প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্য

প্রকৃতিঃ
ক্রিয়াপদের মূল ও শব্দ উভয়কেই প্রকৃতি বলে। অর্থাৎ যে শব্দকে বা কোনো শব্দের যে অংশকে আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে। প্রকৃতি দুই প্রকার। যথাঃ–
i. নামপ্রকৃতি ও
ii. ক্রিয়াপ্রকৃতি।

i. নামপ্রকৃতি : নামপদের মূল অংশকে বলে নামপ্রকৃতি। ‘ছেলেরা’ (ছেলে + রা) শব্দের মূল অংশ ‘ছেলে’ একটি নাম। তাই একে নামপ্রকৃতি বলা যায়। আর ‘রা’ হলো বিভক্তি। মুখ+র=মুখর (বাচাল)। হাত, ফুল ও মুখ ইত্যাদি শব্দকে বলা হয় প্রকৃতি বা মূল অংশ। এগুলোর নাম প্রকৃতি।

ii. ক্রিয়াপ্রকৃতি : ক্রিয়াপদের মূল অংশকে বলে ক্রিয়াপ্রকৃতি। ‘করা’ (কর + আ) শব্দের মূল অংশ ‘কর’ হলো ক্রিয়াপ্রকৃতি আর ‘আ’ হলো বিভক্তি। লিখ্+ইত= লিখিত (যা লেখা হয়েছে) । এখানে চল্ , জম্ ও লিখ্ তিনটি ক্রিয়ামূল বা ক্রিয়ার মূল অংশ । এদের বলা হয় ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু।

প্রত্যয়ঃ
শব্দ গঠনের উদ্দেশ্যে শব্দ বা নাম প্রকৃতির এবং ক্রিয়া প্রকৃতির পরে যে শব্দাংশ যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয় বলে। অর্থাৎ যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি ধাতু বা শব্দের উত্তর (পরে) যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন— চল + আ = চলা, দেশ + ই = দেশি। এখানে চল ধাতুর সাথে আ বর্ণ যুক্ত হয়ে ‘চলা’ শব্দ গঠিত হয়েছে এবং দেশ শব্দের সাথে ‘ই’ বর্ণ যুক্ত হয়ে ‘দেশি’ শব্দ গঠিত হয়েছে। এখানে ‘আ’ এবং ‘ই’ হচ্ছে প্রত্যয়।

প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্যঃ

প্রকৃতি ও প্রত্যয় দুটির সম্পর্ক থাকলেও, এক জিনিস নয়। এদের মধ্যে পার্থক্য বিরাজমান। প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১. ক্রিয়াপদের মূল ও শব্দ উভয়কেই প্রকৃতি বলে। অর্থাৎ যে শব্দকে বা কোনো শব্দের যে অংশকে আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে। অন্যদিকে, শব্দ গঠনের উদ্দেশ্যে শব্দ বা নাম প্রকৃতির এবং ক্রিয়া প্রকৃতির পরে যে শব্দাংশ যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয় বলে।

২. প্রত্যয় সাধিত শব্দ থেকে প্রত্যয় বাদ দিলে যে অংশটুকু থাকে, তারই নাম প্রকৃতি। যেমন– ধন + ঈ = ধনী। এখানে ‘ধন’ হল প্রকৃতি। অন্যদিকে, শব্দ বা ধাতুর শেষে যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় তার নামই প্রত্যয়। যেমন – সাপ + উড়ে = সাপুড়ে। এখানে ‘উড়ে’ হচ্ছে প্রত্যয়।

৩. প্রকৃতি হল মূল বা ধাতু। অন্যদিকে, প্রত্যয় হল নতুন শব্দ গঠন করার একটা সহজ উপাদান। প্রকৃতির সাথে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করাই প্রত্যয়ের লক্ষ্য।

৪. প্রকৃতির নিজস্ব অর্থ আছে। অন্যদিকে, প্রত্যয় অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি মাত্র। এদের নিজস্ব কোন অর্থ নেই।

৫. প্রকৃতি দুই প্রকার। যথাঃ– নামপ্রকৃতি ও ক্রিয়াপ্রকৃতি। অন্যদিকে, ধাতু ও শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যয়কে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: কৃৎপ্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়।