কাঠ বাদাম ও কাজু বাদামের মধ্যে পার্থক্য

কাঠ বাদাম:

প্রাচীনকালে তিন হাজার বছর আগে কাঠবাদাম ফল হিসাবে খ্যাতি ছিল। কাঠবাদামের ফল দেখতে প্রায় অনেকটা গোলাকার এবং কাঠের মতো শক্ত খোলসের আবরণ দিয়ে ঢাকা। খোলসের অভ্যন্তরে থাকে বাদামের খাবারের অংশটি।কাঠ বাদাম (Terminalia catappa) একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফলের বীজ। বীজের নাম অনুযায়ী এই গাছকে কাঠ বাদাম গাছ ডাকা হয়।

এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মানো লেডউড জাতীয় Combretaceae পরিবারের একটি বৃক্ষ। এ গাছের রসালো ফলের অভ্যন্তরে ৩-৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ কয়েকটি বীজ থাকে যা পরিপক্ব ফল থেকে বের করে নিয়ে সরাসরি বা ভেজে খাওয়া হয়। এই বিচিগুলিই কাঠবাদাম নমে পরিচিত। বিচিগুলো বাদামের গন্ধ যুক্ত। কাঠ বাদাম সারা বিশ্বে ভারতীয় বাদাম নামেও পরিচিত।

কাজু বাদাম:

কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্বাদু একটি বাদাম। কাজু গাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale. প্রতিশব্দ Anacardium curatellifolium সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ।এটি একটি অর্থকরি ফসল। বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। বেলে দো আশঁ মাটি অথবা পাহাড়ের ঢালে ভাল জন্মে। কাজুবাদাম খেতে আমরা সবাই খুব ভালোবাসি। কেক হোক কিংবা চকোলেট, পায়েস হোক বা চাটনি, কাজুবাদাম সব কিছুতেই কাজুবাদাম আমাদের খুবই পছন্দের। তবে কাজুবাদাম যে শুধুমাত্র স্বাদের জন্য খাওয়া হয় তা কিন্তু নয়।

কাজুবাদামের অনেক গুণাগুণ রয়েছে। অন্যান্য বাদামের তুনায় শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী এই বাদাম। এতে প্রচুর পরিমানে ক্যালোরি রয়েছে। ডায়টিশিয়ান, নিউট্রিশিয়ান এবং সমস্ত চিকিত্‌সকেরাই শরীরের জন্য কাজুবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন। এমনকি যাঁরা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট কন্ট্রোল করছেন, তাঁদেরকেও এই বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিত্সকেরা।

কাঠ বাদাম ও কাজু বাদামের মধ্যে পার্থক্য:

প্রাচীনকালে তিন হাজার বছর আগে কাঠবাদাম ফল হিসাবে খ্যাতি ছিল। কাঠবাদামের ফল দেখতে প্রায় অনেকটা গোলাকার। কাঠ বাদাম ও কাজু বাদামের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। ইংরেজিতে কাঠ বাদামকে almond বলা হয়। এটি গতানুগতিক অন্যান্য বাদামের মত নয়। ইহা এক প্রকার বৃক্ষ থেকে জন্মে যার বৈজ্ঞানিক নাম Prunus dulcis. ইহা ইরানের native বা স্থানীয় পর্যায়ে মত একটি বৃক্ষ। অন্যদিকে কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্বাদু একটি বাদাম। যার বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale; এবং প্রতিশব্দ Anacardium curatellifolium সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ।এটি একটি অর্থকরি ফসল।

২। কাঠবাদামের গাছের আদি নিবাস কোথায় তা জানা যায় না। এটি আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সহ অস্ট্রেলিয়া অবধি উষ্ণ অঞ্চলে জন্মে থাকে। অন্যদিকে কাজুবাদামের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিল সহ মধ্য আমেরিকা এবং উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর পূর্ব ব্রাজিল। বর্তমানে প্রধানত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া,মাদাগাস্কার প্রভৃতি দেশে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে

৩। এই ধরণের বাদাম উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার। তবে এর চর্বি হল মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। এই ধরণের চর্বি ভাল কোলেস্টেরলের পরিমান বৃদ্ধির মাধ্যমে হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা করে। এই বাদামে প্রোটিন এবং ফাইবার বেশি থাকে। অন্যদিকে বিবিধ পুষ্টিপদার্থ যেমন তামা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, ফসফরাস, আয়রন, সেলেনিয়াম, থায়ামিন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিপদার্থ ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬ ইত্যাদিতে ঠাসা কাজু বাদাম।

৪। কাঠ বাদামে রয়েছে বিশেষ ধরণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। গবেষকরা মনে করছেন, চীনা বাদাম, আখরোট এবং কাঠ বাদাম স্তন ক্যান্সারের সুরক্ষা কবজ। অন্যদিকে কাজু বাদামে কোলেস্টেরল থাকে না, এবং এতে ভালো ফ্যাট আছে। খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে কাজুবাদাম। তাছাড়া কাজুতে অলেইক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অনেক উপকারি।