সমাজকর্ম ও নৃ-বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য

সমাজকর্ম (Social Work):

সমাজকর্ম বলতে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার সমাজসেবামূলক কর্মতৎপরতাকে বুঝায়, যা ব্যক্তি, দল, সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের সম্পদ, সামর্থ্য ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। সমাজকর্ম মূলত মানুষকে সাহায্য করার একটি পেশা। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে যাতে তারা নিজস্ব সামর্থ্য ও সম্পদের ব্যবহারের মাধমে নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে।

এখানে উল্লেখ্য যে, সমাজকর্মের অস্তিত্ব এবং সমাজকর্মের কর্মকান্ড এক সামাজিক ব্যবস্থার ভিতর থেকেই পরিচালিত হয়। মূলত এ জন্যই সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান পরষ্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে যাতে করে তারা সাহায্যার্থীর কল্যাণে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।

নৃ-বিজ্ঞান (Anthropology):

আক্ষরিক অর্থে নৃবিজ্ঞান (Anthropology) মানুষ বিষয়ক বিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো অতীত ও বর্তমানের মানব সমাজ ও মানব আচরণকে অধ্যয়ণ করা । কিন্তু মানুষ বিষয়ক অন্যান্য বিজ্ঞানগুলির চেয়ে এটির পরিধি ব্যাপকতর। বিশ্বের সকল অঞ্চলের, সংস্কৃতির মানুষকে নিয়ে এই বিজ্ঞানে গবেষণা করা হয়। লক্ষ কোটি বছর ধরে মানুষের বিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের গবেষণাও নৃবিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। নৃবিজ্ঞানে মানুষকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গবেষণা করা হয়।

বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ ও তাদের সব রকমের অভিজ্ঞতা নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। নৃবিজ্ঞানীরা কোন একটি বিশেষ মানব সম্প্রদায়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে ও সেগুলি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা সামাজিক রীতিনীতি হতে পারে।

সমাজকর্ম ও নৃ-বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যঃ

নৃ-বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রের সাথেই সমাজকর্মের ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। সুতরাং দুটিই একে অপরের সহযোগী বলা যায়। গভীর সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও দুটি বিজ্ঞানের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ-

১। নৃ-বিজ্ঞান মূলত তাত্ত্বিক বিজ্ঞান। অন্যদিকে, সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক বা ফলিত বিজ্ঞান।

২। নৃ-বিজ্ঞানে মূলত গবেষণা কার্যে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে, সমাজকর্মে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সাক্ষাৎকার, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দেয়া হয় এবং তথ্য সংগ্রহে পরিসংখ্যান ও প্রশ্নমালার সাহায্য নেয়া হয়।

৩। নৃ-বিজ্ঞানে কখনও মানুষের জৈবিক বৈশিষ্ট্য কখনও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে বড় করে দেখা হয়। অন্যদিকে, সমাজকর্মে সবসময়ই মানুষের সামষ্টিক বৈশিষ্ট্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।

৪। নৃ-বিজ্ঞানের বহু শাখা-প্রশাখা রয়েছে, যা সমাজের প্রায় প্রতিটি দিকেই বিস্তৃত। অন্যদিকে, সমাজকর্মের তেমন কোনো শাখা-প্রশাখা নেই। অর্থাৎ নৃ-বিজ্ঞানের পরিধি সমাজকর্মের তুলনায় ব্যাপক।

৫। নৃ-বিজ্ঞান অতীত নিয়েই বেশি পর্যালোচনা করে। অন্যদিকে, সমাজকর্মের বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতি আগ্রহ বেশি।