুধুমাত্র রোগ থেকে মুক্তি বা অসুস্থতার অভাব বা শারীরিক সুস্থতা নয়, স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির সামাজিক, মানসিক ও শারীরিক গুণাবলির এমন একটি সমন্বয় যা তাকে পরিপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়তা করে।

স্বাস্থ্য এমন একটি বিষয় যা মানুষকে আত্মপ্রতিষ্ঠালাভের পথ দেখায় ও ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ যন্ত্র ও তন্ত্রগুলিকে স্বাভাবিক ও সুস্থ রেখে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে, তার জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

শরীরিক ও স্বাস্থ্য শিক্ষার মধ্যে পার্থক্যঃ

শারীরিক শিক্ষা আলোচনা করার আগে স্বাস্থ্য শিক্ষা (Health Education) সম্পর্কে একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দুই রকমের (১) দৈহিক ও (২) মানসিক। একটি অপরটির উপর অনেকখানি নির্ভর করে। আবার মনের সুস্থতা অনেকখানি নির্ভর করে পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশের উপর। অর্থাৎ স্বাস্থ্য শিক্ষা বলতে কেবল দেহকে নিরোগ রাখার শিক্ষাই বোঝায় না, সেই সঙ্গে সুন্দর ও শৃঙ্খলাবদ্ধ সামাজিক ও পারিবারিক
জীবন যাপনের শিক্ষাকেও বোঝায়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষা যদিও এক জিনিস নয়, তবুও উভয়ের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। জীবনকে সুন্দর ও সুস্থ করে তুলতে হলে স্বাস্থ্য শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। সুন্দর ও সুস্থ জীবন যাপন করতে হলে লক্ষ রাখতে হবে যে, সহজেই যেন দেহ রোগাগ্রস্ত হয়ে নাপড়ে।

দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্থ সবল জীবন যাপনের জন্য যে শিক্ষা ও আচরণের অভ্যাস অনুশীলন করতে হয়, তাকেই শারীরিক শিক্ষা (Physical Education) বলে। শিশুকালা থেকেই শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রথমত তারা তাদের শরীর, রোগবালাই প্রাথমিক চিকিৎসা ও শরীর চর্চা বা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখার দিকে মনোযোগী হবে। দ্বিতীয়ত তারা নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা শিখতে শুরু করবে। সময়ানুবর্তিতাও শারীরিক শিক্ষার একটি অন্যতম পাঠ। তৃতীয়ত শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমেই শিশুদের ক্রীড়া প্রতিভার বিকাশ শুরু হবে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসবে দেশের বরণ্যে ক্রীড়াবিদ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি শরীর চর্চা ও খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থাকে তা হলে বয়ঃসন্ধিক্ষণে ছেলে মেয়েরা বিপথগামী কম হবে।