পরম আয় ও আপেক্ষিক আয় উপসিদ্ধান্তের মধ্যে পার্থক্য

পরম আয় উপসিদ্ধান্ত (Absolute Income Hypothesis) :
পরম আয় উপসিদ্ধান্তের মূল প্রবক্তা হলেন জন মেনার্ড কেইন্স। তাঁর বক্তব্য স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আয় ও ভোগের সম্পর্ক অ-সমানুপাতিক হলেও পরবর্তীতে জেমস্ টবিন ও আর্থার স্মিথিস দীর্ঘকালীন বা আনুপাতিক ভোগ অপেক্ষকের সাথে কেইন্সের বক্তব্যের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যক্তি বা পরিবার যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে তাকেই পরম আয় বলে। ভোক্তা তার পরম আয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তনেয় চলতি আয়ের কত অংশ ভোগের ক্ষেত্রে সে ব্যয় করবে।

J. M. Keynes এর মতে, পরম আয়ের ওপর ভোগ ব্যয় নির্ভরশীল। তবে আয় যে হারে বাড়ে ভোগ সে হারে বাড়ে না বরং কম হারে বাড়ে। গড় ভোগ প্রবণতা C/Y হ্রাস পায়। ভোগ ও সঞ্চয়ের মধ্যে আয় বণ্টনের প্রকৃতি স্থিতিশীল। এ বক্তব্য স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থাৎ ভোগ অপেক্ষকটি অ-আনুপাতিক।

আপেক্ষিক আয় উপসিদ্ধান্ত (Relative Income Hypothesis) :
মানুষের আয় ও ভোগের সম্পর্ক নিয়ে আর্থার-স্মিথিসের সাথে হার্ভার্ড অধ্যাপক জেমস্ ডুসেনবেরিও গবেষণা করেন। আর্থার স্মিথিস ভোগের নির্ধারক হিসেবে পরম আয় নিয়ে গবেষণায় থাকলে ডুসেনবেরি আপেক্ষিক আয় ধারণার প্রবর্তন করেন। ১৯৪৮ সালে ‘The Consumption Function’ শিরোনামে তিনি বক্তব্য প্রদান করেন, যা ১৯৪৯ সনে ‘Income, Saving and the Theory of Consumer Behaviour’ গ্রন্থে প্রকাশ পায়।

অধ্যাপক ডুসেনবেরির মতে, আপেক্ষিক আয়ের উপর ভোগ নির্ভর করে। এ আপেক্ষিক আয় দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমটি হলো ভোক্তার অতীতের সর্বোচ্চ আয়ের স্তরের জীবনযাত্রার মান এবং দ্বিতীয়টি হলো তার পারিপার্শ্বিক উচ্চ ভোগের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মানের প্রভাব। তাঁর মতে, স্বল্পকালে গড় ভোগপ্রবণতা (APC) পরিবর্তন হলেও দীর্ঘকালে তা স্থির থাকে। অর্থাৎ স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষক অ-আনুপাতিক হলেও দীর্ঘকালে তা আনুপাতিক হবে।

পরম আয় ও আপেক্ষিক আয় উপসিদ্ধান্তের মধ্যে পার্থক্যঃ
স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থাৎ ভোগ অপেক্ষকটি অ-আনুপাতিক। পরম আয় ও আপেক্ষিক আয় উপসিদ্ধান্তের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১. J. M. Keynes এর মতে, পরম আয়ের ওপর ভোগ ব্যয় নির্ভরশীল। তবে আয় যে হারে বাড়ে ভোগ সে হারে বাড়ে না বরং কম হারে বাড়ে। গড় ভোগ প্রবণতা C/Y হ্রাস পায়। ভোগ ও সঞ্চয়ের মধ্যে আয় বণ্টনের প্রকৃতি স্থিতিশীল। এ বক্তব্য স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থাৎ ভোগ অপেক্ষকটি অ-আনুপাতিক।

অন্যদিকে, অধ্যাপক ডুসেনবেরির মতে, আপেক্ষিক আয়ের উপর ভোগ নির্ভর করে। এ আপেক্ষিক আয় দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমটি হলো ভোক্তার অতীতের সর্বোচ্চ আয়ের স্তরের জীবনযাত্রার মান এবং দ্বিতীয়টি হলো তার পারিপার্শ্বিক উচ্চ ভোগের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মানের প্রভাব। তাঁর মতে, স্বল্পকালে গড় ভোগপ্রবণতা (APC) পরিবর্তন হলেও দীর্ঘকালে তা স্থির থাকে।

২. পরম আয় উপসিদ্ধান্তে মানুষের ভোগ পরম আয় বা নিজ আয়ের ওপর নির্ভরশীল বলে ধরা হয়। অন্যদিকে, আপেক্ষিক আয় উপসিদ্ধান্তেমানুষের ভোগ আপেক্ষিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল হিসেবে দেখানো হয়।

৩. পরম আয় উপসিদ্ধান্তের বিশ্লেষণে ভোগের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থা, জীবনযাত্রার মান, অনুকরণপ্রিয়তা, ভোগ অভ্যাস, অতীতের উচ্চ আয় বা জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি উপাদান বিবেচনা করা না হলেও আপেক্ষিক আয় উপসিদ্ধান্তের বিশ্লেষণে এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত।

৪. পরম আয় উপসিদ্ধান্তেব্যবহৃত ভোগ অপেক্ষক মূলত স্বল্পকালীন। অন্যদিকে, আপেক্ষিক আয় উপসিদ্ধান্তেভোগ অপেক্ষক স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন উভয়ই হতে পারে।

৫. পরম আয় উপসিদ্ধান্তেভোগ অপেক্ষক অআনুপাতিক, অর্থাৎ APC পরিবর্তনশীল। অন্যদিকে আপেক্ষিক আয় উপসিদ্ধান্তেস্বল্পকালে ভোগ অপেক্ষক অআনুপাতিক হলেও দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষক আনুপাতিক অর্থাৎ APC স্থির।

৬. পরম আয় উপসিদ্ধান্তে ভোগ অপেক্ষকে APC > MPC হয়। অন্যদিকে, আপেক্ষিক আয় উপসিদ্ধান্ত স্বল্পকালে APC > MPC এবং দীর্ঘকালে APC = MPC হয়।