BOD ও COD এর মধ্যে পার্থক্য

বিওডি (BOD):

জলাশয়ের মৃত জৈববস্তুর ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে পচন ঘটে। পচন কাজের জন্য ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেন দরকার। পচন কাজে ব্যাকটেরিয়া অধিক পরিমাণে অক্সিজেন ব্যয় করলে জলজ প্রাণী বিশেষত মাছদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের যোগানে টান পড়ে যায়। ফলে অক্সিজেনের অভাবে জলজ প্রাণীদের মৃত্যু ঘটে থাকে। জলাশয়ে অক্সিজেন প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকলে সেখানে মাইক্রোব বা ব্যাকটেরিয়া জাতীয় জীবের আধিক্যজনিত দূষণ হয়েছে ধরা হয়। ব্যাকটেরিয়ার আধিক্যের জন্য এই সময়ে জলাশয়ে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। কোন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একক পরিমাণ জলে উপস্থিত জৈব উপাদান সমূহকে অনুজীব দ্বারা বিভাজিত / বিয়োজিত করার জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তাকে BOD (Biological Oxygen Demand) বলা হয়।

BOD এর একক হল – mg/L (মিলিগ্রাম প্রতি লিটার)। BOD হল জলের গুণমান নির্দেশক। অর্থাৎ BOD এর দ্বারা জলের গুণমান বোঝা যায়। যেই জলে যত পরিমাণে দূষিত জৈব পদার্থ থাকে সেই জলের BOD এর পরিমাণ তত বেশি হয়। কোনো জলাশয়ের জলের BOD পরীক্ষা করা হয় ‘BOD 5 test’ এর সাহায্যে।

সিওডি (COD):

প্রাকৃতিক পানিতে অবস্থিত সকল অজৈব ও জৈব বস্তু জারিত হয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও পানিতে পরিণত হতে যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন হয় তাকে রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা বা COD ( Chemical Oxygen demand ) বলে । জলের বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ অক্সিজেনের উপস্থিতিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিয়ােজিত হয় । এর ফলে জলে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় । সুতরাং COD নির্ণয় করে জলে দূষণের মাত্রা জানা যায় ।

পরিবেশ সম্বন্ধীয় রসায়ন শাস্ত্রে রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা ( COD ) পরীক্ষা করে পরােক্ষভাবে জলে অবস্থিত বিভিন্ন জৈব উপাদানের পরিমাণ নিরূপণ করা যায় । প্রধানত হ্রদ বা নদীর জলের উপরের স্তরে জৈব দৃষক পরিমাপ করার জন্য COD পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় । অর্থাৎ COD- র মাধ্যমে জলের গুণগতমান নিরূপণ করা যায় ।

mg / L দ্বারা জানা যায় প্রতি লিটার দ্রবণ কত পরিমাণ অক্সিজেন আত্মসাৎ করতে সক্ষম হয়েছে এই বিষয়টি । দীর্ঘদিন যাবৎ শক্তিশালী জারক পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট প্রয়ােগ করে COD পরিমাপ করা হয়ে আসছে । এতে পারম্যাঙ্গানেট কতটা পরিমাণ অক্সিজেন আত্মসাৎ করতে সক্ষম সেটাই বিচার করা হয়।

BOD ও COD এর মধ্যে পার্থক্যঃ

mg / L দ্বারা জানা যায় প্রতি লিটার দ্রবণ কত পরিমাণ অক্সিজেন আত্মসাৎ করতে সক্ষম হয়েছে এই বিষয়টি। BOD ও COD এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

২। কোন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একক পরিমাণ জলে উপস্থিত জৈব উপাদান সমূহকে অনুজীব দ্বারা বিভাজিত / বিয়োজিত করার জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তাকে BOD (Biological Oxygen Demand) বলা হয়। অন্যদিকে, কোনো জলে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা যে পরিমাণ জলে দ্রবীভূত জৈব পদার্থ জারিত হয়, তাকে ওই জলের রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা বা COD বলে।

২। BOD এর পুরো নাম Biological Oxygen Demand. অন্যদিকে, COD এর পুরো নাম Chemical Oxygen Demand.

৩। BOD জলে উপস্থিত জৈব পদার্থের বিয়োজনের জন্য জৈব বিয়োজকের দ্বারা প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমানকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে, COD রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্বারা বর্জ্য জলে উপস্থিত জৈব ও অজৈব পদার্থ গুলিকে পচানোর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমানকে নির্দেশ করে।

৪। BOD একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, COD একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া ।

৫। BOD বায়বীয় জীবের দ্বারা সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে, COD রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করে।

৬। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় ৫ দিনের জন্য রাখা নমুনার মাধ্যমে জলের BOD পরিমাপ করা হয়। এর মাধ্যমে জলে দ্রবীভূত কী পরিমান অক্সিজেন বায়বীয় বিয়োজকের দ্বারা গৃহীত হয়েছে তা বোঝা যায়। অন্যদিকে, জলের নমুনাতে একটি শক্তিশালী জারক পদার্থকে ফুটন্ত সালফিউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখার মাধ্যমে COD পরিমাপ করা হয়।

৭। BOD এর মান COD এর থেকে কম হয়। অন্যদিকে, COD এর মান সব সময় BOD এর থেকে বেশি হয়।