রিবা ও সুদের মধ্যে পার্থক্য

রিবাঃ

রিবার আভিধানিক অর্থ হলো- বৃদ্ধি, আধিক্য, পরিবর্ধন, বেশি, স্ফীত, বিকাশ ইত্যাদি।যা আবার উশুরি হিসেবেও পরিচিত, তা হল একটি আরবি শব্দ, যা ইসলামী পরিভাষায় সুদকে বোঝায়। ইসলামী শরীয়াহ মতে, লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীয়াহ সম্মত কোনোরুপ বিনিময় ব্যতীত মূলধনের উপর অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলে। তাফসিরবিদ ইবনে জারীর মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন, জাহেলিয়াহ আমলে প্রচলিত ও কুরআনে নিষিদ্ধ ‘রিবা’ হল কাউকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ দিয়ে মূলধনের অতিরিক্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করা। আরবেরা সে যুগে তা-ই করতো এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সুদ বাড়িয়ে দেবার শর্তে মেয়াদ বাড়িয়ে দিত।

সুদঃ

সুদ ও মুনাফা এক নয়। সুদ হচ্ছে ঋণকৃত অর্থের উপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিশ্চিত সুনির্দিষ্ট অতিরিক্ত পাওনা । অর্থাৎ সুদের সাথে ‘নিশ্চিত’ এবং ‘সুনির্দিষ্ট’ শব্দ দুটির সম্পর্ক রয়েছে । যেমন আপনি কারো নিকট হতে ২০% সুদে ১,০০০ টাকা ঋণ নিলেন । এই ঋণকৃত টাকা আপনি ব্যবসায় খাটাতে পারেন , আবার শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন , আবার ভোগে ব্যয় করতে পারেন । এই ১,০০০ টাকা নিয়ে আপনি যাই করেন না কেন , বছর শেষে ঋণ প্রদানকারীকে ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে । এক্ষেত্রে ঋণ প্রদানকারী নিশ্চিত জানে যে , বছর শেষে আপনার নিকট হতে সে নির্দিষ্ট ২০০ টাকা পাবে । এখানে ২০০ টাকা হল সুদের পরিমাণ , যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

রিবা ও সুদের মধ্যে পার্থক্য:

রিবার আভিধানিক অর্থ হলো- বৃদ্ধি, আধিক্য, পরিবর্ধন, বেশি, স্ফীত, বিকাশ ইত্যাদি।যা আবার উশুরি হিসেবেও পরিচিত। রিবা ও সুদের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

কুরআন মজীদে যে সব বিষয়কে ‘রিবা’ শব্দটি হারাম ঘোষনা করা হয়েছে, তাকে আমরা উর্দু এবং বাংলা ভাষার সংকীর্ণ শব্দ-ভান্ডারের কারণে সাধারণ ‘সুদ’ বলে ভাষান্তর করে থাকি। ফলে সকলে বোঝে যে, রিবা আর সুদ একই জিনিস। কিন্তু আসলে তা নয়। বরং রিবা হলো প্রশস্ত অর্থবোধক একটি শব্দ। যার পরিসর অত্যন্ত বিস্তৃত। প্রচলিত সুদ তার একটা প্রকার মাত্র। সুদ হচ্ছে ঋণকৃত অর্থের উপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিশ্চিত সুনির্দিষ্ট অতিরিক্ত পাওনা ।

অর্থাৎ সুদের সাথে ‘নিশ্চিত’ এবং ‘সুনির্দিষ্ট’ শব্দ দুটির সম্পর্ক রয়েছে । যেমন আপনি কারো নিকট হতে ২০% সুদে ১,০০০ টাকা ঋণ নিলেন । এই ঋণকৃত টাকা আপনি ব্যবসায় খাটাতে পারেন , আবার শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন , আবার ভোগে ব্যয় করতে পারেন । এই ১,০০০ টাকা নিয়ে আপনি যাই করেন না কেন , বছর শেষে ঋণ প্রদানকারীকে ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। এটা আবার রিবার ক্ষেত্রেও অন্তর্ভুক্ত আছে। শুধু এটাকেই রিবা বলে না। বরং রিবার ক্ষেত্রে আরও বিষয় রয়েছে। রিবাতে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত এমন অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যার মধ্যে
ঋণের কোন বিষয় নেই। জাহেলী যুগে আমরা যেটাকেই সুদ বলি সেটাকেই তারা রিবা ধারনা করতো।অথাৎ দশ টাকা ঋণ দিয়ে বার টাকা আদায় করা। রাসূল (সা:) রিবার অর্থ সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিয়ে এমন সব লেনদেনকেও রিবার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন, যার মধ্যে ঋণের কোন ব্যাপারেই নাই।

তাফসিরবিদ ইবনে জারীর মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন, জাহেলিয়াহ আমলে প্রচলিত ও কুরআনে নিষিদ্ধ ‘রিবা’ হল কাউকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ দিয়ে মূলধনের অতিরিক্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করা। আরবেরা সে যুগে তা-ই করতো এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সুদ বাড়িয়ে দেবার শর্তে মেয়াদ বাড়িয়ে দিত। রিবা দুই প্রকার যথা- (১) রিবা দুয়ুন (২) রিবা বুয়ু

রিবা দুয়ুন হলো অর্থের মূল পরিমাণের উপরে ও বাহিরে অন্যায্য উপরি গ্রহণ (যে কোনো প্রকার ঋণ কিংবা নগদ)। আর রিবা বুয়ু হলো বাণিজ্য ও বিনিময় চুক্তিতে সংঘটিত হয় যাতে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণীর পণ্যের (স্বর্ণ, রূপা, খেজুর, ইত্যাদি) ক্ষেত্রে একই জিনিসের ও একই প্রকারের মালামালের অসম বিনিময় ঘটে।