পরমাণু ও আয়নের মধ্যে পার্থক্য

পরমাণু (Atoms):

মৌলিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে মৌলটির সমস্ত ধর্ম উপস্থিত থাকে এবং যেটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাকে পরমাণু বলে। উদাহরণ : নাইট্রোজেন পরমাণু (N), লোহার পরমাণু (Fe) ইত্যাদি। অথাৎ রাসায়নিক মৌলের ক্ষুদ্রতম অংশ যার স্বাধীন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সরাসরি অংশ গ্রহণ করতে পারে সেসব আণুবীক্ষণিক কণিকাদিকে পরমাণু বলে ।

সমস্ত কঠিন, তরল, গ্যাস এবং আয়ন -এর গঠনের মূলে রয়েছে নিস্তরিত বা আধানগ্রস্ত পরমাণু । পরমাণুর আকার খুবই ক্ষুদ্র; সাধারনত এরা দৈর্ঘ্যে ১০০ পিকোমিটার (১ মিটারের ১০,০০০,০০০,০০০ ভাগ বা চুলের ১ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ)।

আয়ন (Ions):

আয়ন হলো পরমাণু বা অণু, যখন পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের মাধ্যমে ধনাত্মক বা ঋনাত্মক চার্জগ্রস্থ হয়, তখন সেই পরমাণুকে আয়ন বলে। আয়ন হলো নিট বৈদ্যুতিক আধানযুক্ত কণিকা, পরমাণু বা অনু। সাধারণত ইলেকট্রনের আধান ঋণাত্মক ধরা হয়। একক আয়নের ঋণাত্মক আধান সাধারণত প্রোটনের ধনাত্মক আধানের সমান ও বিপরীত। ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান না হওয়ার কারনে আয়নের নিট আধান অশূন্য হয়।

ক্যাটায়ন হলো ইলেকট্রনের চেয়ে প্রোটনের সংখ্যা বেশি থাকায় ধনাত্মক আধানযুক্ত আয়ন এবং অ্যানায়ন হলো প্রোটনের চেয়ে ইলেকট্রনের সংখ্যা বেশি থাকায় ঋণাত্মক আধানযুক্ত আয়ন। ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নসমূহ খুব সহজেই একে অপরকে আকর্ষণ করে এবং আয়নিক যৌগ গঠন করে।

আয়নে কেবল একটি মাত্র পরমাণু থাকলে তাকে একপরমাণবিক আয়ন এবং দুই বা ততোধিক পরমাণু থাকলে বহুপারমাণবিক আয়ন বলে। প্রবাহীতে ভৌত আয়নীকরণের ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ত সংঘর্ষের কারণে “আয়ন যুগল” উৎপন্ন হয়, যেখানে প্রতি যুগলে একটি ইলেকট্রন এবং একটি ধনাত্মক আয়ন থাকে।

আয়নের রাসায়নিক সংকেত লেখার সময় তার নিট আধান অণু/পরমাণুর রাসায়নিক কাঠামোর পরপরই সুপারসক্রিপ্টে লেখা হয়। আধানের পূর্বে এর মান লেখা হয়; অর্থাৎ, দ্বিধনাত্মক ক্যাটায়নকে +2 এর পরিবর্তে 2+ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তবে একক আধানবিশিষ্ট অণু/পরমাণুর ক্ষেত্রে আধানের মান বাদ লেখা হয় না; উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়াম ক্যাটায়নকে Na1+ এর পরিবর্তে Na+ লেখা হয়।

পরমাণু ও আয়নের মধ্যে পার্থক্যঃ

একটি ইলেকট্রনের যুক্ত হওয়া বা বর্ধিত হওয়া আয়ন পরমাণুর রাসায়নিক ধর্মের কিছু পরিবর্তন ঘটায়। অর্থাৎ পরমাণু ও আয়নের মধ্যে পার্থক্য তৈরী হয়। নিচে পরমাণু ও আয়নের মধ্যে পার্থক্য

১। মৌলিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে মৌলটির সমস্ত ধর্ম উপস্থিত থাকে এবং যেটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাকে পরমাণু বলে। অন্যদিকে আয়ন হলো পরমাণু বা অণু, যখন পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জনের মাধ্যমে ধনাত্মক বা ঋনাত্মক চার্জগ্রস্থ হয়, তখন সেই পরমাণুকে আয়ন বলে।

২। পরমাণু হচ্ছে মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা, যার কোন স্বাধীন অস্তিত্ব নেই। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্ষুদ্রতম একক হিসাবে অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে আয়ন হচ্ছে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জিত পরমাণু বা যৌগমূলক।

৩। পরমাণু আধান নিরপেক্ষ হয়। অন্যদিকে আয়ন ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জিত হয়।

৪। পরমাণুর যোজনী শূন্য হতে পারে। যেমনঃ নিয়নের যোজনী শূন্য হয়। অন্যদিকে আয়নের যোজনী শূন্য হয় না।

৫। পরমাণুসমূহ আয়নিক ও সমযোজী বন্ধন গঠন করতে পারে। অন্যদিকে আয়নসমূহ শুধু আয়নিক বন্ধন গঠন করে।

৬। পরমাণুর ক্ষেত্রে কোন জারণ সংখ্যা থাকেনা। অর্থাৎ শূণ্য হয়। অন্যদিকে আয়নসমূহের নির্দিষ্ট জারণ সংখ্যা বিদ্যমান থাকে। যা শূণ্য নয়।

৭। সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরিন, অক্সিজেন প্রভৃতি মৌলের পরমাণুকে যথাক্রমে Na, Ca, Cl, O, চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে সোডিয়াম ক্যালসিয়াম ক্লোরিন অক্সিজেন প্রভৃতি মৌলের আয়নকে বোঝাতে যথাক্রমে Na+, Ca+, Cl-,O-2 চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।


রাসায়ন সংক্রান্ত আরো পার্থক্য পড়ুনঃ Chemistry

আরোও পার্থক্য পড়ুনঃ যোগান রেখা ও সূচির মধ্যে পার্থক্যস্বাধীন চলক ও অধীন চলকের মধ্যে পার্থক্যএকমাত্রিক ও দ্বিঘাত অপেক্ষকের মধ্যে পার্থক্যমুদ্রাস্ফীতি এবং অপসারণের মধ্যে পার্থক্য, কৌণিক বেগ ও রৈখিক বেগের মধ্যে পার্থক্য, শহর ও নগরের মধ্যে পার্থক্য, ওয়েবসাইট ও ব্লগের মধ্যে পার্থক্য, হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের মধ্যে পার্থক্য, বিরিয়ানি ও তেহারির মধ্যে পার্থক্য, সিরিজ সার্কিট এবং প্যারালাল সার্কিটের পার্থক্য, সংরক্ষণশীল বল ও অসংরক্ষনশীল বলের মধ্যে পার্থক্য, IT এবং IT’S -এর মধ্যে পার্থক্য