নির্দেশক ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য

নির্দেশকঃ

বাংলা ভাষায় কতগুলো অব্যয় বা প্রত্যয়বাচক শব্দ আছে যেসব বিশেষ্য বা বিশেষণের পরে যুক্ত হয়ে এই শব্দগুলোকে নিদিষ্ট করতে সাহায্য করে। এই ধরণের শব্দ বা শব্দাংশকে নির্দেশক বা পদাশ্রিত নির্দেশক বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বচনভেদে নির্দেশকের ব্যবহার পরিবর্তন আসে। নির্দেশক হল এক ধরনের ধ্বনিগুচ্ছ, যেগুলির স্বাধীন অর্থ নেই, কিন্তু শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বচন নির্দেশ করে। ব্যাকরণে এরা লগ্নক নামেও পরিচিত। এদের আর এক নাম পদাশ্রয়ী নির্দেশক। কেউ কেউ পদাশ্রয়ীর পরিবর্তে শব্দাশ্রয়ী বলতে চান। উদাহরণ- টি, টা, খান, খানি, খানা, গুলি, গুলো প্রভৃতি হল নির্দেশকের উদাহরণ। এই নির্দেশকগুলি শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে একবচন বা বহুবচন নির্দেশ করে।

বিভক্তিঃ

বিভক্তি হলো এক গুচ্ছ বর্ণ, যারা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অন্বয় সাধনের জন্য যে সকল বর্ণ যুক্ত হয়। বাক্যের মধ্যে অন্য শব্দের সাথে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্পর্ক বোঝাতে অর্থহীন কিছু লগ্নক যুক্ত হয়, এই লগ্নকগুলোই বিভক্তি বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদ এর সাথে নামপদ এর সম্পর্ক স্থাপন করে। উদাহরণ: ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

বাক্যটিতে ছাদে (ছাদ + এ বিভক্তি), মা (মা + ০ বিভক্তি), শিশুকে (শিশু + কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ + ০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে অর্থহীন বিভিন্ন লগ্নক যুক্ত হয়েছে, এগুলোই বিভক্তি।

নির্দেশক ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ

বিভক্তি ও নির্দেশক, উভয়ের বেশ কিছু সাদৃশ্য থাকলেও এরা এক জিনিস নয়। নিচে নির্দেশক ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো-

১। বিভক্তি শব্দ বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে তাকে পদে পরিণত করে। অন্যদিকে, নির্দেশক শব্দের পরে যুক্ত হয়ে বচন নির্দেশ করে।

২। নির্দেশকের পর বিভক্তি যুক্ত হতে পারে। অন্যদিকে, বিভক্তির পর নির্দেশক যুক্ত হতে পারে না।

৩। বিভক্তি অন্বয় সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, নির্দেশক অন্বয় সৃষ্টি করতে পারে না।

৪। বিভক্তির পরিবর্তে অনুসর্গ ব্যবহৃত হতে পারে। অন্যদিকে, নির্দেশকের পরিবর্তে অন্য কিছু ব্যবহৃত হতে পারে না।

৫। বিভক্তি ধাতুর পরেও যুক্ত হয়। অন্যদিকে, নির্দেশক ধাতুর পরে যুক্ত হতে পারে না।