বাজী চুক্তি ও বীমা চুক্তির মধ্যে পার্থক্য

বাজী চুক্তি (Agreement of wagering):
ভবিষ্যতে কোন ঘটনা ঘটা বা না ঘটা বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত মনে করে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ/অর্থ দেয়ার সম্মতিকে বাজী ধরায় চুক্তি বলে। এক্ষেত্রে একপক্ষ হারবে, অপরপক্ষ জিতবে। বাজী চুক্তির দু’টি বৈশিষ্ট্য হলো ঃ দু’পক্ষ ভবিষ্যত ঘটনা নিশ্চিত মনে করে সম্মতিবদ্ধ হয় এবং একপক্ষ হারবে, অপর পক্ষ জিতবে। চুক্তি আইনের ৩০ ধারা মতে বাজী চুক্তি বাতিল বলে অপর পক্ষকে তা পালনে বাধ্য করতে মামলা করা যায় না।

বীমা চুক্তি (Contract of insurance):
নির্দিষ্ট কোন ঘটনা ঘটনার ফলে এক পক্ষে ক্ষতি হলে অপর পক্ষকর্তৃক নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতিই বীমা চুক্তি। ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ তার ক্ষতির বিপরীতে ক্ষতিপূরণকারীকে নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম প্রদান করে থাকে। বীমা চুক্তি আইনের দৃষ্টিতে কল্যাণকর, বৈধ এবং বলবৎযোগ্য। এরূপ চুক্তিতে একপক্ষ তার জীবন বা সম্পত্তির সম্ভাব্য ঝুঁকি প্রিমিয়াম প্রদানপূর্বক অন্যের ওপর অর্পণ করে এবং অপরপক্ষ এর বিনিময়ে অন্যের ঝুঁকি গ্রহণ করে।

ফলে বীমাকৃত কারণে ক্ষতির উদ্ভব হলে ঝুঁকি গ্রহণকারী পক্ষ অর্থ প্রদানে বাধ্য থাকে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি গ্রহণকারী পক্ষকে বীমাকারী (Insurer) এবং প্রিমিয়াম প্রদানকারী পক্ষকে বীমাগ্রহীতা (Insured or Policy holder) বলা হয়ে থাকে।

বাজী চুক্তি ও বীমা চুক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ
বাজী ও বীমা চুক্তির মধ্যে কোন প্রকার সাদৃশ্য নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৈশাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে বাজী ও বীমা চুক্তির মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

১. ভবিষ্যতে অনিশ্চিত কোন ঘটনা ঘটলে বা না ঘটলে নিশ্চিত ঘটনার উপর ভিত্তি করে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের সম্মতিকে বাজী চুক্তি বলে। অন্যদিকে, বীমা চুক্তি হলো কোন নির্দিষ্ট ঘটনা সংঘটিত হওয়া সাপেক্ষে এক পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেজন্য অপরপক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের স্বীকৃতি।

২. বাজী চুক্তিতে বীমাযোগ্য স্বার্থ থাকা আবশ্যকীয় নয়। অন্যদিকে, বীমা চুক্তির ক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই পরস্পর স্বার্থ বিদ্যমান থাকে।

৩. বাজী চুক্তিতে দুই পক্ষের ঝুঁকি বর্তমান থাকে। অন্যদিকে, বীমা চুক্তিরক্ষেত্রে বীমাকারীর দায়িত্ব হলো বীমা গ্রহীতার ঝুঁকি বহন করা।

৪. বাজী চুক্তিতে কোন প্রতিদান নেই। অন্যদিকে, বীমা চুক্তিতে প্রতিদান থাকে যা প্রিমিয়াম হিসেবে পরিচিত।

৫. চুক্তির প্রকৃতি বাজী চুক্তি হলো অবিশ্বাস ও ফাঁকি বাজির চুক্তি। অন্যদিকে, বীমা চুক্তি হলো চূড়ান্তসদ্বিশ্বাসের চুক্তি।

৬. বাজী চুক্তির উদ্দেশ্য জুয়া খেলা। কোন পক্ষের স্বার্থ রক্ষা নয়। অন্যদিকে, বীমা চুক্তির উদ্দেশ্য বীমাগ্রহীতার স্বার্থ রক্ষা করা।

৭. বাজী চুক্তির দ্বারা সার্বিকভাবে জনগণের কোন কল্যাণ নেই। আইনত অবৈধ ও বাতিল বলে গণ্য। অন্যদিকে, বীমা চুক্তি জনহিতকর এবং আইনের চোখে সম্পূর্ণ বৈধ।

৮. বাজী চুক্তি ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের কিস্তিতে অর্থ প্রদানের কোন বিধি-বিধান থাকে না। অন্যদিকে, বীমা চুক্তিতে বীমা প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় এবং তা চুক্তি মোতাবেক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়।

৯. বাজী সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। এখানে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ব্যবহৃত হয় না। অন্যদিকে, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে বীমা চুক্তি গঠিত হয়।