প্রত্যয় ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য

প্রত্যয়:

প্রত্যয় হল অর্থদ্যোতক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যারা শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন পদ গঠন করে, কখনও পদের পরিবর্তনও ঘটায়। ব্যাবহারিক প্রয়ােগের অবস্থান অনুযায়ী প্রত্যয়ের দুটি ভাগ।-কৃৎ প্রত্যয় এবং তদ্ধিত প্রত্যয়। ধাতুর সঙ্গে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয় তাদের কৃৎ প্রত্যয় এবং নাম শব্দের সঙ্গে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়, তাদের তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।

কৃৎ প্রত্যয়ের উদাহরণ – কৃ + তব্য = কর্তব্য

তদ্বিত প্রত্যয়ের উদাহরণ সুমিত্রা + ফ়ি = সৌমিত্রি।

বিভক্তি:

বিভক্তি হলো এক গুচ্ছ বর্ণ, যারা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অন্বয় সাধনের জন্য যে সকল বর্ণ যুক্ত হয়। বাক্যের মধ্যে অন্য শব্দের সাথে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্পর্ক বোঝাতে অর্থহীন কিছু লগ্নক যুক্ত হয়, এই লগ্নকগুলোই বিভক্তি বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদ এর সাথে নামপদ এর সম্পর্ক স্থাপন করে। উদাহরণ: ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

বাক্যটিতে ছাদে (ছাদ + এ বিভক্তি), মা (মা + ০ বিভক্তি), শিশুকে (শিশু + কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ + ০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে অর্থহীন বিভিন্ন লগ্নক যুক্ত হয়েছে, এগুলোই বিভক্তি।

প্রত্যয় ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ

প্রত্যয় ও বিভক্তি উভয়েই শব্দ ও ধাতুর পরে যুক্ত হয়। কিন্তু এই দুইয়ের ভূমিকা সম্পূর্ণ আলাদা। প্রত্যয় ও বিভক্তি কি ভাবে কাজ করে….

১। যে বর্ণ অথবা বর্ণসমষ্টি কোন শব্দ অথবা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে গঠন করে নতুন শব্দ তাকে প্রত্যয় বলে। অপরদিকে বাক্যের বিভিন্ন শব্দের সঙ্গে অন্বয় সাধনের জন্য নামপদ বা ক্রিয়াপদের সাথে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয় তাকে বিভক্তি বলে।

২। প্রত্যয়গুলি শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ বা নতুন ধাতু গঠন করে। অপরদিকে বিভক্তিগুলি শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী পদ গঠন করে।

৩। প্রত্যয়ের কিছুটা অংশ লুপ্ত হতে পারে। যেমন: দর্শন + ষ্ণিক = দার্শনিক। এখানে ষ্ণ্ লোপ পেয়েছে, ইক অবশিষ্ট আছে। অপরদিকে বিভক্তির কোনো অংশ লোপ পায় না। যেমন: রাম + এর = রামের।

৪। শব্দের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যয়কে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়, ধাতুর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যয়কে বলে কৃৎ প্রত্যয়।অপরদিকে শব্দের সঙ্গে যুক্ত বিভক্তিকে বলে শব্দ-বিভক্তি, ধাতুর সঙ্গে যুক্ত বিভক্তিকে বলে ধাতু-বিভক্তি বা ক্রিয়াবিভক্তি।

৫। প্রত্যয় নতুন অর্থসম্পন্ন শব্দ সৃষ্টি করতে পারে। অপরদিকে বিভক্তি কোনো নতুন অর্থ সৃষ্টি করতে পারে না।

৬। প্রত্যয় কোনো ধরনের সম্পর্ক গড়তে পারে না। অপরদিকে বিভক্তির কাজ‌ হল এক পদের সঙ্গে অন্য পদের সম্পর্ক স্থাপন করা। যেমন: ‘রামের ভাই’ পদগুচ্ছে ‘এর’ বিভক্তিটি রাম ও ভাইয়ের সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

৭। প্রত্যয়ের ভূমিকা বাক্যের বাইরে। অপরদিকে বিভক্তির ভূমিকা বাক্যের ভিতরে।

৮। প্রত্যয়ের নিজস্ব কোন অর্থ নেই। অপরদিকে বিভক্তিরও নিজস্ব কোন অর্থ নেই, শুধু বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি তথা চিহ্ন মাত্র। যেমন: এ, য়, তে, কে, রে, র ইত্যাদি।