উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য

উপসর্গ

যে সকল অব্যয় জাতীয় শব্দ ধাতু বা শব্দের (নামপদ)পূর্বে বসে ধাতুর অর্থে বৈচিত্র্য আনে অথবা নতুন শব্দ তৈরী করে সেই সব অব্যয় জাতীয় শব্দকে উপসর্গ বলে। অথাৎ যেসব অব্যয় শব্দের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হয়ে সে শব্দের নতুন অর্থ সৃষ্টি করে, সেসব অব্যয় শব্দকেই উপসর্গ বলে। যেমন- যেমন— আ – কার = আকার, প্র – কার = প্রকার, উপ – কার = উপকার, অপ-কার = অপকার, প্রতি – কার = প্রতিকার ইত্যাদি।

তিন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়।এরা হল–সংস্কৃত উপসর্গ ,বাংলা উপসর্গ এবং বিদেশী উপসর্গ।

অনুসর্গ

বাংলা ভাষায় দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, চেয়ে, থেকে, উপরে, পরে, প্রতি, মাঝে, বই, ব্যতীত, অবধি, হেতু, জন্য, কারণ, মতো, তবে ইত্যাদি শব্দ কখনো অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে পদরূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয় আবার কখনো কখনো শব্দবিভক্তির ন্যায় অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থবৈচিত্র্য ঘটিয়ে থাকে। এদের অনুসর্গ বলা হয়। যেমন : কেবল আমার জন্য তোমার এ দুর্ভোগ। মনোযোগ দিয়ে শোন, শেষ পর্যন্ত সবার কাজে আসবে।

উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্যঃ

১। যেসব অব্যয় শব্দের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হয়ে সে শব্দের নতুন অর্থ সৃষ্টি করে, সেসব অব্যয় শব্দকেই উপসর্গ বলে। পক্ষান্তরে যেসব অব্যয় বিশেষ্য ও সর্বনামের পরে বসে বিভক্তির কাজ করে, সেগুলোকে অনুসর্গ বলে।

২। উপসর্গ নামবাচক বা কৃদন্ত শব্দের আগে বসে। পক্ষান্তরে অনুসর্গ বিশেষ্য ও সর্বনাম শব্দের পরে বসে।

৩। উপসর্গ মূল শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে। পক্ষান্তরে অনুসর্গ মূল শব্দের অর্থ ঠিক রাখে।

৪। উপসর্গ বিভক্তির কাজ করে না। পক্ষান্তরে অনুসর্গ বিভক্তির কাজ করে।

৫। উপসর্গ কোনো শব্দের সঙ্গে পৃথকভাবে ব্যবহূত হতে পারে না। পক্ষান্তরে অনুসর্গ পৃথকভাবে ব্যবহূত হয়।

৬। উপসর্গ নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে। পক্ষান্তরে অনুসর্গ নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে না।