হতাশা এবং বিষণ্ণতার মধ্যে পার্থক্য

হতাশা (Frustration) :
হতাশা হল একটি শব্দ যা সাধারণত একটি ব্যক্তির মানসিক অবস্থাকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় যখন তারা দুঃখিত, হতাশ বা হতাশ বোধ করে। হতাশা মানে নিজের প্রত্যাশা অনুসারে ফল না পাওয়ার প্রতিক্রিয়া। অতীতের কোন সিদ্ধান্ত কিংবা ভবিষ্যতের কোন সম্ভাবনা নিয়ে কষ্ট বা আঘাত পাওয়া, রাগান্বিত হওয়া, দুঃখিত হওয়া। পরীক্ষায় ফেল করার ফলে হতাশা আসতে পারে, খেলায় জিততে না পারলেও হতাশা আসতে পারে, পছন্দের মানুষকে না পেলেও আসতে পারে, চাকরি না পাওয়া বা মনমতো না হলেও হতাশা আসতে পারে।

এটা কোন ক্লিনিক্যাল ডিজঅর্ডার নয়। এর জন্যে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়না। উপযুক্ত পরিবেশ এবং উৎসাহ পেলে এটা ঠিক হয়ে যায়। পরীক্ষায় ফেলের দুঃখ একদিন থাকে। পরেরদিন কিন্তু সব আগের মতোই চলে। এই হতাশা বা ফ্রাস্ট্রেশন আসে মূলত বুঝার ঘাটতি থেকে। খুব দ্রুতই আমরা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি এবং ভালভাবে বিচার-বিশ্লেষণ না করেই সিদ্ধান্ত নিতে যাই বলে হতাশা আসে। তবে এধরণের হতাশা থেকে নিজেরাই বের হয়ে আসতে পারি। চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন পড়েনা।

আপনার যা আছে এই মুহুর্তে সেটাকে এপ্রিশিয়েট করুন। নিজের যা আছে তাই নিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিন। খুঁজলে দেখবেন অনেকে এসব ছাড়াও অনেক সুখী হয়ে বাঁচতেছে। তাদের কথা ভেবে নিজেকে হতাশা থেকে বাহির করুন।

বিষন্নতা (Depression) :
বিষন্নতা হতাশার চূড়ান্ত একটা রূপ। বিষণ্ণতা হল একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা দুঃখ, উদ্বেগ এবং আগ্রহের অভাব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটি একটি গুরুতর অবস্থা যা একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিষণ্ণতার কারণগুলি অজানা, তবে এটি জিনগত, পরিবেশগত এবং জীবনধারাগত কারণগুলির সংমিশ্রণ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। যদি কারো হতাশা বা দুঃখবোধ অন্তত দুই সপ্তাহ বা তার বেশি থাকে তবে তা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে আওতায় চলে যায়। সাধারণত ব্রেইনে কিছু নিউরোট্রান্সমিটারের অভাবকে এর পেছনে দায়ী করা হয়। তাই একা একা এর সমাধান করা যায়না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।

বিষন্নতা থেকে বেরিয়ে আসতে, পরিবারের সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে, সবচেয়ে ভাল বন্ধুটিকে আপনার কথা শেয়ার করতে হবে। ভাল হয়, একজন থেরাপিস্ট কিংবা মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া। প্রচলিত মিথকে কানে নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে রেখে আপনাতেই চলে যাবে এমন ভেবে ভুল করা যাবেনা। কাউন্সেলিং এ যেতে হবে। মুখোমুখি কথা বলতে ইচ্ছে না করলে অনলাইনে কিংবা ফোনে আপনাকে কাউন্সেলিং নিতে হবে।

হতাশা এবং বিষণ্ণতার মধ্যে পার্থক্যঃ
হতাশা এবং বিষণ্ণতা দুটিই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা দুঃখ, উদ্বেগ এবং আগ্রহের অভাব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যাইহোক, এই দুটি শব্দের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। তা নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

১। হতাশা হল একটি শব্দ যা সাধারণত একটি ব্যক্তির মানসিক অবস্থাকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় যখন তারা দুঃখিত, হতাশ বা হতাশ বোধ করে। অন্যদিকে, বিষণ্ণতা হল একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা দুঃখ, উদ্বেগ এবং আগ্রহের অভাব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

২। হতাশা প্রায়ই একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় ঘটে, যেমন একটি প্রিয়জনের মৃত্যু, একটি চাকরি হারানো বা একটি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া। হতাশা সাধারণত অস্থায়ী হয় এবং সময়ের সাথে সাথে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

অন্যদিকে, বিষণ্ণতা একটি গুরুতর অবস্থা যা একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিষণ্ণতার কারণগুলি অজানা, তবে এটি জিনগত, পরিবেশগত এবং জীবনধারাগত কারণগুলির সংমিশ্রণ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

৩। হতাশার তীব্রতা হালকা থেকে মাঝারি হতে পারে। অন্যদিকে, বিষণ্ণতার তীব্রতা গুরুতর হতে পারে।

৪। হতাশার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তবে জীবনধারা পরিবর্তন সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে, বিষণ্ণতার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন, ওষুধ, থেরাপি এবং জীবনধারা পরিবর্তন সহ।

৫। আপনার যা আছে এই মুহুর্তে সেটাকে এপ্রিশিয়েট করুন। নিজের যা আছে তাই নিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিন। খুঁজলে দেখবেন অনেকে এসব ছাড়াও অনেক সুখী হয়ে বাঁচতেছে। তাদের কথা ভেবে নিজেকে হতাশা থেকে বাহির করুন।

অন্যদিকে, বিষন্নতা থেকে বেরিয়ে আসতে, পরিবারের সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে, সবচেয়ে ভাল বন্ধুটিকে আপনার কথা শেয়ার করতে হবে। ভাল হয়, একজন থেরাপিস্ট কিংবা মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া।