প্রচলিত শক্তি ও অপ্রচলিত শক্তির মধ্যে পার্থক্য

প্রচলিত শক্তি (Conventional Energy) :
শক্তি উৎপাদনের যেসব উৎসগুলি মানুষ বহুদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে অর্থাৎ শক্তির উৎস হিসেবে যেগুলি র প্রচলন বেশি সেগুলিকে শক্তির প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি বলে। দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহার হওয়ার ফলে চিরাচরিত শক্তির উৎস এবং ব্যবহারের প্রযুক্তি সহজলভ্য। প্রচলিত শক্তির উৎসগুলি হল- কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেজস্ক্রিয় খনিজ দ্রব্য এবং বড় আকারের খরস্রোতা নদী। খরস্রোতা নদী ভিত্তিক জলবিদ্যুৎ ছাড়া বাকিগুলি পুননবীকরণ যোগ্য নয়। খরস্রোতা নদী ছাড়া শক্তির বাকী উৎসগুলির ভাণ্ডার গচ্ছিত, ব্যবহারের ফলে ক্রমহ্রাসমান।

এগুলির (জলবিদ্যুৎ ছাড়া) ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় । উৎপাদনের প্রাথমিক খরচ কম হলেও পরবর্তী সময়ে ইউনিট পিছু উৎপাদন ব্যয় বেশি। প্রচলিত শক্তির উৎসগুলি ব্যবহারের প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সহজলভ্য।

অপ্রচলিত শক্তি (Non-Conventional Energy) :
শক্তির যেসব উৎসগুলি বিশ্বের জনপ্রিয় নয় অর্থাৎ পৃথিবীতে শক্তি উৎপাদনে এমন কতগুলি উৎস আছে যেগুলি বহুল ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি এই ধরনের উৎস গুলিকে শক্তি অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি বলা হয়। অপ্রচলিত শক্তি গুলির উৎস হল- সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, জোয়ারভাটা শক্তি, ভুতাপ শক্তি, জৈব গ্যাস, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি । অপ্রচলিত শক্তি অল্প কয়েক বছর এবং কম পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে ।

এই শক্তির উৎসগুলির ভাণ্ডার অফুরন্ত এবং ব্যবহারের ফলে নিঃশেষিত হওয়ার আশঙ্কা নেই । এগুলির ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় না। অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদনে প্রাথমিক ব্যয় বেশি হলেও পরবর্তী সময়ে ইউনিট পিছু উৎপাদন ব্যয় কম।

প্রচলিত শক্তি ও অপ্রচলিত শক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ
অর্থনৈতিক ভূগোল শক্তি সম্পদ অধ্যায়ের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো চিরাচরিত ও অচিরাচরিত শক্তির মধ্যে পার্থক্য। এইপ্রচলিত শক্তি ও অপ্রচলিত শক্তির মধ্যে পার্থক্য গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-

১। শক্তি উৎপাদনের যেসব উৎসগুলি মানুষ বহুদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে অর্থাৎ শক্তির উৎস হিসেবে যেগুলি র প্রচলন বেশি সেগুলিকে শক্তির প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি বলে। অন্যদিকে, শক্তির যেসব উৎসগুলি বিশ্বের জনপ্রিয় নয় অর্থাৎ পৃথিবীতে শক্তি উৎপাদনে এমন কতগুলি উৎস আছে যেগুলি বহুল ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি এই ধরনের উৎস গুলিকে শক্তি অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি বলা হয়।

২। প্রচলিত শক্তির উৎস গুলি হল খনিজ তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি। অন্যদিকে, অপ্রচলিত শক্তির উৎস গুলি হল সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, ভূ তাপীয় শক্তি, জোয়ার ভাটার শক্তি, জৈব গ্যাস ইত্যাদি।

৩। প্রচলিত শক্তির উৎস গুলি গচ্ছিত, ক্ষয়িষ্ণু বা অপুণর্ভব সম্পদ। অন্যদিকে, অপ্রচলিত শক্তির উৎস গুলি অফুরন্ত বা প্রবাহমান সম্পদ।

৪। চিপ্রচলিত শক্তির উৎস গুলির পরিমাণ সীমিত হওয়ায়, ব্যবহারের ফলে একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে, অপ্রচলিত শক্তির গুলির পরিমাণ অফুরন্ত যা কখনোই নিঃশেষ হবে না।

৫। চিপ্রচলিত শক্তি গুলি ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয়। অন্যদিকে, অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহারে কোন রকম পরিবেশ দূষিত হয় না বলে এগুলিকে পরিবেশ বান্ধব শক্তি বলে।

৬। প্রচলিত শক্তি উৎপাদনের প্রযুক্তি সহজলভ্য। অন্যদিকে, অপ্রচলিত শক্তির উৎপাদনের প্রযুক্তি সহজলভ্য নয়।

৭। প্রচলিত শক্তির উৎস গুলি আরোহণ ও ব্যবহারের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, অপ্রচলিত শক্তির উৎপাদনে প্রযুক্তি সহজলভ্য নয় বলে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন পড়ে।

৮। প্রচলিত শক্তির অধিকাংশ উৎস গুলিকে স্থানান্তরিত করা যায়। অন্যদিকে, অপ্রচলিত শক্তির উৎস গুলিকে স্থানান্তর করা যায় না।