নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য

নৃবিজ্ঞান (Anthropology):

আক্ষরিক অর্থে নৃবিজ্ঞান (Anthropology) মানুষ বিষয়ক বিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো অতীত ও বর্তমানের মানব সমাজ ও মানব আচরণকে অধ্যয়ণ করা । কিন্তু মানুষ বিষয়ক অন্যান্য বিজ্ঞানগুলির চেয়ে এটির পরিধি ব্যাপকতর। বিশ্বের সকল অঞ্চলের, সংস্কৃতির মানুষকে নিয়ে এই বিজ্ঞানে গবেষণা করা হয়। লক্ষ কোটি বছর ধরে মানুষের বিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের গবেষণাও নৃবিজ্ঞানের আওতায় পড়ে।

নৃবিজ্ঞানে মানুষকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গবেষণা করা হয়। বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ ও তাদের সব রকমের অভিজ্ঞতা নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। নৃবিজ্ঞানীরা কোন একটি বিশেষ মানব সম্প্রদায়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে ও সেগুলি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা সামাজিক রীতিনীতি হতে পারে।

প্রত্নতত্ত্ব (Archeology):

প্রত্নতত্ত্ব গ্রীক শব্দ ” আরখাইলোজিয়া ” থেকে এসেছে। বাংলা প্রত্নতত্ত্ব শব্দটি ‘প্র+ত্ন= প্রত্ন’ অর্থ- পুরাতন ও ‘তৎ+ত্ব= তত্ত্ব’ অর্থ-বিজ্ঞান। সমষ্টিগত অর্থ হল, পুরাতন বিষয়ক জ্ঞান। প্রত্নতত্ত্ব নির্দিষ্ট সময়ের, পরিবেশ এবং ভৌগলিক অঞ্চলগুলি থেকে খনন ও আবিষ্কার করে অতীতে বসবাসকারী ব্যক্তিদের মূলত প্রাচীন সভ্যতাগুলির সমাজ ও জীবন অনুসন্ধান করে। প্রচলিত ধারণায়, বস্তুগত নিদর্শনের ভিত্তিতে অতীত পুনঃনির্মাণ করার বিজ্ঞানকেই প্রত্নতত্ত্ব বলে চিহ্নিত করা হয়।

অতীতের সংস্কৃতি ও পরিবেশগত নিয়ে চর্চা করে এমন অন্যান্য বিজ্ঞান বা বিষয়গুলোর (যেমন- ভূতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি) মধ্যে প্রত্নতত্ত্বের বিশেষত্ব হলো- এটি কেবল বস্তুগত নিদর্শন অর্থাৎ প্রামাণ্য তথ্য নিয়ে কাজ করে এবং তার সাথে মানুষের জীবনধারার সম্পর্ক নির্ণয় করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ভূমিরূপ ও অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য বিশ্লেষণ করে ইনামগাঁওয়ের কয়েকহাজার বছরের বৃষ্টিপাতের ধরনের একটি উপাত্ত হাজির করেছেন।

নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্যঃ

নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্বের মধ্যে অধ্যয়ন হয় যার মধ্যে নির্দিষ্ট পার্থক্য সনাক্ত করা যায়। নিম্নে নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো-

১। আক্ষরিক অর্থে নৃবিজ্ঞান (Anthropology) মানুষ বিষয়ক বিজ্ঞান। অন্যদিকে প্রত্নতত্ত্ব শব্দটি ‘প্র+ত্ন= প্রত্ন’ অর্থ- পুরাতন ও ‘তৎ+ত্ব= তত্ত্ব’ অর্থ-বিজ্ঞান। সমষ্টিগত অর্থ হল, পুরাতন বিষয়ক জ্ঞান।

২। নৃবিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো অতীত ও বর্তমানের মানব সমাজ ও মানব আচরণকে অধ্যয়ণ করা। অন্যদিকে প্রত্নতত্ত্ব নির্দিষ্ট সময়ের, পরিবেশ এবং ভৌগলিক অঞ্চলগুলি থেকে খনন ও আবিষ্কার করে অতীতে বসবাসকারী ব্যক্তিদের মূলত প্রাচীন সভ্যতাগুলির সমাজ ও জীবন অনুসন্ধান করে।

৩। নৃবিজ্ঞানের জন্য একটি একক প্রক্রিয়া সংজ্ঞায়িত করা কঠিন, কারণ এটি একটি বিস্তৃত অধ্যয়নের ক্ষেত্র। অন্যদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক তদন্তে কয়েকটি বাক্যাংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: রিমোট সেন্সিং, ফিল্ড জরিপ, খনন এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্লেষণ।

৪। নৃবিজ্ঞান হ’ল মানবতা অধ্যয়ন। অন্যদিকে প্রত্নতত্ত্ব হ’ল অতীত মানব সভ্যতার অধ্যয়ন।

৫। নৃবিজ্ঞানীরা কোন একটি বিশেষ মানব সম্প্রদায়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে ও সেগুলি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেন। অন্যদিকে ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ভূমিরূপ ও অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য বিশ্লেষণ করে।


পার্থক্য ফেসবুক পেজ
Humanitarian সংক্রান্ত আরো পার্থক্য পড়ুনঃ Humanitarian

আরোও পার্থক্য পড়ুনঃ রম্বস ও সামান্তরিকের মধ্যে পার্থক্যকার্ডিয়াক এবং কঙ্কাল পেশীর মধ্যে পার্থক্যসম্পাদ্য এবং উপপাদ্যের মধ্যে পার্থক্যতথ্য ও উপাত্তের মধ্যে পার্থক্যগণিত এবং ফলিত গণিতের মধ্যে পার্থক্যঅক্ষাংশ ও অক্ষরেখার মধ্যে পার্থক্যভর এবং ওজনের মধ্যে পার্থক্য