চাহিদা বৃদ্ধিজনিত ও ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পার্থক্য

চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি (Demand pull inflation):
অনেক সময় কোন দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি বা অন্য কোন কারণে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী অর্থাৎ সামগ্রিক যোগানের তুলনায় সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দামস্তর বৃদ্ধি পায়। এভাবে সমাজে সামগ্রিক যোগানের তুলনায় সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির ফলে দামস্তরের যে বৃদ্ধি ঘটে তাকে ‘চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি’ বা চাহিদা প্রণোদিত মুদ্রাস্ফীতি’ (Demand pull inflation) বলা হয়।

অর্থনীতিতে সাধারণত অবস্থায় সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি , অর্থের যােগান বৃদ্ধি , বেসরকারি ভােগ ও বিনিয়ােগ বৃদ্ধি , কর হার হ্রাস , সুদের হার হ্রাস ইত্যাদি কারণে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সামগ্রিক যোগান স্থির থাকা অবস্থায় প্রচলিত মূল্যস্তরে এরূপ অতিরিক্ত চাহিদার কারণে মূল্যস্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি জনিত মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে ।

কেইনসের মতে , অর্থনীতিতে পূর্ণ নিয়ােগ অবস্থায় সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি হেতু দ্রব্য ও সেবা সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা যায় তাকে চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয় ।

ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি (Cost push inflation):
শ্রমিকের মজুরি, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এবং উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধির ফলে দামস্তরের যে ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটে তাকে ‘ব্যায় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি’ (Cost push inflation)) বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, অর্থনীতিতে সামগ্রিক চাহিদা প্রদত্ত অবস্থায় কোন কারণে সামগ্রিক যোগান কমে গেলে দ্রব্য ও সামগ্রীর মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায় । সাধারণত উৎপাদনের উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেলে উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি পায়ও উৎপাদনের পরিমান হ্রাস পায় যা মূল্যস্তর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও সামগ্রিক যোগান হ্রাসের ফলে মূল্যস্তর বৃদ্ধির এরূপ প্রবণতাকে ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয় ।

চাহিদা বৃদ্ধিজনিত ও ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পার্থক্যঃ

অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি কেন ঘটে তার কারণ হিসাবে ব্যয় বৃদ্ধিজনিত এবং চাহিদ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির কথা বলা হয়। চাহিদা বৃদ্ধিজনিত ও ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। অনেক সময় কোন দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি বা অন্য কোন কারণে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী অর্থাৎ সামগ্রিক যোগানের তুলনায় সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দামস্তর বৃদ্ধি পায়। এভাবে সমাজে সামগ্রিক যোগানের তুলনায় সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির ফলে দামস্তরের যে বৃদ্ধি ঘটে তাকে ‘চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি’ বা চাহিদা প্রণোদিত মুদ্রাস্ফীতি’ (Demand pull inflation) বলা হয়।

অন্যদিকে, শ্রমিকের মজুরি, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এবং উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধির ফলে দামস্তরের যে ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটে তাকে ‘ব্যায় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি’ (Cost push inflation)) বলা হয়।

২। চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতিতে চলতি মূল্যে সামগ্রিক চাহিদার বৃদ্ধি প্রকাশ পায়। অর্থের অতিরিক্ত যােগান, সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি, করের পরিমাণ হ্রাস, ভােগ ও বিনিয়ােগ ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এসবের দ্বারা সামগ্রিক চাহিদা বাড়ে। অন্যদিকে, উৎপাদন কমে গেলে বা সংগঠনের মুনাফা অর্জনের প্রবণতা বেশী হলে বা মজুরী বাড়লে ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

৩। শ্রমিক ইউনিয়নের একচেটিয়া কার্যকলাপ ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ। তবে অনেক সময় দ্রব্য বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণও এর জন্য দায়ী। অন্যদিকে, চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতিকালে এরকম বাজারের তেমন ভূমিকা নেই।

৪। ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতিতে বাহ্যিক উপাদান যেমন বহির্বিশ্বের ঘটনা প্রভাব বিস্তার করে। তেলের দাম বৃদ্ধি ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতিতে ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে, চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে বাহ্যিক উপাদানের ভূমিকা নগণ্য।

৫। ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতির স্থায়িত্ব স্বল্পকালীন। যদি সেই মুদ্রাস্ফীতির পিছনে চাহিদা-মুদ্রাস্ফীতির সমর্থন থাকে, তবেই তা দীর্ঘকাল ধরে চলতে পারে। কিন্তু সমর্থন না থাকলে তা বেশী দিন চলতে পারে না। অন্যদিকে, চাহিদা মুদ্রাস্ফীতি অবস্থা বিশেষে স্বল্পমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে এককভাবে চলতে পারে।

৬। চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে সামগ্রিক চাহিদা রেখা ডানদিকে স্থান পরিবর্তন করে । এক্ষেত্রে পূর্ণ নিয়ােগ স্তরে সামগ্রিক যােগান রেখা স্থির থাকে । অন্যদিকে, ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে সামগ্রিক চাহিদা রেখা প্রদত্ত অবস্থায় সামগ্রিক যোগান রেখা বামদিকে স্থান পরিবর্তন করে ।