সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য

সমাস ও সন্ধির মধ্যকার পার্থক্য: সমাস ও সন্ধি বাংলা ভাষায় শ্রুতিমধুরতা ও সংক্ষিপ্ততা আনয়ন করে। এ দুটির মধ্যে পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো।

সমাস

বাংলা শব্দ গঠনে সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বক্তব্যকে সংক্ষেপ করার মাধ্যমে ভাষায় সৌন্দর্য ও মাধুর্য বৃদ্ধি করে সমাস। বাক্যের মধ্যে অনাবশ্যক পদের ব্যবহার না করে সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহারের মাধ্যমে বক্তব্য বিষয়টিকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করা হয়। ফলে ভাষা হয় সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর ও প্রাঞ্জল।
সমাস একটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ একাধিক পদের এক পদে মিলন, সংকোচন বা সংক্ষেপণ। পরস্পর অর্থসংগতিপূর্ণ দুই বা ততোধিক পদ মিলে এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। যেমন—সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন।

সন্ধি

সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। আমরা যখন কথা বলি তখন অনেক সময় পাশাপাশি শব্দের দুটি ধ্বনি মিলিত হয়ে যায় বা আংশিকভাবে মিলিত হয় । এই মিলনের নামই সন্ধি । যেমন- বিদ্যা +আলয় = বিদ্যালয় বা হিম+আলয় = হিমালয়। প্রথম শব্দটিতে বিদ্যা শব্দের আ ও আলয় শব্দের আ পরস্পর যুক্ত হয়ে একঠি আ এ পরিণত হয়েছে ও বিদ্যালয় শব্দটি গঠন হয়েছে। পরের শব্দটিতে হিম এর অ ও আলয় এর আ যুক্ত হয়ে আর ধ্বনি সৃষ্টি করেছে ও হিমালয় শব্দটি গঠন করেছে। এখন আমরা বলতে পারি পাশাপাশি দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে ।

সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্যঃ

১. পাশাপশি দুটি ধ্বনি বা বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। যেমন—বিদ্যা+আলয়=বিদ্যালয়। পক্ষান্তরে পরস্পর অর্থসংগতিপূর্ণ দুই বা ততোধিক পদ মিলে এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। যেমন—সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন।

২. সন্ধিতে প্রতিটি শব্দের অর্থ বজায় থাকে। পক্ষান্তরে সমাসে কখনো পূর্বপদ, কখনো পরপদ, কখনো উভয় পদ ও কখনো অন্য পদের অর্থ প্রাধান্য পায়। যেমন—চাঁদের ন্যায় মুখ = চাঁদমুখ।

৩. সন্ধির মিলন মূলত উচ্চারণগত বা ধ্বনির মিলন। পক্ষান্তরে সমাসে বাক্যের অন্তর্গত পদগুলোর মধ্যে মিলন ঘটে।

৪. সন্ধিতে পদের বিভক্তি লোপ পায় না, বরং সংকুচিত হয়। পক্ষান্তরে সমাসে সাধারণত পূর্বপদের বিভক্তি চিহ্ন লোপ পায়। যেমন—দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত।

৫. সন্ধিতে শব্দগুলো ক্রমপরিবর্তিত না হয়ে যুক্ত হয়। পক্ষান্তরে সমাসে পদক্রম বিভিন্ন সময় নানা রূপ ধারণ করে।

৬. সন্ধিতে দুই বর্ণের মধ্যে যোগ চিহ্ন (+) ব্যবহার করতে হয়। পক্ষান্তরে সমাসে দুই পদের মধ্যে অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়।

৭. সন্ধি প্রধানত তিন প্রকার। যথা : স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি। পক্ষান্তরে সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথা : দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, কর্মাধারয়, তত্পুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব।