তৎসম ও বাংলা উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য

বাংলা উপসর্গঃ
বাংলা ভাষায়, উপসর্গ হল একধরণের শব্দ প্রাদেশিক, সময়, অবস্থা, ক্রিয়ার প্রতিটি ধারণার সাথে যোগ হয়ে এসে শব্দের অর্থ বা শব্দের ধারণার যে বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি করে তাকে “উপসর্গ” বলা হয়। বাংলা ভাষায়, উপসর্গ সাধারণভাবে মূল শব্দের আগে যুক্ত হয় এবং মূল শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে। এটি শব্দের ব্যাকরণিক গঠন সহায়ক করে এবং ভাষার বহুতান্ত্রিক ব্যবহার সম্ভব করে।

উদাহরণস্বরূপ, “অবিশ্বাস” শব্দে “অ-” হল উপসর্গ এবং “বিশ্বাস” হল মূল শব্দ। “অবিশ্বাস” মূলতঃ কোনও কিছুর ব্যাপারে বিশ্বাস না করা অথবা নির্ভর না করা এমন অর্থ দেয়।

উপসর্গ শব্দগুলি বাংলা ভাষার শব্দের মূল বর্ণমালায় বদলাবে এবং মূল শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে। এই উপসর্গ শব্দগুলি বাক্যের অর্থ বৃদ্ধি করতে ব্যবহার হয়।

তৎসম উপসর্গঃ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনেক সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত অবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ঠিক তেমনি বহু সংস্কৃত উপসর্গও বাংলা ভাষায় শব্দ গঠন করতে ব্যবহার করা হয়, এগুলো সংস্কৃত উপসর্গ। যেসব উপসর্গ সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে সেসব উপসর্গকে বলা হয় তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ।

যে সংস্কৃত অবায়বাচক শব্দাংশগুলো শব্দের পূর্বে বসে শব্দের অর্থের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে এই শব্দাংশগুলোকেই সংস্কৃত উপসর্গ বলে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত উপসর্গ বিশটি। এগুলো হলো- প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব, অনু, নির, দূর, বি, অধি, সু, উদ, পরি, প্রতি, অভি, অতি, অপি, উপ, আ।

তৎসম ও বাংলা উপসর্গের মধ্যে পার্থক্যঃ
তৎসম ও বাংলা উপসর্গ দুটি ভাষার মধ্যে শব্দ গঠনের দুটি মৌলিক উপাদান। এই দুটি উপসর্গের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে, যা নিম্নরূপে বর্ণনা করা যাক:

১. বাংলা ভাষায়, উপসর্গ হল একধরণের শব্দ প্রাদেশিক, সময়, অবস্থা, ক্রিয়ার প্রতিটি ধারণার সাথে যোগ হয়ে এসে শব্দের অর্থ বা শব্দের ধারণার যে বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি করে তাকে “উপসর্গ” বলা হয়। অন্যদিকে, যে সংস্কৃত অবায়বাচক শব্দাংশগুলো শব্দের পূর্বে বসে শব্দের অর্থের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে এই শব্দাংশগুলোকেই সংস্কৃত উপসর্গ বলে।

২. তৎসম উপসর্গ ব্যবহার করে শব্দের প্রাথমিক অর্থ প্রকাশ করে, আসল শব্দটির অর্থ প্রদর্শন করে। উদাহরণস্বরূপ, “অশক্ত” শব্দে উপসর্গ “অ-” তৎসম উপসর্গ, এবং আসল শব্দটি হলো “শক্ত”। এখানে উপসর্গটি প্রাথমিক অর্থ ব্যক্ত করছে।

অন্যদিকে, বাংলা উপসর্গ ব্যবহার করে শব্দের অর্থটি পরিবর্তন করে বা একটি নতুন অর্থ যোগ করে। উদাহরণস্বরূপ, “অসুস্থ” শব্দে উপসর্গ “অ-” বাংলা উপসর্গ, এবং আসল শব্দটি হলো “সুস্থ”। উপসর্গটি শব্দের অর্থটি পরিবর্তন করে এবং নেতিবাচক অর্থ যোগ করে।

৩. তৎসম উপসর্গ সাধারণভাবে শব্দের সাথে যুক্ত হয়, এবং তাদের বাংলা বর্ণমালার বাইরে আসে। উদাহরণস্বরূপ, “অনুভব” শব্দে “অ-” তৎসম উপসর্গ। অন্যদিকে, বাংলা উপসর্গ হলেও, এটি শব্দের সাথে যুক্ত হয় এবং তাদের বাংলা বর্ণমালায় একটি নতুন শব্দ হিসেবে বসে। উদাহরণস্বরূপ, “অবস্থা” শব্দে “অ-” বাংলা উপসর্গ।

৪. বাংলা উপসর্গ সাধারণত বাংলা শব্দের আগে বসে। অন্যদিকে, তৎসম উপসর্গ সাধারণত তৎসম ধাতু বা শব্দের আগে বসে। বাংলা উপসর্গের মধ্যে আ, সু, বি, নি- এ চারটি উপসর্গ তৎসম উপসর্গেও পাওয়া যায়।

৫. বাংলা উপসর্গযুক্ত শব্দের বাক্যে প্রয়োগ হল- আমি অবেলাতে দিলাম পাড়ি অথৈ সায়রে।’ অঘারাম বাস করে অজ পাড়াগায়ে। ভিক্ষার চাল কাড়া আর আকাড়া। আকাঠার নায়ে দিলাম কাঁঠালের গলুই। ‘মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে। ‘ ইতিহাস কথা কয়।

অন্যদিকে, তৎসম উপসর্গযুক্ত শব্দের বাক্যে প্রয়োগ হল- কালের প্রভাবে নিয়মের পরিবর্তন ঘটেছে। ওসমান রণক্ষেত্রে বীরত্বের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেও পরাজিত হলেন। সমাগত সুধিজনকে সাদর অভিনন্দন জানানো হল।