বাণিজ্য এবং লেনদেন উদ্বৃত্তের মধ্যে পার্থক্য

বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (Balance of Trade) :
কোনাে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে একটি দেশের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলির দ্রব্যগত ও সেবাগত বানিজ্যিক সম্পর্ককে যখন উদ্বর্তপত্রের আকারে প্রকাশ করা হয়, তাকে বানিজ্যি উদ্বৃত্ত বলে। অর্থাৎ একটি দেশের মোট আমদানির তুলনায় মোট রপ্তানির পরিমাণ যখন বেশি হয়, তখন তাকে উদ্বৃত্ত বাণিজ্য বলে। এক্ষেত্রে অর্থের আন্তঃগমন বেশি হয়ে থাকে, অর্থাৎ রপ্তানি বেশি হওয়ার কারণে দেশে বেশি অর্থ প্রবেশ করে। মূল্য অনুসারে বাণিজ্য উদ্বৃত্তের তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হয়। i.অনুকূল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (যদি X>M) ii.প্রতিকূল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (যদি X<M) iii.ভারসাম্য বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (যদি X=M)। যেখানে, X= রপ্তানি মূল্য M= আমদানি মূল্য। বাণিজ্য উদ্বৃত্তে দৃশ্য রপ্তানি ও দৃশ্য আমদানি দেখানো হয়।

লেনদেন উদ্বৃত্ত (Balance of Payments) :
কোনাে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলির সব ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেন ও দেনাপাওনা একটি উদ্বর্তপত্রের আকারে প্রকাশ করা হয়, তাকে লেনদেন উদ্বৃত্ত বলে। লেনদেন উদ্বৃত্তে মোট দেনা ও পাওনা পরস্পর সমান (R=P) হয় বলে লেনদেন উদ্বৃত্তে সর্বদা ভারসাম্য বিরাজ করে। আর ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় তাহলে i. অনুকূল লেনদেন উদ্বৃত্ত (যদি R>P) ii. প্রতিকূল লেনদেন উদ্বৃত্ত (যদি R<P)। যেখানে, R= মোট প্রাপ্তি এবং P= মোট প্রদান।

লেনদেন উদ্বৃত্তে চলতি খাতের পাওনার দিকে দৃশ্য রপ্তানি, অদৃশ্য রপ্তানি, প্রতিদানহীন পাওনা এবং দেনার হিসাবে দৃশ্য আমদানি, অদৃশ্য আমদানি এবং প্রতিদানহীন দেনা অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং মূলধনি খাতে পাওনার হিসাবে মূলধনি পাওনা এবং দেনার হিসাবে মূলধনি দেনা অন্তর্ভুক্ত থাকে।

বাণিজ্য এবং লেনদেন উদ্বৃত্তের মধ্যে পার্থক্যঃ

বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এবং লেনদেন উদ্বৃত্ত দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয় না। এই দুটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্য এবং লেনদেন উদ্বৃত্তের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১. কোনাে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে একটি দেশের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলির দ্রব্যগত ও সেবাগত বানিজ্যিক সম্পর্ককে যখন উদ্বর্তপত্রের আকারে প্রকাশ করা হয়, তাকে বানিজ্যি উদ্বৃত্ত বলে। অন্যদিকে, কোনাে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলির সব ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেন ও দেনাপাওনা একটি উদ্বর্তপত্রের আকারে প্রকাশ করা হয়, তাকে লেনদেন উদ্বৃত্ত বলে।

২. বাণিজ্য উদ্বৃত্তে একটি দেশের শুধুমাত্র চলতি খাতের দৃশ্য রপ্তানি ও দৃশ্য আমদানি এবং অদৃশ্য রপ্তানি ও অদৃশ্য আমদানি পাওনা ও দেনার হিসাবটি দেখানো হয়। অন্যদিকে, লেনদেন উত্তে একটি দেশের চলতি ও মূলধনি খাতের পাওনা ও দেনার হিসাব দেখানাে হয়।

৩. বাণিজ্য উদ্বৃত্ত একটি খণ্ড বা আংশিক বিষয়। এটি বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি অংশ মাত্র। অন্যদিকে, লেনদেন উদ্বৃত্ত একটি অখণ্ড বা বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি সমগ্র অংশ।

৪. মূল্য অনুসারে বাণিজ্য উদ্বৃত্তের তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হয়। i.অনুকূল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (যদি X>M) ii.প্রতিকূল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (যদি X<M) iii.ভারসাম্য বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (যদি X=M)। যেখানে, X= রপ্তানি মূল্য M= আমদানি মূল্য।

অন্যদিকে, লেনদেন উদ্বৃত্তে মোট দেনা ও পাওনা পরস্পর সমান (R=P) হয় বলে লেনদেন উদ্বৃত্তে সর্বদা ভারসাম্য বিরাজ করে। আর ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় তাহলে i. অনুকূল লেনদেন উদ্বৃত্ত (যদি R>P) ii. প্রতিকূল লেনদেন উদ্বৃত্ত (যদি R<P)। যেখানে, R= মোট প্রাপ্তি এবং P= মোট প্রদান।

৫. বাণিজ্য উদ্বৃত্ত প্রত্যক্ষভাবে জাতীয় আয়কে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে, লেনদেন উদ্বৃত্ত ঋণের সঙ্গে যুক্ত থাকে, কারণ লেনদেন উদ্বৃত্ত দেশের দায় গ্রহণ করে। লেনদেন উদ্বৃত্ত এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রতিফলিত হয়।

৬. বাণিজ্য উদ্বৃত্তে দৃশ্য রপ্তানি ও দৃশ্য আমদানি দেখানো হয়। অন্যদিকে, লেনদেন উদ্বৃত্তে চলতি খাতের পাওনার দিকে দৃশ্য রপ্তানি, অদৃশ্য রপ্তানি, প্রতিদানহীন পাওনা এবং দেনার হিসাবে দৃশ্য আমদানি, অদৃশ্য আমদানি এবং প্রতিদানহীন দেনা অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং মূলধনি খাতে পাওনার হিসাবে মূলধনি পাওনা এবং দেনার হিসাবে মূলধনি দেনা অন্তর্ভুক্ত থাকে।