ভৌগোলিক এবং প্রাকৃতিক অঞ্চলের পার্থক্য

ভৌগোলিক অঞ্চল (Geographical Region):
ভৌগোলিক অঞ্চল ধারণাটি প্রথম প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত পার্মিনিড কর্তৃক অনুমান করা হয়েছিল এবং সর্বশেষে অ্যারিস্টটল কর্তৃক সংশোধিত হয়। উভয় দার্শনিক তাত্ত্বিকভাবে বিষুবীয় অঞ্চল থেকে তাদের দূরত্বের ভিত্তিতে পৃথিবীকে তিন ধরনের জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছিলেন। পার্মিনিডের মত “নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছাকাছি অঞ্চলটি আবাসনের জন্য খুব উত্তপ্ত ছিল” এই ভেবে অ্যারিস্টটল নিরক্ষীয় অঞ্চলের আশেপাশের অঞ্চলটি (২৩.৫° উত্তর থেকে ২৩.৫° দক্ষিণ সেন্টিগ্রেড) “উষ্ণ অঞ্চল” নামে অভিহিত করেছিলেন। উভয় দার্শনিক সুমেরুবৃত্ত থেকে মেরু পর্যন্ত অঞ্চলটিকে স্থায়ীভাবে হিমায়িত হওয়ার যুক্তি দিয়েছিলেন। বসবাসের অযোগ্য ভাবা এই অঞ্চলটিকে “হিমমণ্ডল” বলে অভিহিত করা হতো। আবাসস্থল বলে মনে করা হয় কেবলমাত্র “উত্তর পশ্চিমের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলকে” (দক্ষিণটি আবিষ্কার করা যায় নি), যা “হিম অঞ্চল” এবং “উষ্ণ অঞ্চল” এর মধ্যে অবস্থিত। তবে মানুষ সুমেরুবৃত্ত সহ পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জলবায়ুতে বসবাস করেছে।

কোনো অঞ্চলে যখন ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, জলবায়ু, উদ্ভিদকুল, মানুষের জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি নানান উপাদানের মধ্যে সমতা থাকে, তাকে বলে ভৌগোলিক অঞ্চল। অর্থাৎ‍ এরূপ অঞ্চল কতকগুলি প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে।

প্রাকৃতিক অঞ্চল ( Natural Region):
পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে যখন উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, মৃত্তিকা, ভূপ্রকৃতি ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করে যে জীবগোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের ক্রিয়াকলাপের বিকাশ ঘটেছে, তাকে বলে প্রাকৃতিক অঞ্চল। পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে যখন উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, মৃত্তিকা, ভূপ্রকৃতি ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করে যে জীবগোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের ক্রিয়াকলাপের বিকাশ ঘটেছে, তাকে বলে প্রাকৃতিক অঞ্চল।

হাবার্টসনের মতে— “An area of the earth surface which essentially homogeneous with respect to the conditions that effect human life.”

হাবার্টসনের মতে— “An area of the earth surface which essentially homogeneous with respect to the conditions that effect human life.”

ভৌগোলিক এবং প্রাকৃতিক অঞ্চলের পার্থক্য

১. কোনো অঞ্চলে যখন ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, জলবায়ু, উদ্ভিদকুল, মানুষের জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি নানান উপাদানের মধ্যে সমতা থাকে, তাকে বলে ভৌগোলিক অঞ্চল।

অন্যদিকে, পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে যখন উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, মৃত্তিকা, ভূপ্রকৃতি ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করে যে জীবগোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের ক্রিয়াকলাপের বিকাশ ঘটেছে, তাকে বলে প্রাকৃতিক অঞ্চল।

২. ভৌগোলিক অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় নিয়ন্ত্রক থাকে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক অঞ্চলে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক বিষয়সমূহ গুরুত্বলাভ করে।

৩. ভৌগোলিক অঞ্চলের সীমানা পরিবর্তনশীল। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক অঞ্চলের সীমানা অনেক বেশি স্থায়ী প্রকৃতির।

৪. ভৌগোলিক অঞ্চলের আয়তন ছোট হতে পারে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক অঞ্চলের আয়তন বৃহৎ আকারের হয়।

৫. ভৌগোলিক অঞ্চলের সাধারণত কোনো উপ- বিভাগ থাকে না। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক অঞ্চলের একাধিক ক্ষুদ্র উপবিভাগ |

৬. ভৌগোলিক অঞ্চলের সীমানা হঠাৎ শেষ হয়ে যায়, তাই তা নির্ধারণ করা সহজ। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক অঞ্চলের সীমানা হঠাৎ শেষ হয় না, অর্থাৎ চিহ্নিত করা অসুবিধাজনক।

৭.ভৌগোলিক অঞ্চলের সীমানা অনিয়মিত এবং অন্য কোনো প্রাকৃতিক বা ভৌগোলিক অঞ্চলে আরোপিত হতে পারে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক অঞ্চলের সীমানা নিয়মিত, অর্থাৎ এর সীমানা ধীরে ধীরে অপর একটি অঞ্চলের সাথে মিলে যায়।