শিলা ও খনিজের মধ্যে পার্থক্য

শিলা ও খনিজের পার্থক্য বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উল্লেখ করা হলো। প্রাকৃতিক উপায়ে কতকগুলো মৌলিক উপাদান পরস্পর মিলিত হয়ে যে পদার্থে পরিণত হয় তাকে খনিজ বলে। আবার দুই বা ততোধিক খনিজ প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যে পদার্থে পরিণত হয় তাকে শিলা বলে।

শিলা(Rock):

ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রকার খনিজ ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি একীভূত হয়ে যে কাঠামো গঠন করে তাকে শিলা (Rock) বলে।

শিলা কালক্রমে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে ভূত্বক গঠিত হয়েছে।
অর্থাৎ শিলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার খনিজের সমন্বয়ে সৃষ্ট ভূত্বক গঠনকারী পদার্থ। যেমনঃ পাথর, নুড়ি, কাঁকর, বালি, পলি, কর্দম ইত্যাদ।

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০০ খনিজ আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২ ডজন খনিজ পৃথিবীর প্রায় সব শিলা গঠন করেছে। সাধারণত শিলার নির্দিষ্ট আকার, রাসায়নিক সংস্থিতি ও সংকেত নেই। এর বৈশিষ্ট্য ধারণকৃত খনিজের বৈশিষ্ট্য় ও গুণাগুণের উপর নির্ভরশীল।

শিলা নিয়ে অধ্যয়ন এবং গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যাকে শৈলতত্ত্ব বা পেট্রোলজি (petrology) বলে, যা ভূতত্ত্বের একটি প্রধান শাখা।

খনিজ(Minerals):

আদিশিলা ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক অবক্ষয়ের ফলে চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজিত হয়ে নির্দিষ্ট আণবিক গঠন ও রাসায়নিক সংস্থিতি সম্পন্ন কঠিন বস্তুতে পরিণত হলে তাকে খনিজ (Minerals) বলে।

অর্থাৎ শিলা বস্তু কালক্রমে ভেঙ্গে অথবা এক বা একাধিক মৌল একত্রে যুক্ত হয়ে সুস্থিত আণবিক গঠন, রাসায়নিক বিন্যাস ও জ্যামিতিক আকৃতি বিশিষ্ট খনিজ গঠিত হয়।

এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ১১৮ টি মৌলের মধ্যে মাত্র ১৫ টি উপাদান দ্বারা পৃথিবীর প্রায় ৯৯ শতাংশের বেশি অংশ গঠিত। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি খনিজ যেমনঃ কোয়ার্টজ(SiO2), অর্থক্লেজ (KAlSi3O8), ক্যালসাইট (CaCO3), ম্যাগনেসাইট (MgCO3), অ্যালুমিনা (Al2O3), স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা, হীরক ইত্যাদি।

শিলা ও খনিজের মধ্যে পার্থক্যঃ

ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রকার খনিজ ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি একীভূত হয়ে যে কাঠামো গঠন করে তাকে শিলা (Rock) বলে। শিলা ও খনিজের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রকার খনিজ ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি একীভূত হয়ে যে কাঠামো গঠন করে তাকে শিলা (Rock) বলে। অন্যদিকে আদিশিলা ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক অবক্ষয়ের ফলে চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজিত হয়ে নির্দিষ্ট আণবিক গঠন ও রাসায়নিক সংস্থিতি সম্পন্ন কঠিন বস্তুতে পরিণত হলে তাকে খনিজ (Minerals) বলে।

২। বিভিন্ন খনিজ মিলিত হয়ে শিলা গঠন করে। অপরদিকে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান মিলিত হয়ে খনিজ গঠন করে।

৩। শিলার কোন রাসায়নিক সংস্থিতি ও সংকেত নেই। অপরদিকে খনিজের রাসায়নিক সংস্থিতি ও সংকেত আছে।

৪। শিলা সহজে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। অপরদিকে খনিজ সহজেই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

৫। আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা কেলাসিত হয়, কিন্তু পাললিক শিলা কেলাসিত হয় না। অপরদিকে কোন কোন খনিজ কেলাসিত হয়।

৬। শিলার ভৌত গুণাবলির মধ্যে সুনির্দিষ্টতা কম। অপরদিকে প্রত্যেক খনিজে নির্দিষ্ট ভৌত গুণাবলি আছে।

৭। শিলা কালক্রমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। অপরদিকে খনিজ সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।

৮। শিলার আপেক্ষিক গুরুত্ব কম। অপরদিকে খনিজের আপেক্ষিক গুরুত্ব শিলার থেকে বেশি।

৯। কয়েকটি শিলার উদাহরণ- পাথর, নুড়ি, কাঁকর, বালি, পলি, কর্দম ইত্যাদ। অপরদিকে কয়েকটি খনিজের উদাহরণ- কোয়ার্টজ(SiO2), অর্থক্লেজ (KAlSi3O8), ক্যালসাইট (CaCO3), ম্যাগনেসাইট (MgCO3), অ্যালুমিনা (Al2O3), স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা, হীরক ইত্যাদি।