অর্থের মূল্য ও দামস্তরের মধ্যে পার্থক্য

অর্থের মূল্য (Value of money) :
অর্থের মূল্য বলতে অর্থের ক্রয় ক্ষমতাকে বুঝায়। অর্থের মূল্য থাকলেও অর্থের মাধ্যমে দ্রব্য ও সেবা সামগ্রীর দাম প্রকাশ পায়। সহজ কথায় বলা যায়, অর্থ দ্বারা যে দ্রব্য ও সেবাকর্ম পাওয়া যায় তাকেই অর্থের মূল্য বলা হয়। অর্থের মূল্য অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। অর্থের মূল্যের পরিবর্তনের ফলে সমগ্র অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে। সাধারণত অর্থের মূল্য নির্ভর করে দামস্তরের ওপর। দামস্তর যদি বেশি হয় তাহলে অর্থের মূল্য হ্রাস পায় এবং দামস্তর যদি কম হয় তাহলে অর্থের মূল্য বৃদ্ধি পায়। অর্থের মূল্যের সাথে দামস্তরের বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান।

অর্থনীতিবিদ কে. কে. কুরিহারা বলেন, অর্থের অভ্যন্তরীণ মূল্য বলতে অভ্যন্তরীণ পণ্য সামগ্রী ও সেবাকর্মের প্রেক্ষিতে ঐ অর্থের ক্রয়ক্ষমতাকে নির্দেশ করে এবং অর্থের বহিস্থমূল্য বলতে অর্থের বৈদেশিক বিনিময় হারকে বুঝায়।

অধ্যাপক রবার্টসনের মতে, এক একক মুদ্রার বিনিময়ে সাধারণভাবে যে পরিমাণ দ্রব্য ও সেবা পাওয়া যায় তাকে অর্থের মূল্য বলে।

অর্থনীতিবিদ জে. এল. হ্যানসনের মতে, অর্থ যা ক্রয় করে তাই অর্থের মূল্য।

দামস্তর (Price level) :
দামস্তর হল একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পণ্য বা সেবার গড় মূল্য। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জীবনযাত্রার ব্যয়ের একটি পরিমাপ। অর্থাৎ কোনো দেশে উৎপাদিত সকল পণ্য ও সেবার গড় দামকে দামস্তর বলে। দাম স্তর নগদ অর্থের চাহিদা অনেকাংশে প্রভাবিত করে। দাম স্তর বাড়তে থাকলে তথা মুদ্রাস্ফীতির সময় অর্থের চাহিদা বাড়ে। আবার দাম স্তর কমতে থাকলে তথা মুদ্রা সংকোচনের সময় অর্থের চাহিদা হ্রাস পায়। অর্থাৎ, দামস্তর বাড়লে অর্থের মূল্যে কমে। আবার, দামস্তর কমলে অর্থের মূল্যে বাড়ে।

অর্থের মূল্য ও দামস্তরের মধ্যে পার্থক্যঃ
অর্থের ক্রয়ক্ষমতা যেহেতু অর্থের মূল্যে নির্দেশ করে সেহেতু দামস্তরের সাথে অর্থের মূল্যের সম্পর্কও বিপরীত। অর্থের মূল্য ও দামস্তরের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। অর্থের মূল্য বলতে অর্থের ক্রয় ক্ষমতাকে বুঝায়। অর্থের মূল্য থাকলেও অর্থের মাধ্যমে দ্রব্য ও সেবা সামগ্রীর দাম প্রকাশ পায়। অন্যদিকে, কোনো দেশে উৎপাদিত সকল পণ্য ও সেবার গড় দামকে দামস্তর বলে।

২। অর্থের মূল্য সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের ক্রয় ক্ষমতার পরিবর্তনের পরিমাপ করে। অর্থের মূল্য বৃদ্ধি পায় যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আরও পণ্য বা সেবা কিনতে পারে। অর্থের মূল্য হ্রাস পায় যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আরও কম পণ্য বা সেবা কিনতে পারে।

অন্যদিকে, দামস্তর সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পণ্য বা সেবার গড় মূল্যের পরিবর্তনের পরিমাপ করে। দামস্তর বৃদ্ধি পায় যখন পণ্য বা সেবার গড় মূল্য বৃদ্ধি পায়। দামস্তর হ্রাস পায় যখন পণ্য বা সেবার গড় মূল্য হ্রাস পায়।

৩। উদাহরনঃ
অর্থের মূল্য বৃদ্ধি: ধরুন একজন ব্যক্তির কাছে 100 টাকা আছে। যদি অর্থের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে সেই ব্যক্তি 100 টাকা দিয়ে আরও বেশি পণ্য বা সেবা কিনতে পারবে।
অর্থের মূল্য হ্রাস: ধরুন একজন ব্যক্তির কাছে 100 টাকা আছে। যদি অর্থের মূল্য হ্রাস পায়, তাহলে সেই ব্যক্তি 100 টাকা দিয়ে আরও কম পণ্য বা সেবা কিনতে পারবে।

দামস্তর বৃদ্ধি: ধরুন একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট পণ্য 100 টাকায় কিনতে পারে। যদি দামস্তর বৃদ্ধি পায়, তাহলে সেই ব্যক্তি একই পণ্য 150 টাকায় কিনতে হবে।
দামস্তর হ্রাস: ধরুন একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট পণ্য 100 টাকায় কিনতে পারে। যদি দামস্তর হ্রাস পায়, তাহলে সেই ব্যক্তি একই পণ্য 75 টাকায় কিনতে পারবে।