প্রচলিত প্রজনন ও কৌলিগত প্রকৌশলের মধ্যে পার্থক্য

প্রচলিত প্রজনন (Conventional Breeding) :
প্রকৃতিতে বিভিন্ন জীবের বংশ বিস্তার এবং বিবর্তনে প্রাকৃতিক প্রজনন পদ্ধতি নিরন্তরভাবে কার্যকর রয়েছে। মানুষ তার জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে প্রায় ১০ হাজার বছর পূর্ব থেকে কোনো একটি কাংখিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ফসল বা জীব তৈরীর লক্ষ্যে বাছাইকত সম্পর্কযুক্ত জীবসমূহের মধ্যে প্রজনন ঘটাচ্ছে। প্রচলিত প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম কাংখিত বৈশিষ্ট্য অর্জন বা প্রকাশ করবে কি না তা সম্ভাব্যতার উপর নির্ভরশীল। গতানুগতিক পদ্ধতিতে একটি ফসল থেকে কোনো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অন্য একটি ফসলে স্থানান্তর করার সময় শুধু ঐ কাংখিত বৈশিষ্ট্যই স্থানান্তরিত হয় তা নয়।

বরং ঐ বৈশিষ্ট্য বহনকারী ফসলের অর্ধেক জিন পরবর্তী ফসলে (F1 Generation) স্থানান্তরিত হয়। এতে করে পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত ঐ অনাকাংখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ দূর করার জন্য দীর্ঘ এবং কষ্টসাধ্য পিছ-ুসংকরায়ন ((backcrossing) প্রক্রিয়ায় কাংখিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ফসল (F2 Generation)পাওয়া যায়। পিছু-সংকরায়ন প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি প্রজন্ম অতিক্রান্ত হওয়ার পর কাংখিত বৈশিষ্ট্যটির কখনও বা দেখা মিলে কখনও মিলে না।

কৌলিগত প্রকৌশল (Genetic Engineering) :
আধুনিক জীবপ্রযুক্তি বা কৌলিগত প্রকৌশলের মাধ্যমে জিন স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় কাংখিত বৈশিষ্ট্য অল্প সময়ে সূচারুভাবে স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট উদ্ভাবক বা উদ্যোক্তাগণের নিকট প্রচলিত প্রজননের তুলনায় এ প্রযুিক্তটি অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে জন্মানো খাদ্য-শস্যের সাথে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য গ্রহণগত অভ্যস্ততা ও পরিচিতি থাকায় জীবনিরাপত্তা বিষয়টি বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। অপরপক্ষে কৌলিগত প্রকৌশলের মাধ্যমে উদ্ভাবিত ফসল বা খাদ্যের সাথে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য গ্রহণগত অভ্যস্ততা থাকে না। আবার এগুলোর নতুন বৈশিষ্ট্য প্রকৃতি তথা জীবজগতে বা মানবস্বাস্থ্যে কী পরিবর্তন, প্রভাব বা ঝুঁকি তৈরী করছে – এ সম্ভবনাকে ঘিরে পৃিথবীর সর্বত্র জীবনিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণপদ্ধতি প্রয়াগ করা হয়েছে।

কৌলিগত প্রকৌশলের মাধ্যমে উদ্ভাবিত জিএমও-তে স্বীয় জিন ছাড়াও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সম্পর্কবিহীন উদ্ভাবিত অথবা প্রাণী থেকে আহরিত জিন প্রবিষ্ট হয়ে পড়ছে। অপরদিকে, সম্পর্কযুক্ত জীবসমূহের বাইরে প্রচলিত প্রজনন সাধারণত ঘটে না বলে এ ক্ষেত্রে যে জেনিটিক কম্বিনেশনই তৈরী হোক না কেনো-তা নিয়ে মানুষের মধ্যে জীবনিরাপত্তা উদ্বিগ্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

প্রচলিত প্রজনন ও কৌলিগত প্রকৌশলের মধ্যে পার্থক্যঃ
প্রচলিত প্রজনন এবং কৌলিগত প্রকৌশল উভয়ই জীবের বৈশিষ্ট্যগুলিকে উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যাইহোক, তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। তা নিম্নরূপ-

১. প্রচলিত প্রজনন হল জীবের বৈশিষ্ট্যগুলিকে উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। এটি জীবের মধ্যে ইতিমধ্যে বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলিকে উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, কৌলিগত প্রকৌশল হল জীবের বৈশিষ্ট্যগুলিকে উন্নত করার জন্য আণবিক জীববিজ্ঞান এবং জিনগত প্রকৌশলের ব্যবহার। এটি জীবের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য প্রবর্তন করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

২, প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতিতে, চাষীরা সেই বীজগুলি বেছে নেয় যা তাদের চাওয়া বৈশিষ্ট্যগুলি দেখায়। অন্যদিকে, কৌলিগত প্রকৌশল পদ্ধতিতে, একটি জীবের জিনোমে একটি নির্দিষ্ট জিন পরিবর্তন করা হয়। এটি একটি নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে বা একটি বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারে।

৩. প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতিতে, দুটি ভিন্ন প্রজাতির বা জাতকে একত্রিত করা হয়। এটি নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, কৌলিগত প্রকৌশল নিকটবর্তী অথবা দূরবর্তী যেকোন পজ্র াতির মাঝে এক বা একাধিক জিন সরাসরি স্থানান্তর করা সম্ভব।

৪. প্রচলিত প্রজনন পদ্ধতিতে, চাষীরা একই বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে অনেকগুলি উদ্ভিদ বা প্রাণী একত্রিত করে। এটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, কৌলিগত প্রকৌশল পদ্ধতিতে, একটি জীবের জিনোমে একটি নতুন জিন প্রবর্তন করা হয়। এটি একটি নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে বা একটি বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারে।

৫. প্রচলিত প্রজনন সাধারণত ধীর এবং কম নির্ভরযোগ্য, তবে এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। অন্যদিকে, কৌলিগত প্রকৌশল দ্রুত এবং আরও নির্ভরযোগ্য, তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।