প্রাকৃতিক ও মানব ভূগোলের মধ্যে পার্থক্য

প্রাকৃতিক ভূগোল (Physical Geography):

প্রাকৃতিক ভূগোল হচ্ছে ভূগোলের প্রধান দুটি শাখার একটি। প্রাকৃতিক ভূগোল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সেই শাখা যেটি প্রাকৃতিক পরিবেশের মূল অংশগুলো, যেমন- বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জীবমণ্ডল, ভূমণ্ডলের গঠন ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে। প্রাকৃতিক ভূগোল বা Physical Geography কথাটির অর্থ হচ্ছে ‘Physical basic of Geography’ অর্থাৎ ভূগোলের বুনিয়াদ বা প্রধান উপাদান; যা প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক ভূগোল ভূগোলের একটি প্রধান শাখা। প্রাকৃতিক ভূগোলকে বাদ দিয়ে ভূগোলকে কল্পনাই করা যায় না। পরিবেশের সেসব বিষয় নিয়ে প্রাকৃতিক ভূগোল প্রাকৃতিক আলোচনা করে; যা জীবজগতের সমস্ত প্রাণীর জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। প্রাণীজগত ও জীবজগতের পাশাপাশি পৃথিবীর আশ্মমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল প্রভৃতি সবকিছুই প্রাকৃতিক ভূগোলের বিষয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ভূগোল শাস্ত্রের অগ্রগতির বিভিন্ন ধারার সৃষ্টি হয়। সব ধারার মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূগোল।

Professor Carl Ritter এর মতে, “প্রাকৃতিক ভূগোল হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যা পৃথিবীর সমস্ত অবয়ব, বৈচিত্র্য ও সম্পর্কসহ একটি স্বতন্ত্র একক হিসেবে বিচার করে”।
Professor Richard Hartshorne এর মতে, “ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের সঠিক, সুবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা সরবরাহ করা প্রাকৃতিক ভূগোলের কাজ”।

মানব ভূগোল (Human Geography):

মানবীয় ভুগোল হল ভূগোলের এমন একটি শাখা যা মানব সমাজের আকৃতিগত পদ্ধতি এবং পক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। অন্যভাবে বলা যায়, ভূগোল বিজ্ঞানের যে শাখা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য এবং ঐ অঞ্চলের মানব সম্প্রদায়ের জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় (জনসংখ্যা, বসতি, কৃষি, শিল্প, খনিজ, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, দুর্যোগ এবং দূষণ ইত্যাদি) নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে তাকে মানব ভূগোল বলে। ফরাসি ভূগোলবিদ ভিদাল ডি লা ব্লাশকে (Vidal de la Blache) মানব ভূগোলের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

প্রাকৃতিক ও মানব ভূগোলের মধ্যে পার্থক্যঃ

প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোলের মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। নিচে প্রাকৃতিক ও মানব ভূগোলের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

১. প্রাকৃতিক ভূগোল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সেই শাখা যেটি প্রাকৃতিক পরিবেশের মূল অংশগুলো, যেমন- বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জীবমণ্ডল, ভূমণ্ডলের গঠন ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, মানবীয় ভুগোল হল ভূগোলের এমন একটি শাখা যা মানব সমাজের আকৃতিগত পদ্ধতি এবং পক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।

২. পৃথিবীর জন্ম সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা প্রভৃতি প্রাকৃতিক ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায়। অন্যদিকে, মানব ভূগোলের মূল কেন্দ্রবিন্দু মানুষ। তাই মানুষের জন্ম, মৃত্যু, বেড়ে উঠা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, সংস্কৃতি অর্থাৎ মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় মানব ভূগোল পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।

৩। প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কিত জ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র বোঝাতে প্রাকৃতিক ভূগোল শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, মানবিক ভূগোলে পৃথিবীপৃষ্ঠে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা, স্থানিক পার্থক্য এবং এই পার্থক্যের পেছনে প্রাকৃতিক প্রভাবকের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়।

৪. ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী প্রক্রিয়াসমূহ যেমন- নগ্নীভবন, বিচূর্ণীভবন, নদীর কাজ, হিমবাহের কাজ, মরুভূমির প্রধান ভূমিরূপ সম্পর্কে প্রাকৃতিক ভূগোল অধ্যয়নের মাধ্যমে জানা যায়। অন্যদিকে, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অঞ্চলভিত্তিক বর্ণনা ও ব্যাখ্যা, জনসংখ্যার অভিগমন, অভিগমনের কারণ, শ্রেণিবিভাগ প্রভৃতি মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।

৫. প্রাকৃতিক ভূগোলে পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের অবস্থান, আকৃতি, তলদেশের অবস্থা, জোয়ার ভাটা, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। অন্যদিকে, মানুষ এবং মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পূর্বশর্ত পরিবহন ও যোগাযোগ। মানব ভূগোলে পরিবহন ও যোগাযোগের (সড়কপথ, রেলপথ, নৌ ও সমুদ্রপথ, বিমানপথ) বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।