রাইবোজোম ও লাইসোজোম এর পার্থক্য

রাইবোজোম:

প্রোক্যারিওটিক কোষের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবে এবং ইউক্যারিওটিক কোষের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার নিউক্লিয় পর্দার বহিঃগাত্রে সুসজ্জিত ভাবে একপ্রকার অতি আণুবীক্ষণিক দানাদার কোষ অঙ্গাণু দেখা যায়। এদের বলা হয় রাইবোজোম। জীব কোষে অবস্থিত রাইবোনিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলিকে রাইবোজোম বলে। এতে প্রধানত Mg আয়ন থাকে।

রাইবোজোম প্রধানত প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। প্রোটিনের পলিপেপটাইড চেইন সংযোজন এই রাইবোজোমে হয়ে থাকে। এছাড়া রাইবোজোম এ কাজে প্রয়োজনীয় উৎসেচক সরবরাহ করে। এই উৎসেচক বা এনজাইমের কাজ হলো প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেওয়া।রাইবোজোমকে কোষের প্রোটিন তৈরির কারখানা বলা হয়ে থাকে ।একে সার্বজনীন অঙ্গানুও বলা হয়ে থাকে ।

লাইসোজোম:

লাইসোজোম (Lysosome) এক ধরনের কোষীয় অঙ্গাণু যা সাধারণত প্রাণী কোষে পাওয়া যায়। কোষের সাইটোপ্লাজমে বিদ্যমান পর্দা দ্বারা আবৃত অতিক্ষুদ্র, গোলাকার, এবং কোষীয় পরিপাকে অংশগ্রহণকারী অঙ্গানুসমূহ lyso=হজমকারী এবং somo=বস্তু। এই বিচারে এর অর্থ দাঁড়ায় হজমকারী-বস্তু। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য দুভে (de Duve) এর নামকরণ করেন। এই অঙ্গাণু পাওয়া প্রাণীদেহে। বিশেষ করে ক্ষরণকারী কোষ ও শ্বেত-কণিকায় বেশি পাওয়া যায়। প্লাজমাপর্দা অথবা গোল্‌গি বস্তু থেকে এর উৎপত্তি। এর মধ্যে নানা ধরণের পাচনকারী এনজাইম পূর্ণ তরল থাকে।

পিনোসাইটোসিস ও ফ্যাগাসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষে প্রবেশ করে এমন জীবাণু বা খাদ্য উপাদানকে আত্মীকরণ করে বিভিন্ন এনজাইমের সাহায্যে বিগলিত করে এবং কোষকে জীবাণুমুক্ত করে। এক্ষেত্রে লাইসোজোম কোষের পাকস্থলী হিসেবে কাজ করে থাকে। অনেক সময় কোষের খাদ্যাভাব দেখা দিলে, কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হলে, লাইবোজোমের প্রাচীর ফেটে যায় এবং আবদ্ধকৃত এনজাইম বের হয়ে কোষের অন্যান্য ক্ষুদ্রাঙ্গকে বিনষ্ট করে দেয়। একে বলা হয় অটোফ্যাগি (auto-phagy)।

রাইবোজোম ও লাইসোজোম এর পার্থক্যঃ

রাইবোজোম প্রধানত প্রোটিন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। প্রোটিনের পলিপেপটাইড চেইন সংযোজন এই রাইবোজোমে হয়ে থাকে রাইবোজোম ও লাইসোজোম এর পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। রাইবোজোম কোন আবরণী দিয়ে আবৃত নয়। অন্যদিকে লাইসোজোম আবরণী দিয়ে আবৃত থাকে।

২। রাইবোজোম RNA ও হিস্টোন (প্রোটিন) দিয়ে গঠিত। অন্যদিকে লাইসোজোম এ বহু এনজাইম আছে।

৩। রাইবোজোম বিভিন্ন কোষ অঙ্গাণুর গায়ে লাগানো বা সাইটোপ্লাজমে বিচ্ছিন্নভাবে থাকে। অন্যদিকে লাইসোজোম কোষের সাইটোপ্লাজমে সর্বত্র প্রায় সমপরিমাণে বণ্টিত থাকে।

৪। রাইবোজোম দুটি অসমান খন্ডে বিভক্ত। অন্যদিকে লাইসোজোম অখন্ডিত।

৫। রাইবোজোম প্রোটিন সংশ্লেষের স্থান হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে লাইসোজোম অন্তঃকোষীয় পরিপাকে সাহায্য করে।