সূচক ও লগারিদম এর মধ্যে পার্থক্য

সূচক (Exponent):

বড় বড় সংখ্যা বা অনেক ছোট সংখ্যা মনে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সূচকের মাধ্যমে এই ধরণের সংখ্যাগুলোকে সহজে প্রকাশ করা যায়। এতে করে গণনা করা বা সূচকের গাণিতিক সমস্যাগুলো সহজে সমাধান করা যায়। আবার সূচকের মাধ্যমেই যেকোনো সংখ্যার বৈজ্ঞানিক রুপ বা আদর্শ রুপ প্রকাশ করা যায়। সূচক থেকেই লগারিদমের সৃষ্টি হয়েছে। সংখ্যার বা রাশির গুন, ভাগ বা সূচক সম্পর্কিত সমস্যাগুলো লগারিদমের সাহায্যে সহজে করা যায়। যখন কম্পিউটার বা ক্যালকুলেটর আবিষ্কার হয়নি তখন এই লগারিদমের সাহায্যেই অনেক সমস্যা সমাধান করা হতো, যা এখনও মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হয়।

সাধারণত সূচককে power বা শক্তি বলা হয়। যেমন: {a^n} এ n হলো a এর সূচক এবং এখানে a হচ্ছে ভিত্তি। দুটি রাশি গুণ আকারে থাকলে এবং তাদের ভিত্তি একই হলে তাদের power বা শক্তির যোগ হয়। যেমন: {a^m}×{a^n}={a^{m + n}}

লগারিদম (Logarithm):

Logos এবং Arithmas নামক দুটি গ্রিক শব্দ হতে Logarithm শব্দটির উৎপত্তি। Logos অর্থ “আলোচনা” এবং Arithmas অর্থ “সংখ্যা”। অর্থাৎ, Logarithm শব্দটির অর্থ “সংখ্যা বিষয়ক আলোচনা” গণিতশাস্ত্রে লগারিদম হলো সূচকের বিপরীত প্রক্রিয়া। এর অর্থ কোনো সংখ্যার লগারিদম হলো সেই সূচক যেটাকে একটি নির্ধারিত মানের (ভিত্তি) ঘাত হিসাবে উন্নীত করলে প্রথমোক্ত সংখ্যাটি পাওয়া যায়। সহজভাবে, একটি সংখ্যাকে বার বার গুণ করলে, লগারিদম সংখ্যাটিকে যতবার গুণ করা হয়েছিল তা গণনা করে। যেমন: যেহেতু 1000 = 10 × 10 × 10 = 103 তাই 1000 এর দশ ভিত্তিক লগারিদম হলো 3, অথবা log10 (1000) = 3। x এর b ভিত্তিক লগারিদম কে লেখা হয় logbx ।

10 ভিত্তিবিশিষ্ট লগকে (অর্থাৎ b=10) সাধারণ লগারিদম বলা হয় এবং এটিকে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা সাধারণত ব্যবহার করে থাকে। স্বাভাবিক লগারিদমে ভিত্তি হিসেবে গাণিতিক ধ্রুবক e(অর্থাৎ b≈2.718) কে ব্যবহার করা হয়।

সূচক ও লগারিদম এর মধ্যে পার্থক্য:

বড় বড় সংখ্যা বা অনেক ছোট সংখ্যা মনে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সূচকের মাধ্যমে এই ধরণের সংখ্যাগুলোকে সহজে প্রকাশ করা যায়। সূচক ও লগারিদম এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীতে সূচকের ধারণা পেয়েছি এবং সপ্তম শ্রেণীতে গুণের ও ভাগের সূচক নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি। সূচক ও ভিত্তি সংবলিত রাশিকে সূচকীয় রাশি বলা হয়। অন্যদিকে গণিতে আমরা বিভিন্ন রকমের সংখ্যা নিয়ে কাজ করি। যখন কোনো সংখ্যা অনেক বড় হয়, তখন তার ̧ণফল, ভাগফল বা মূলদ সূচকযুক্ত ঘাতের মান নির্ণয় করার জন্য লগারিদম ব্যবহার করা হয়।

২। সুচক যে ভাবে ভিক্তি ও পাওয়ার দ্বারা মূল মান প্রকাশ করে তেমনি লগারিদম মূল মানকে নির্দিষ্ট ভিক্তির পাওয়ার বের করে দেয়। তবে কোন অংকে লগারিদমের ভিক্তি দেওয়া না থাকলে ক্যালকুলেটর ১০ ভিক্তি ধরেই হিসাব করে। তাই ভিক্তি নির্দিষ করা না হলে ১০ ভিক্তিক লগারিদম ফল বের করতে হয়।

৩। কোনো একটি রাশিতে একই উৎপাদক যত বার গুণ আকারে থাকে, সেই সংখ্যাকে উৎপাদকটির সূচক এবং উৎপাদকটিকে ভিত্তি বলা হয়। অন্যদিকে লগারিদম (Logarithm) ব্যবহার করা হয় সূচকীয় রাশির মান বের করার জন্য। সাধারণ লগারিদমকে সংক্ষেপে লগ (log) বলা হয়। বড় বড় রাশির গুন, ভাগ ইত্যাদি সংক্ষেপে সহজে করতে লগারিদম ব্যবহার করা হয়।

৪। সূচকের সূত্র থেকে আমরা জানি ao = 1 । অন্যদিকে লগের সূত্র থেকে আমরা জানি logaa = 0 ।

৫। সূচকের সূত্র: am+an = am+n । অন্যদিকে লগের সুত্র : loga (MN) = loga M + loga N ।