আমিষ ও নিরামিষ এর মধ্যে পার্থক্য

আমিষ (Non-vegetarian) :
আমিষ হল মাছ, মাংস, ডিম দুধ, ডাল, শিমের বিচি, শুঁটকি মাছ, চিনাবাদাম ইত্যাদি। এ থেকে আমরা আমিষ বা প্রোটিন পাই। আমিষ আমাদের দেহের বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণ করে। আমিষ বা প্রোটিন-জাতীয় খাদ্য কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত। এতে শতকরা ১৬ ভাগ নাইট্রোজেন থাকে। এতে সামান্য পরিমাণে সালফার, ফসফরাস এবং আয়রনও থাকে। উৎস অনুযায়ী আমিষ দুই ধরনের—প্রাণিজ আমিষ যেমন—মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি এবং উদ্ভিজ্জ আমিষ যেমন—ডাল, চিনাবাদাম, শিমের বিচি ইত্যাদি। এই খাদ্যে দেহের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়। নাইট্রোজেন ও অ্যামাইনো এসিড থাকায় এই খাদ্যের গুরুত্ব শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাদ্য থেকে আলাদা।

নিরামিষ (Vegetarian) :
নিরামিষ বলতে বোঝায় এমন খাবার যা প্রাণীজ আমিষের উৎস থেকে পাওয়া যায় না। প্রাণীজ আমিষ হলো মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি। নিরামিষ খাবারে শুধুমাত্র উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া আমিষ থাকে। নিরামিষ ভোজন বিভিন্ন কারণে করা যেতে পারে। অনেক লোক প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার কারণে নিরামিষভোজী হয়। তারা মনে করে যে প্রাণীদের হত্যা করা অগ্রহণযোগ্য। আবার অনেক লোক স্বাস্থ্যগত কারণে নিরামিষভোজী হয়। তারা মনে করে যে নিরামিষ খাবার স্বাস্থ্যকর। এছাড়াও, পরিবেশগত কারণেও অনেক লোক নিরামিষভোজী হয়। তারা মনে করে যে নিরামিষভোজনের ফলে পরিবেশের ক্ষতি কম হয়।

নিরামিষভোজনের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। নিরামিষভোজীরা সাধারণত কম ওজনের হয় এবং তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়াও, নিরামিষভোজনের ফলে পরিবেশের ক্ষতি কম হয়।

আমিষ ও নিরামিষ এর মধ্যে পার্থক্যঃ
আমিষ এবং নিরামিষ হলো দুই ধরণের খাদ্য তালিকা। উভয়ের মধ্যে পুষ্টিগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

১. আমিষ শব্দের অর্থ প্রোটিন। সব খাবারেই প্রোটিন থাকে। উদ্ভিদ, প্রাণী সব উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবারেই প্রোটিন পাবেন। তবে প্রচলিত ভাষা অনুযায়ী আমিষ খাদ্য বলতে প্রাণিজ প্রোটিন। অন্যদিকে, নিরামিষ খাদ্য বলতে প্রাণিজ প্রোটিন বাদ দিয়ে যে খাবার। তবে দুধ জাতীয় খাবার নিরামিষ এর অন্তর্ভূক্ত।

২. আমিষ হলো প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য ইত্যাদি। অন্যদিকে, নিরামিষ হলো উদ্ভিদ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবার, যেমন শাকসবজি, ফল, ডাল, শস্য ইত্যাদি।

৩. আমিষ প্রাণিজ উৎস থেকে আসে। অন্যদিকে, নিরামিষ উদ্ভিদ উৎস থেকে আসে।

৪. আমিষ এবং নিরামিষ উভয়ই আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমিষ আমাদের শরীরের বৃদ্ধি, বিকাশ এবং মেরামত কাজে সাহায্য করে। অন্যদিকে, নিরামিষ আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

৫. নিরামিষ হচ্ছে আয়ুবর্ধক বলবর্ধক পুষ্টিকর সাত্ত্বিক বস্তু। অন্যদিকে, আমিষ হচ্ছে উগ্র রাজসিক বস্তু।