নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ একটি ধর্ম। ইসলামের সব বিষয়ে নির্দিষ্ট হুকুম রয়েছে। অন্য বিষয়গুলোর মতো পুরুষ ও নারীর নামাজের পদ্ধতিগত পার্থক্যের বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়।

সালাত পদ্ধতিতে মহিলাদের ক্ষেত্রে মৌলিক ভাবে দুটি পার্থক্য রয়েছে:

১। সতর কেন্দ্রিক, অর্থাৎ যতটুকু সম্ভব গোপনীয়তার মাধ্যমে মহিলারা সালাত আদায় করবে। আল্লাহ তা’লা বলেন-

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

“তোমরা গৃহাভন্তরে অবস্থান করবে-মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সুরা আল আহযাব- আঃ নং ৩৩)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন “মহিলাদের নিজকক্ষে নামায পড়া বাড়িতে নামায পড়ার তুলনায় উত্তম, আর নির্জন ও অভ্যান্তরিন স্থানে নামায পড়া ঘরে নামায পড়া থেকে উত্তম। ‘‘ [হাদীসটি সহীহ, আবু দাউদ ১/৩৮৩- , মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮]

হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ- “ওরনা বা চাদর ব্যতিত মহিলাদের নামায কবুল হবেনা।” [আবু দাউদ ১/৪২১ তিরমিজী ২/২১৫-মুসতাদরাকে হাকিম ১/৫১]

হাকেম আবু আব্দিল্লাহ নিসাপুরী (রঃ) স্বীয় কিতাব মুসতাদরাক লিল হাকেমে (৯/২৫১) বলেন মুসলিম (রঃ) এর হাদীস গ্রহন করার শর্ত অনুযায়ী হাদীসটি সহীহ । হাকেম (রঃ) এর উক্ত মতকে ইমাম যাহাবী (রঃ) সমর্থন করেছেন। উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস এ কথার উপর সুস্পষ্ট প্রমান বহন করে মহিলাদের সব সময় পর্দার আড়ালেই থাকা প্রয়োজন । আর নামায ইসলামের অন্যতম একটি বিধান সুতরাং তাহা অধিক পর্দায় হবে ইহাই বিবেকের দাবী।

উপরে আমরা দেখলাম পর্দার ক্ষেত্রে নামাজ পড়ার সময় পুরুষ ও মহিলাদের কি পার্থক্য আছে , এখন আমরা দেখব নামাজ-এর রুকন বা পড়ার পদ্ধতির ক্ষেত্রে পুরুষ মহিলাদের কি পার্থক্য আছে :

২। নামাজ-এর রুকন বা পড়ার পদ্ধতিতে মহিলার পুরুষদের পার্থক্য

চার ধরনের দলীলের আলোকে সংক্ষিপ্ত ভাবে পদ্ধতিগত এই পার্থক্য তুলে ধরা হলো

১। হাদীস শরীফের আলোকে।

২। সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য ও কর্মের আলোকে।

৩। তাবেয়ী ইমাম গনের ঐক্যমত্যের আলোকে।

৪। চার ইমামের ঐক্যমত্যের আলোকে।

১। হাদীস শরীফের আলোকেঃ

নামাজী মহিলার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বাধা দিবার লক্ষে করণীয় কি ? রসুল (সা:) এ প্রসংগে বলেন: পুরুষদের জন্য হলো তাসবীহ বলা আর মহিলাদের জন্য হাতে আওয়াজ করা। (সহীহ বুখারী ১/৪০৩)

ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব (রঃ) বলেন, একবার রাসুল (সঃ) নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে ( সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন যখন সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে, কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (কিতাবুল মারাসিল-ইমাম আবু দাউদ – পৃঃ১১৭)

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস শায়েখ শুয়াইব আরনাউত (রঃ) হাদীসটির সুত্র সম্পর্কে বলেন, বণর্না কারী প্রত্যেক রাবী সর্ব্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য রাবীদের অন্তর্ভুক্ত সুতরাং হাদীসটি “সহীহ”। ( তালীক আলা মারাসিলে আবী দাউদ পৃঃ ১১৭ )

আহলে হাদীসে স্বীকৃত শীর্ষস্থানীয় আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ‘‘আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন উল্লেখিত হাদীস সকল ইমামের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসাবে পেশ করার যোগ্য। আর এ হাদীসটির উপরই আহলে সুন্নত ও চার মাযহাবসহ অন্যন্যদের আমল চলে আসছে।

উল্লেখ্যঃ- এই সব হাদীসর সমর্থনে মহিলা ও পুরুষদের নামায আদায়ের পদ্ধতিগত পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে । এমন আরো অনেক হাদীস রয়েছে । পক্ষান্তরে এগুলোর সাথে বিরোধ পুর্ন একটি হাদীস ও কোথাও পাওয়া যাবে না, যাতে বলা রয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই।

সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের আলোকেঃ

হযরত নাফেয় (রহঃ) ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন ওনাকে রাসুল (সঃ) এর যামানায় মহিলদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন : “প্রথমত তারা চার পা হয়ে বসত অত পর এক পক্ষ হয়ে বসার জন্য বলা হল।” আসারাট সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহীহ। (জামেউল মাসানীদ-ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) খঃ ১/৪০০)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ওনাকে মহিলাদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন “মহিলারা বৈঠকে আংগুল সমুহ মিলিয়ে ও সমবেত ভাবে বসবে। (এই হাদীসের সমস্‌ত রাবী সিকাহ- সুতারাং হাদীস সহীহ) (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-খঃ১/২৪২)

তাবেয়ী ইমাম গনের ঐক্যমতের আলোকেঃ

হযরত হাসান বসরী ও হযরত কাতাদা (রহঃ) বলেন, মহিলারা যখন সিজদা করবে তখন তারা যথাস্ভব জরসড় হয়ে থাকবে। অঙ্গঁ প্রত্যঙ্গঁ ফাঁকা রেখে সিজদা দিবে না, যাতে কোমর উচু হয়ে না থাকে। (সহীহ) (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক খঃ৩/১৩৭-ইবনে আবী শাইবা ১/৪২)

# কুফাবসীদের ইমামঃ- ইবরাহীম নাখয়ী (রহঃ) বলেন মহিলারা বসা অবস্থায় এক পক্ষ হয়ে বসবে । (সহীহ) (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খঃ১/৪৩)

# মক্কা বাসীদের ইমাম আতা ইবনে আবী রাবাহ (রহঃ) বর্ণনা করেন মহিলা যখন রুকুতে যাবে অত্যান্ত সংকোচিত ভাবে যাবে এবং হাতদ্বয় পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে। (সহীহ) (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৩/১৩৭)

খালেদ ইবনে লাজলাজ সিরিয়া বাসীদের ইমাম , তিনি বলেন মহিলাদের আদেশ করা হত, তারা যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে । আবরনযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়। (হাসান) (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০৫)

মোট কথা তাবেয়ী-যুগে যারা ইমাম এবং ইসলামি বিধি বিধানের ক্ষেত্রে অনুসরনীয় তাদের মতামত থেকে প্রমানিত হল যে, মহিলা ও পুরুষদের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন মনে করা সম্পুর্ন ভুল । সাহাবী ও তাবেয়ীদের মতামতের সাথে এই ধারনার কোনই মিল নেই।

চার ইমামের ফিক্বহের আলোকেঃ

ফিক্বহে হানাফীঃ- ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর অন্যতম শাগরেদ ইমাম মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হল উভয় পা এক পাশে মিলিয়ে রাখবে, পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রখবে না। (কিতাবুরল আসার ১/৬০৯) (আরো দ্রষ্টব্যঃ- হিদায়াঃ ১/১০০-১১০-১১১- ফাতওয়ায়ে শামী ১/৫০৪- ফাতওয়ায়ে আলমগীরি-১/৭৩-)।

ফিক্বহে শাফেয়ীঃ ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন ’’ আল্লাহ পাক মহিলাদের কে পুরো পুরি পর্দায় থাকার শিক্ষা দিয়েছেন । এবং রাসুল (সঃ) ও অনুরুপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হল, সিজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গেঁর সাথে অপর অঙ্গঁকে মিলিয়ে রাখবে, পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সিজদা এমন ভাবে করবে যাতে সতরের অধিক হেফাযত হয়। (যাখীরা, ইমাম কারাফী ২/১৯৩)

ফিক্বহে হাম্বলীঃ- তাকবীরে মহিলাদের হাত উঠানোর সম্পর্কে ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন হাত তুলনামুলক কম উঠাবে। ( আল মুগনী -২/১৩৯)