জাবেদা ও খতিয়ানের মধ্যে পার্থক্য

জাবেদা (Zabeda) :
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংঘটিত লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধকরণের সর্বপ্রথম পর্যায় হলো জাবেদা। ইংরেজি Journal শব্দটি ফরাসি ‘Jour’ শব্দ হতে উৎপত্তি হয়েছে। ‘Jour’ এর অর্থ হলো দিন। দৈনন্দিন হিসাবের লেনদেনগুলো যে বইতে সর্বপ্রথম প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে জাবেদা বা Journal বলে। অর্থাৎ কোন কারবার বা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে প্রাথমিকভাবে যে বইতে তারিখ, বিবরণ এবং টাকার পরিমাণসহ ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে তাকে জাবেদা বলা হয়।

হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থায় জাবেদা হল হিসাবের প্রাথমিক বই,যেখানে আর্থিক লেনদেন সূমহ সংগঠিত হওয়ার পর তারিখ অনুযায়ী হিসাবের বইতে সংরক্ষণ করা হয়। দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী হিসাবের একপক্ষ ডেবিট এবং সমপরিমান টাকায় আরেক পক্ষকে ক্রেডিট করা হয়। ব্যবসায় এর উপর ভিত্তি করে অ্যাকাউন্টিং তথ্য ব্যবস্থায়, রেকর্ড পালনের জন্য বিশেষ জাবেদা ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- ক্রয় জাবেদা,বিক্রয় জাবেদা,সমন্বয় জাবেদা ইত্যাদি।

খাতিয়ান (Khatian) :
হসাবচক্রে খাতিয়ানের অবস্থান তৃতীয়। প্রতিটি লেনদেনকে দু’তরফা দাখিলা নীতি অনুযায়ী প্রথমে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর উক্ত লেনদেনগুলোকে হিসাবের উপযুক্ত শিরোনাম অনুযায়ী খতিয়ানে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। ধরুণ একটি বাড়িতে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে যেমন- ড্রয়িং, ডাইনিং, বেড, কিচেন এবং স্টোর রুম। এই কক্ষগুলোতে প্রয়োজনীয় মালামাল কেনার জন্য আপনাকে ৫,০০,০০০ টাকা দেয়া হল। আপনি রুমগুলোর জন্য কেনাকাটা করলেন, সবশেষে কোন রুমে কত টাকা ব্যয় হল তা হিসাব করে বলে দিলেন। যেমন- ড্রয়িং রুম বাবদ ১,৫০,০০০ টাকা ডাইনিং রুম বাবদ ১,০০,০০০ টাকা, বেড রুম বাবদ ১,৫০,০০০ টাকা, কিচেন রুম বাবদ ৫০,০০০ টাকা এবং স্টোর রুম বাবদ ৫০,০০০ টাকা। এটা সম্ভব হলো আলাদাভাবে প্রত্যেক রুমের খরচ লিখে রাখার জন্য। অনুরূপভাবে কোন প্রতিষ্ঠানের কোন খাতে কত টাকা ব্যয়িত হয়েছে তা জানার জন্য পৃথক শিরোনাম অনুযায়ী হিসাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। তা না হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে শুধুমাত্র জাবেদা থেকে মোট ক্রয়, মোট বিক্রয় বা অন্য কোন হিসাবের সঠিক পরিমাণ বের করা খুব সময় সাপেক্ষ ও জটিল হয়ে দাঁড়াবে।

তাই বলা যায় কোন কারবার প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় লেনদেনসমূহকে সংক্ষিপ্তকারে শ্রেণিবদ্ধভাবে উপযুক্ত শিরোনামে বিভক্ত করে পাকাপাকিভাবে যে বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। খতিয়ান সম্পর্কে কয়েকজন লেখকের প্রামাণ্য সংজ্ঞা নিম্নে প্রদত্ত হল :

আর্থার ফিল্ড হাউজ-এর মতে, “খতিয়ান হল সকল লেনদেনের স্থায়ী ভান্ডার।” এল.সি. ক্রুপার এর মতে, “যে বইতে কারবারি লেনদেনগুলোকে শ্রেণিবিভাগ করে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।”

জাবেদা ও খতিয়ানের মধ্যে পার্থক্যঃ
জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ই হিসাব চক্রের দুইটি ধাপ। খতিয়ান জাবেদা অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যবহার উপযােগী।জাবেদা ও খতিয়ানের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১. কোন কারবার প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে প্রাথমিকভাবে যে বইতে তারিখ, বিবরণ, টাকার পরিমাণসহ ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জাবেদা বলে। অন্যদিকে, হিসাবের যে বইতে লেনদেনসমূহ পৃথক পৃথক শিরোনাম অনুসারে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।

২. জাবেদায় শুধু লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট পক্ষ শনাক্তকরণ করা হয়। অন্যদিকে, খতিয়ানে প্রতিটি হিসাবের মোট ডেবিট ও মোট ক্রেডিটের পার্থক্যকরণের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত নির্ণয় করা হয়। খতিয়ান সুষ্ঠু ও নির্ভুলভাবে প্রস্তুতের জন্য জাবেদা সহায়ক বইস্বরূপ কাজ করে।

৩. লেনদের হল জাবেদার উৎস। অন্যদিকে, জাবেদা হল খতিয়ানের উৎস।

৪. হিসাবের প্রাথমিক বই হল জাবেদা। অন্যদিকে, খতিয়ান হল হিসাবের পাকা বই

৫. জাবেদা হচ্ছে হিসাব চক্রের প্রথম ধাপ। অন্যদিকে, হিসাব চক্রের দ্বিতীয় ধাপ হল খতিয়ান।

৬. জাবেদায় জের টানা হয় না। অন্যদিকে, খতিয়ানের জের টানা আবশ্যক।

৭.জাবেদায় লেনদেনসমূহের ব্যাখ্যা দিতে হয়। অন্যদিকে, খতিয়ানে লেনদেনের ব্যাখ্যার দরকার নাই।

৮. জাবেদায় ছকের পাঁচটি ঘর থাকে। অন্যদিকে, খতিয়ানের ছকে ঞ ছক অনুযায়ী ঘর থাকে ৮টি এবং চলমান জেরে থাকে ৬ টি।

৯. জাবেদা লেনদেনের তারিখ অনুযায়ী তৈরি করা হয়। অন্যদিকে, খতিয়ান হিসাবের প্রকৃতি অনুসারে তৈরি করা হয়।

১০. জাবেদায় খতিয়ান পৃষ্ঠা নম্বর লেখা হয়। অন্যদিকে, খতিয়ানে জাবেদা পৃষ্ঠা নম্বর লেখা হয়।

১১. জাবেদাভূক্তিকরন ছাড়াও হিসাবকার্য শেষ করা যায়। অন্যদিকে, খতিয়ান ছাড়া পূর্ণাঙ্গ হিসাব করা সম্ভব নয়।

১২.কার্যফল জাবেদা থেকে রেওয়ামিল এবং আর্থিক বিবরণী তৈরি করা যায় না। অন্যদিকে, খতিয়ানের সাহায্যে রেওয়ামিল ও আর্থিক বিবরণী তৈরি করা যায়।