সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত-এর মধ্যে পার্থক্য

সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত-এর মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। নিচে সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত-এর মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

সাধারণ গণিত (General Mathematics) :
সাধারণ গণিত সংখ্যা ও অন্যান্য পরিমাপযোগ্য রাশিসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়। গণিতবিদগন বিশৃঙ্খল ও অসমাধানযুক্ত সমস্যাকে শৃঙ্খলভাবে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া খুঁজে বেড়ান ও তা সমাধানে নতুন ধারণা প্রদান করে থাকেন। গাণিতিক প্রমাণের মাধ্যমে এই ধারণাগুলির সত্যতা যাচাই করা হয়। গাণিতিক সমস্যা সমাধান সম্পর্কিত গবেষণায় বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বা শত শত বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। গণিতের সার্বজনীন ভাষা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একে অপরের সাথে ধারণার আদান-প্রদান করেন। গণিত তাই বিজ্ঞানের ভাষা। ১৭শ শতক পর্যন্তও কেবল পাটীগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতিকে গাণিতিক শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত। সেসময় গণিত দর্শন ও বিজ্ঞানের চেয়ে কোন পৃথক শাস্ত্র ছিল না। আধুনিক যুগে এসে গণিত বলতে যা বোঝায়, তার গোড়াপত্তন করেন প্রাচীন গ্রিকেরা, পরে মুসলমান পণ্ডিতেরা এগুলি সংরক্ষণ করেন, অনেক গবেষণা করেন এবং খ্রিস্টান পুরোহিতেরা মধ্যযুগে এগুলি ধরে রাখেন। তবে এর সমান্তরালে ভারতে এবং চীন-জাপানেও প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগে স্বতন্ত্রভাবে উচ্চমানের গণিতচর্চা করা হত।

ভারতীয় গণিত প্রাথমিক ইসলামী গণিতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ১৭শ শতকে এসে আইজাক নিউটন ও গটফ্রিড লাইবনিৎসের ক্যালকুলাস উদ্ভাবন এবং ১৮শ শতকে অগুস্তঁ লুই কোশি ও তার সমসাময়িক গণিতবিদদের উদ্ভাবিত কঠোর গাণিতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলির উদ্ভাবন গণিতকে একটি একক, স্বকীয় শাস্ত্রে পরিণত করে। তবে ১৯শ শতক পর্যন্তও কেবল পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ ও প্রকৌশলীরাই গণিত ব্যবহার করতেন।

উচ্চতর গণিত (Higher Mathematics) :
উচ্চতর গণিত মাধ্যমিক গণিত কোর্সে দেওয়া শিরোনাম। “উচ্চতর গণিত” শব্দ এবং “অ্যাডভান্সড লেভেল ম্যাথমেটিক্স” শব্দটি দ্বারা অনেক প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি উন্নত গণিত কোর্সকে বোঝানো হতে পারে। ফাংশন কথাটির অর্থ ক্রিয়া বা অপেক্ষক। গণিতে এর যথার্থ অর্থ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা কার্যকারণ সম্পর্ক। ফাংশনের ধারণা উচ্চতর গণিতের প্রাণস্বরূপ। বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থায় নবন দশম শ্রেণি অর্থাৎ নিম্ন মাধ্যমিক এবং একাদশ দ্বাদশ শ্রেণি অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর গণিতকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উচ্চতর গণিত জটিল ধারণা ও সূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেমন ক্যালকুলাস, ডিফারেনশিয়াল সমীকরণ, রৈখিক বীজগণিত, সম্ভাব্যতা ও পরিসংখ্যান ইত্যাদি।

সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত-এর মধ্যে পার্থক্যঃ
১. সাধারণ গণিতের মৌলিক ধারণা ও সূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেমন সংখ্যা, বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি ইত্যাদি। অন্যদিকে, উচ্চতর গণিতের জটিল ধারণা ও সূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেমন ক্যালকুলাস, ডিফারেনশিয়াল সমীকরণ, রৈখিক বীজগণিত, সম্ভাব্যতা ও পরিসংখ্যান ইত্যাদি।

২. সাধারণ গণিত দৈনন্দিন জীবনে, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ইত্যাদিতে প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে, উচ্চতর গণিত জটিল সমস্যা সমাধানে, গবেষণা, উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের উন্নত ক্ষেত্রগুলোতে প্রয়োগ করা হয়।

৩. সাধারণ গণিতে সমস্যা সমাধান করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সুদকুশলতা আরও কম হতে পারে তুলনায় উচ্চতর গণিতে। এখানে প্রয়োজন হতে পারে সুদকুশলতা এবং তথ্য বিশ্লেষণের কম্পিউটার ব্যবহারের প্রয়োজন।

৪. সাধারণ গণিত স্কুল স্তর থেকে শুরু করে স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়ানো হয়। অন্যদিকে, উচ্চতর গণিত স্নাতক স্তরের পরবর্তী শিক্ষায়, যেমন স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি ইত্যাদিতে পড়ানো হয়।

৫. সাধারণ গণিতে সমস্যার সমাধান করার জন্য সাধারণত নির্দিষ্ট নিয়ম ও উপায়ের ব্যবহার করা হয়, যেমন ফর্মুলা ব্যবহার করে। অন্যদিকে, উচ্চতর গণিতে, সমস্যাগুলি সাধারণত বিশেষ এবং স্থানান্তর পূর্ণ পদ্ধতিতে সমাধান করা হতে পারে, যেমন অধিকাংশ প্রবলেমের গুণনীয় পদ্ধতি বা নির্দিষ্ট গণিতীয় উপায়ে অধিকতর নির্দিষ্ট সমাধান পদ্ধতি।

৬. সাধারণ গণিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে, উচ্চতর গণিত জটিল সমস্যা সমাধানে, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।