গোষ্ঠীবদ্ধ ও বিক্ষিপ্ত জনবসতির মধ‍্যে পার্থক‍্য

গোষ্ঠিবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ বসতি :
গ্রামীন এলাকায় কোনো একটি স্থানে যখন বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে বাস করে তখন তাকে বলা হয় গোষ্ঠি বা সংঘবদ্ধ বসতি। এই ধরনের বসতিগুলোর মধ্যে পারস্পারিক দূরত্ব কম। মূলত সামাজিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্যই বাসগৃহগুলো এমনভাবে গড়ে উঠে। এই ধরনের বসতির দ্বারা ছোট গ্রাম বা নগর হতে পারে। গোষ্ঠিবদ্ধ বসতিতে দেখা যায় যে যদি স্থানটি অর্থনৈতিক দিক হতে উন্নত হয় তবে সেখানে আরও বসতি ও রাস্তাঘাট গড়ে উঠবে। এভাবে এক বা একাধিক রাস্তার সংযোগস্থলে গড়ে উঠা বসতিগুলো থেকেই ভবিষ্যতে নগর বা শহরে রূপান্তর ঘটে।

বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন বসতি :
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের বসতি দেখা যায়। মূলত: প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কারণেই এরূপ বসতি গড়ে উঠে। বিক্ষিপ্ত ও বিছিন্ন বসতি হলো সেই ধরনের বসতি যেখানে একটি পরিবার অন্য একটি পরিবার থেকে বহু দূরে বিছিন্নভাবে বসবাস করে। অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বসতিতে একত্রে এক থেকে তিনটি পরিবার এভাবে বসবাস করে। তবে এদের মধ্যে থাকা দূরত্বের জন্যই এদের বিছিন্ন বসতি বলা হয়।

হিমালয়ের বন্ধুর অঞ্চলের বিক্ষিপ্ত বসতিতে যারা বাস করে তাদের এক উপত্যকার অধিবাসীদের সাথে অন্য উপত্যকার অধিবাসীদের কখনোই দেখা হয় না।

গোষ্ঠীবদ্ধ ও বিক্ষিপ্ত জনবসতির মধ‍্যে পার্থক‍্যঃ

গ্রামীন বসতিতে অবস্থানের প্রেক্ষিতে ও বাসগৃহসমূহের পরস্পরের ব্যবধানের উপর ভিত্তি করে তিন ধরনের বসতি বিন্যাস দেখা যায়। গোষ্ঠীবদ্ধ ও বিক্ষিপ্ত জনবসতির মধ‍্যে পার্থক‍্য নিম্নরূপ-

১. নির্দিষ্ট এলাকায় একই পরিবেশে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধভাবে যে জনবসতি গড়ে ওঠে তাকে গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি বলে। অন্যদিকে, বিক্ষিপ্ত জনবসতি নির্দিষ্ট পরিসর অঞ্চলে একে অন্যের থেকে দূরে দূরে প্রায় সংযোগহীন ও সম্পর্কহীন অবস্থায় যে জনবসতি গড়ে ওঠে তাকে বিক্ষিপ্ত জনবসতি বলে।

২. গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি প্রায় সমতল প্রকৃতির ভূ প্রাকৃতিক পরিবেশ, উর্বর মৃত্তিকাসমৃদ্ধ অঞ্চল এবং মনোরম জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে সাধারণত এই প্রকার জনবসতি গড়ে ওঠে। অন্যদিকে,বিক্ষিপ্ত জনবসতি বন্ধুর ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল, গভীর অরণ্য অঞ্চল, চরম প্রতিকূল জলবায়ু ও অন্যান্য প্রতিকূল পরিবেশে সাধারণত বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে।

৩. গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি বাড়ি গুলির মধ্যে পারস্পরিক ব্যবধান খুব কম থাকে। অর্থাৎ, বাড়িগুলি কাছাকাছি অবস্থান করে। অন্যদিকে, বিক্ষিপ্ত জনবসতি বসতবাড়ি গুলির মধ্যে পারস্পরিক ব্যবধান বেশি হয়। অর্থাৎ, বাড়িগুলি দূরে দূরে অবস্থান করে।

৪. গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি বসতবাড়িগুলি কাছাকাছি থাকায় এই ধরনের বসতিতে নিরাপত্তার অভাব দেখা যায় না। অন্যদিকে, বিক্ষিপ্ত জনবসতি বসতবাড়িগুলির মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব বেশি হওয়ায় নিরাপত্তার যথেষ্ট অভাব থাকে।

৫. গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতিতে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। অন্যদিকে, বিক্ষিপ্ত জনবসতি বসতিগুলি বিচ্ছিন্ন বলে এই প্রকার জনবসতিতে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা খুবই কম।

৬. গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতির প্রধান জীবিকা মূলত কৃষিকাজ। অন্যদিকে, বিক্ষিপ্ত জনবসতির প্রধান জীবিকা পশুপালন, কাঠ সংগ্রহ প্রভৃতি।

৭. গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উপাদানগুলির গুণগতমান স্থানীয়ভাবে পরিবর্তিত হলে গোষ্ঠীবদ্ধ বসতিগুলি এককেন্দ্রিক, দ্বি-কেন্দ্রিক বা বহুকেন্দ্রিক হতে পারে। অন্যদিকে, বিক্ষিপ্ত জনবসতিগুলি নিয়মিত ও অনিয়মিত ভাবে গড়ে ওঠে।