কারবারি ও নগদ বাট্টার মধ্যে পার্থক্য

কারবারী বাট্টা (Trade discount) :
বড় বড় কারবারী বা উৎপাদনকারী সর্বত্র একটি নির্দিষ্ট মূল্যে পণ্য দ্রব্য বিক্রয় করবার জন্য প্রতিষ্ঠান একটি ছাপানো মূল্য তালিকা রাখে। এরূপ ছাপানো মূল্য হতে উৎপাদনকারী বা পাইকারী ব্যবসায়ীগণ এর নিকট হতে যে অর্থ কম রাখে তাকে কারবারী বাট্টা বলে। অর্থাৎ পণ্যের তালিকা মূল্য থেকে যে পরিমাণ টাকা ছাড় দিয়ে বিক্রেতা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেন তাকে কারবারি বাট্টা বলে। কারবারি বাট্টার জন্য কোন প্রকার জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় না। কাজেই কারবারি বাট্টা হিসাব-নিকাশে কোন প্রভাব ফেলে না। ব্যবসায়ী বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য এই প্রকার বাট্টা প্রদান করে থাকেন। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। বাজারে বিক্রিত পণ্যের কভারে খুচরা মূল্য লেখা থাকে। ধরা যাক আপনি হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্র বই কিনবেন। বইটির মূল্য তালিকা লেখা আছে ৩০০ টাকা। আপনি বইটি ক্রয় করতে গেলে ২০% ছাড় পাবেন। অর্থাৎ (৩০০×২০%) = ৬০ টাকা কমে ২৪০ টাকায় বইটি কিনতে পারবেন। এখানে ৬০ টাকা হবে কারবারি বা ব্যবসায়িক বাট্টা।

Pyle and Larson এর মতে, Ôtrade discount is the discount that may bededucted from a cataling list price to determine the invoice price of goods.

নগদ বাট্টা (Cash discount) :
বাকীতে বিক্রিত পণ্যের মূল্য বা পাওনা টাকা যথাসময়ে বা তাড়াতাড়ি আদায়ের জন্য ক্রেতা বা দেনাদারকে যে ছাড় দেয়া হয় তাকে নগদ বাট্টা বলে। নগদ লেনদেনের সাথে জড়িত বলে এই বাট্টাকে নগদ বাট্টা বলে। নগদ বাট্টার ক্ষেত্রে বাট্টার হার, বাট্টার সুযােগ গ্রহণের সময়সীমা এবং প্রদেয় অর্থ প্রদানের সর্বশেষ সময়সীমা উল্লেখ থাকে। যেমন – ২/১০ নীট ৩০, অর্থাৎ ১০ দিনের মধ্যে পরিশােধ করলে ২% বাট্টা পাওয়া যাবে এবং ৩০ দিনের মধ্যে অবশ্যই সম্পূর্ণ অর্থ পরিশােধ করতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান নগদ বাট্টা প্রদান করতে পারে আবার পেতে পারে। পণ্যের বিক্রয়মূল্য বা প্রাপ্য অর্থ আদায়কালে যে পরিমাণ অর্থ কম নেয়া হয় তাকে প্রদত্ত বাট্টা বলে। আর পণ্যের ক্রয় মূল্য বা প্রদেয় অর্থ পরিশােধকালে যে পরিমাণ অর্থ কম দেয়া হয় তাকে প্রাপ্ত বাট্টা বলে। প্রদত্ত বাট্টা তিনঘরা নগদান বইতে ডেবিট দিকে এবং প্রাপ্ত বাট্টা ক্রেডিট দিকে বাট্টা ঘরে লিখতে হয়।

Pyle and Larson এর মতে, Ôcash discount is a diduction from the invoice price of goods allowed on payment which is made within specified period of time.

কারবারি ও নগদ বাট্টার মধ্যে পার্থক্যঃ
কারবারি বাট্টা ও নগদ বাট্টা হলো ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত দুটি ভিন্ন ধরনের বাট্টা। কারবারি ও নগদ বাট্টার মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১. বড় বড় কারবারী বা উৎপাদনকারী সর্বত্র একটি নির্দিষ্ট মূল্যে পণ্য দ্রব্য বিক্রয় করবার জন্য প্রতিষ্ঠান একটি ছাপানো মূল্য তালিকা রাখে। এরূপ ছাপানো মূল্য হতে উৎপাদনকারী বা পাইকারী ব্যবসায়ীগণ এর নিকট হতে যে অর্থ কম রাখে তাকে কারবারী বাট্টা বলে। অন্যদিকে, বাকীতে বিক্রিত পণ্যের মূল্য বা পাওনা টাকা যথাসময়ে বা তাড়াতাড়ি আদায়ের জন্য ক্রেতা বা দেনাদারকে যে ছাড় দেয়া হয় তাকে নগদ বাট্টা বলে।

২. কারবারি বাট্টা হলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড় যা বিক্রেতা সকল ক্রেতাকেই দিয়ে থাকে। অন্যদিকে, নগদ বাট্টা হলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড় যা বিক্রেতা শুধুমাত্র সেই ক্রেতাদেরকেই দিয়ে থাকে যারা পণ্য বা সেবা দ্রুত নগদ পরিশোধ করে।

৩. কারবারি বাট্টার পরিমাণ সাধারণত নগদ বাট্টার পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়।

৪. কারবারি বাট্টা প্রদানের উদ্দেশ্য হলো ক্রেতাদের আকর্ষণ করা এবং বিক্রি বৃদ্ধি করা। অন্যদিকে, নগদ বাট্টা প্রদানের উদ্দেশ্য হলো দ্রুত নগদ অর্থ সংগ্রহ করা।

৫. কারবারি বাট্টার ক্ষেত্রে সকল খরিদ্দারকে একই হারে বাট্টা দেওয়া হয়। অন্যদিকে, নগদ বাট্টার ক্ষেত্রে পরিশোধের সময়ের ভিত্তিতে এ বাট্টার হার বিভিন্ন খরিদ্দারের মধ্যে কম বেশি হয়।

৬. নগদ বাট্টা গণনা করার পূর্বে কারবারী বাট্টা গণনা করা হয়। অন্যদিকে, কারবারী বাট্টা হিসাব করার পর নগদ বাট্টা গণনা করা হয়।

৭. কারবারি বাট্টার অর্থ পরিশোধের সময়ের সাথে সম্পর্কীত নয়। অন্যদিকে, নগদ বাট্টার অর্থ পরিশোধের সময়ের সাথে সম্পর্কীত।

৮. কারবারি বাট্টা শুধুমাত্র ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উদ্ভব হয় বলে এর আওতা সীমিত। অন্যদিকে, নগদ বাট্টা যে কোন দেনা পাওনার ক্ষেত্রে উদ্ভব হয় বলে এর আওতা ব্যাপক।

৯. উদাহরণস্বরূপ- ধরা যাক একটি টি-শার্টের বাজারমূল্য ১০০০ টাকা। যদি বিক্রেতা কারবারি বাট্টা হিসেবে ১০% ছাড় দেয়, তাহলে টি-শার্টটির বিক্রয়মূল্য হবে ৯০০ টাকা। আবার, যদি বিক্রেতা নগদ বাট্টা হিসেবে ২০% ছাড় দেয়, তাহলে টি-শার্টটির বিক্রয়মূল্য হবে ৮০০ টাকা।