সাদা পাট ও তোষা পাটের মধ্যে পার্থক্য

সাদা পাট:

কর্চোরাস ক্যাপসুলারিস সাধারণত সাদা পাট হিসাবে পরিচিত। এটি মালভেসি পরিবারের একটি গুল্ম প্রজাতি। এটি পাটের আঁশের অন্যতম উৎস, যা পাটের প্রধান উৎস কর্চোরাস অলিটোরিয়াস থেকে প্রাপ্ত আঁশের চেয়ে সূক্ষ্ম মানের হিসাবে বিবেচিত হয়। এর পাতা খাদ্যসামগ্রী হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং পাতা, কাঁচা ফল এবং শিকড় ঐতিহ্যবাহী ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সাদা পাট খাড়া, বার্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, এর ছুঁচোলো পাতা, হলুদ রঙের পাঁচ-পাপড়ী যুক্ত ফুল হয় এবং এর উচ্চতা দুই মিটার বা তার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এর গুটিকাসদৃশ ফল রয়েছে।[৩] এর উৎপত্তিস্থল সম্ভবত চীনে তবে এটি এখন বাংলাদেশ এবং ভারতে প্রচুর পরিমানে জন্মে।

সাদা পাট থেকে প্রাপ্ত আঁশ সাদা এবং তোষা পাটের তুলনায় উচ্চ মানের। পাট গাছ কাটার পর এটি পানিতে জাগ দেত্তয়া হয় এর পর তন্তু নরম হলে আঁশ ছাড়ানো হয় এবং এরপর এটি শুকানো হয়। এটি বস্তা, ব্যাগ, কার্পেট, পর্দা, কাপড় এবং কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।[৪] তোষা পাট এবং সাদা পাট হল পাটের প্রধান উৎস। তাছাড়াও কচি পাট গাছের পাতা এবং অঙ্কুর সালাদে ব্যাপকভাবে খাওয়া হয় এবং বড় হওয়ার পর শাক হিসাবে রান্না করে খাওয়া হয়। পাতা শুকনো এবং গুঁড়ো করে সুরুয়াতে ঘন করতে বা চা হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

তোষা পাট:

উদ্ভিদ বিদ্যায় তোষা পাটকে বলা হয় Corchorus olitorius । তোষা অন্যান্য সবগুলো জাত অপেক্ষা উন্নতমানের পাট। এর তন্তু সুক্ষ্ম ও মসৃণ, যথেষ্ট শক্তিসম্পন্ন,পরিষ্কার ও চকচকে এবং লম্বা । গোড়ায় কাটিং কম থকে। রং সোনালী, সোনালীলাল, বাদামী, তামাটে ধূসর হয়ে থাকে। আঁশের মধ্যে জালের পরিমান বেশী থাকে। বাংলাদেশে তোষা পাটই বেশী চাষ হয়

সাদা পাট ও তোষা পাটের মধ্যে পার্থক্য:

কর্চোরাস ক্যাপসুলারিস সাধারণত সাদা পাট হিসাবে পরিচিত। এটি মালভেসি পরিবারের একটি গুল্ম প্রজাতি। সাদা পাট ও তোষা পাটের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। সাদা পাট গাছ ১.৫ থেকে ৩.৬ মিটার লম্বা হয়। বৃদ্ধির পরবর্তী ধাপে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। বীরুৎ জাতীয় একবর্ষজীবী, বপন কালের ওপর ভিত্তি করে মাঠে ৪-৫ মাস থাকে। অন্যদিকে তোষা পাট গাছ ১.৫ থেকে ৪.৫ মিটার লম্বা হয়। সাধারণভাবে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বীরুৎ জাতীয় একবর্ষজীবী, বপন কালের ওপর ভিত্তি করে ৪-৫ মাস মাঠে থাকে। আগাম বপন করলে অপরিনত বয়সে ফুল আসে

২। সাদা পাটের কান্ড নলাকার গাঢ় সবুজ থেকে গাঢ় লালের মাঝামাঝি বিভিন্ন মাত্রার রং বিশিষ্ট হয়। পরিপক্কতার বিভিন্ন পর্যায়ে কান্ডের গোড়ায় পেরিডার্মের বৃদ্ধি বিভিন্ন রকম হয়। কান্ড গোড়ার দিকে মোটা উপরের দিকে ক্রমশঃ সরু। অন্যদিকে তোষা পাটের কান্ড নলাকার, কান্ডের বর্ণ সবুজ অথবা হালকা লাল থেকে গাঢ় লাল, বর্ণের শেডগুলো Capsularis অপেক্ষা কম; পেরিডার্ম অনুপস্থিত বা সুগঠিত নয়। পরবর্তি পর্যায়ে লেন্টিসেল দেখা যায়। কান্ডের গোড়া দেশী পাটের ন্যায় ততটা মোটা নয়।

৩। সাদা পাটের পাতা তুলনাম লকভাবে ছোট, হালকা সবুজ বর্ণের, স্বাদে তিক্ত। অন্যদিকে তোষা পাটের পাতা তুলনাম লকভাবে বড়, বর্ণ গাঢ় সবুজ এবং স্বাদে তিক্ত নয়।

৪। সাদা পাটের ফুল ছোট, বৃতি হলুদ অথবা ফ্যাকাশে হলুদ, ডিম্বাশয় হলুদ অথবা ফ্যাকাশে হলুদ এবং গোলাকার। অন্যদিকে তোষা পাটের ফুল তুলনামুলকভাবে বড়, বৃতি সবুজ, পাপড়ি হলুদ, ডিম্বাশয় লম্বাটে।

৫। সাদা পাটের ফল গোলাকার, প্রতি দুই সারিতে ৮ থেকে ১০ টি করে বীজ থাকে। অন্যদিকে তোষা পাটের ফল লম্বাটে, প্রতি সারিতে ২৫ থেকে ৪০ টি বীজ থাকে।

৬। সাদা পাটের বীজ ছোট, চকলেট বাদামী বর্ণের, ৩০০ টি বীজের ওজন প্রায় ১ গ্রাম। অন্যদিকে তোষা পাটের বীজ তুলনামুলকভাবে বীজ ছোট, নীলাভ সবুজ থেকে ধূসর বর্ণ, তবে কখনো কখনো কাল বর্ণের হয়ে থাকে। ৫০০ টি বীজের ওজন ১ গ্রাম।